দরিদ্র মানুষের অধিকার নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করুন মমতা দিদি। আপনি অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে রাজনীতি করতে পারেন, তবে ‘স্বাস্থ্য‘ নিয়ে মোটেও নয়। মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গ জনসম্পর্ক জনসভা‘-য় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করে এমনই মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, বাংলার দরিদ্র জনগণের কি নিখরচায় ও উন্নতমানের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নেই? তাহলে কেন আপনি এখানে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অনুমতি দেবেন না। এছাড়াও বঙ্গ রাজনীতিতে হিংসা, শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন-সহ অন্যান্য ইস্যুতে মমতাকে খোঁচা দিয়েছেন অমিত শাহ।
মঙ্গলবার বেলা এগারোটায় ভার্চুয়াল জনসভায় বক্তব্য রাখার শুরুতেই কোভিড-১৯ (Covid-19) এবং আমফান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ে শতাধিক বিজেপি কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। সোনার বাংলার উন্নয়নে তাঁরা যে অবদান রেখেছেন আমি তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২০১৪ সাল থেকে সোনার বাংলা গড়তে শতাধিক বিজেপি কর্মীরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তীব্র আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, বঙ্গই একমাত্র যেখানে সাম্প্রদায়িক হিংসা এখনও চলছে, এটা বন্ধ করা উচিত। আমি আশ্বস্ত করছি যে বিজেপি এখানে শুধুমাত্র একটি বিপ্লব বা রাজনীতি করার জন্য নয়, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যবাহী বাংলা গড়ার সংকল্প নিয়েছে। আমরা আবার সোনার বাংলা তৈরি করতে চাই। আমি বাংলার জনগণকে বলতে চাই যে, বিজেপি সারা দেশ থেকে ৩০৩ টি আসন পেয়েছে। তবে আমার মতো একজন কর্মীর পক্ষে বাংলার ১৮ টি আসন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার ভূয়সী প্রসংশা করে অমিত শাহ বলেছেন, ‘জনসংযোগের ইতিহাস যখন লেখা হবে, তখন নাড্ডা জির নেতৃত্বে বিজেপি দ্বারা এই ভার্চুয়াল সমাবেশগুলিকে একটি বিশেষ অধ্যায় হিসাবে লেখা হবে। মোদী সরকারের ছয় বছর ভারতকে প্রতিটি পদক্ষেপে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এটি সারা দেশে সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হয়েছে। ছয় বছরে, আমরা নতুন ভারত তৈরিতে এগিয়ে গিয়েছি। মোদী জি ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ও ২০১৮ সালে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন এবং মোদী সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এই ৬ বছর প্রতিটি উপায়ে ভারতে অগ্রগতির ৬ বছর হয়েছে। এই ৬ বছর হয়েছে ভারতের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, বাংলার দরিদ্র জনগণের কি নিখরচায় ও উন্নতমানের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নেই? তাহলে কেন আপনি এখানে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অনুমতি দেবেন না। মমতা দিদি, দরিদ্র মানুষের অধিকার নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করুন। আপনি অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে রাজনীতি করতে পারেন, তবে ‘স্বাস্থ্য’ নয়। আমাদের দলের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে, আমাদের দলের প্রথম সভাপতি ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী (Dr. Shyamaprasad Mukherjee) পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছিলেন এবং দেশের একতার জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। অমিত শাহ আরও বলেন, অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করা হয়েছে এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে মূলধারায় যুক্ত করা হয়েছে। মমতা দিদি আপনি আমাদের হিসাব চান, আমি তো হিসাব নিয়ে এসেছি। কিন্তু আপনিও কাল সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের সরকারের হিসাব দিন। অমিত শাহ ভার্চুয়াল জনসভায় বলেন, তিনি সিএএ-এর বিরোধিতা কেন করছেন তা ওনার পরিষ্কার হওয়া দরকার। নমশুদ্র এবং অন্যান্য অন্যান্য সম্প্রদায় যদি দেশে শ্রদ্ধার সঙ্গে বসবাস করে তবে আপনার সমস্যা কী? বাংলার মানুষও আপনাকে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করছে। আপনাকে উত্তর দিতে হবে। আমি আবার মমতা দিদিকে অনুরোধ করছি – আপনি যদি আমাদের কৃষকদের তালিকা পাঠান, তবে আমরা তাদের ৬,০০০ টাকা পাঠাবো। কেন আপনি আপনার কৃষকদের সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পেতে বাধা দিচ্ছেন?
অমিত শাহ বলেন, বাংলায় প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকার পিডিএসের মাধ্যমে ৩.৮৪ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়েছে। এটি আমরা রাজ্য সরকারকে যে সহায়তা দিয়েছি তারও ওপরে। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেছেন, উত্তর প্রদেশ ১৭০০ ট্রেন পেয়েছে, বিহার ১৫০০, কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম বাংলার জন্য ট্রেনের নামকরণ মমতা দিদি যখন ‘করোনা এক্সপ্রেস’ রাখলেন। আমরা এর নাম রেখেছিলাম ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন। আপনার দেওয়া ‘করোনা এক্সপ্রেস’ নামটি, মমতা দিদি আপনার প্রস্থান পথে পরিণত হবে। আপনি অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষতস্থানে নুন ছেটানোর কাজ করেছেন এবং তারা এটি ভুলে যাবেন না।