সব কিছু ঠিক থাকলে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীই হতে চলেছেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা। শনিবারই এই ব্যাপারে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বৈঠক করেছে। দলীয় সূত্রের খবর, সেই আলোচনা মতো এগিয়ে রয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীই। বিধানসভায় থাকার পুরনো অভিজ্ঞতা এবং নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে ‘জায়েন্ট কিলার’ হওয়ায় তাঁকেই বিরোধী দলনেতার মর্যাদা দিতে আগ্রহী বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠরাও তেমনটাই চাইছেন বলে সূত্রের খবর।
শুভেন্দুর পাশাপাশি কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে বিজেপি নেতাদের একাংশের বক্তব্য, মুকুল দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন। তাঁকে সাংগঠনিক কাজও দেখতে হবে। তা ছাড়া এই প্রথমবার বিধায়ক হলেন মুকুল। তুলনায় অভিজ্ঞ শুভেন্দু। তবে মুকুল ঘনিষ্ঠরা অন্য কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, বিরোধী দলনেতা হওয়ার লড়াইয়েই নেই মুকুল। তিনি নিজেই অনিচ্ছার কথা দলকে জানিয়ে দিয়েছেন। এক মুকুল ঘনিষ্ঠের বক্তব্য, ‘‘বিরোধী দলনেতা কে হবেন জানি না। তবে যদি কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে জিজ্ঞেস করেন তবে বলব, দাদা স্বেচ্ছায় পিছিয়ে।’’ তবে মুকুলকে নিয়ে আপাতত স্বস্তিতে বিজেপি। তিনি তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন বলে জল্পনায় শনিবারই জল ঢেলে দিয়েছেন মুকুল।
বিরোধী দলনেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিজেপি-র একাংশ মুকুল ও শুভেন্দু ছাড়া তৃতীয় কারও কথা ভাবার বিষয়ে দাবি তুলেছিলেন। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ কোনও বিধায়ককে করা যায় কিনা সে দাবিও উঠেছিল। কিন্তু এ বার যাঁরা জিতেছেন তাঁদের মধ্যে তেমন অভিজ্ঞ কোনও নাম নেই। ২০১৬ সালের পরে এ বারেও জিতেছেন শুধু মাদারিহাটের মনোজ টিগ্গা। এ ছাড়া ২০১৯ সালে হওয়া উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক ছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের আশিস বিশ্বাস, হবিবপুরের জুয়েল মুর্মু, ভাটপাড়ার পবন সিংহ, দার্জিলিংয়ের নিরোজ তামাং জিম্বো। এঁদের মধ্যে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ আশিসের নাম কোনও কোনও মহলে শোনা গেলেও তা আলোচনায় আসেনি বলেই জানা গিয়েছে।
রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা কে হবেন সেই ঘোষণা হয়ে যেতে পারে সোমবারই। বিরোধী দলনেতা বাছতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং দলের অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদবকে দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, সোমবার পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে দলের ৭৭ জন বিধায়ককে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। তবে তার আগে দিল্লিতে শনিবার বিরোধী দলনেতা বাছতে বৈঠক হয়। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার বাড়িতে সেই বৈঠকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ছাড়াও হাজির ছিলেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। ফল ঘোষণার পরে নিজের রাজ্য মধ্যপ্রদেশে ফিরে গেলেও শনিবারের বৈঠকে ছিলেন রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে বিরোধী দলনেতা বাছাই নিয়ে আলোচনা ছাড়াও বাংলায় দলের পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে তা নিয়েও কথা হয়। দল ৩ থেকে ৭৭-এ পৌঁছেছে বলে বিজেপি নেতারা দাবি করলেও ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা গেরুয়া শিবিরের কার্যত ভরাডুবি হয়েছে বাংলায়। রাজ্য জুড়ে কর্মী, সমর্থকদের উপরে আক্রমণ চলছে বলে অভিযোগ তুললেও করোনা পরিস্থিতিতে কোনও রকম আন্দোলনের পথে হাঁটতে পারছে না বিজেপি। পরাজিত প্রার্থী থেকে নেতা, কেউই পাশে নেই বলে অভিযোগ করছেন কর্মীরাও। এরই মধ্যে দলে নতুন করে প্রকট হয়ে উঠেছে আদি ও নব্য বিবাদ। এমন পরিস্থিতিতে দল কী করবে সে ব্যাপারেও শনিবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।