আনন্দবাজার ডিজিটাল: আপনি একবার বলেছিলেন, দিদি একজন সফল জননেত্রী। কিন্তু ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী। কেন ওঁকে আপনার ব্যর্থ বলে মনে হয়?
অমিত শাহ: উনি তো সমস্ত ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন! আইনশৃঙ্খলার কথাই ধরুন। বাংলার আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি মমতাজির সময়ে হয়েছে, তা বোধহয় আর কোথাও হয়নি। আমি এটা টেপ রেকর্ডারের সামনেও বলতে পারি যে, কমিউনিস্টদের আমলে অন্তত গুন্ডারা এতটা বাড়াবাড়ি করত না! তারা এতটা মাথায় চড়ে বসেনি। কোথাও তাদের উপর একটা নিয়ন্ত্রণ ছিল। হতে পারে সেটা ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণ। সেটাও সংবিধান-বহির্ভূত। কিন্তু ছিল। এই আমলে তো গুন্ডারা চালকের আসনে বসে পড়েছে! অনুপ্রবেশ রুখতেও উনি ব্যর্থ। সমস্ত ঘরে পানীয় জল পৌঁছতে ব্যর্থ। মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এখন তো আবার ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোয় পরিসংখ্যান পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছেন! কারণ, সেই পরিসংখ্যান লজ্জাজনক। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাংলার একটা বড় ঐতিহ্য ছিল আধ্যাত্মিক চেতনা। তার জন্য কোনও কাজ করা হয়নি।AdvertisementAdvertisement
বাংলার মানুষ এখন পুলিশকে আর ভয় পায় না। উল্টে খোলা রাস্তায় পুলিশকে তাড়া করে!
পুলিশকে সকলের ভয় পাওয়া উচিতও নয়। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকলে এটাই হবে। পুলিশ নিজের কাজ স্বাধীন ভাবে করলে খারাপ লোক তাদের ভয় পাবে আর ভাল লোকেরা পুলিশের সুরক্ষা উপভোগ করবে। কিন্তু বাংলায় এখন সেটা নেই। আমি একটা কথা বলছি। সেটা শুনে আপনার ভাল লাগবে না। অনেক বাঙালিরই ভাল লাগবে না। কিন্তু আমি মনে করি এই দেশের একজন নেতা হিসেবে এটা বলা আমার দায়িত্ব। অনুপ্রবেশ এখন উত্তরবঙ্গের সমস্যা। কিন্তু যদি এ ভাবে চলে, ১০ বছর পর অনুপ্রবেশ কলকাতারও সমস্যা হবে। আমার এই কথাটা মনে রাখবেন। কোনও দেশ কি এ ভাবে চলতে পারে! কত পশুধন (গরু) পাচার হয়ে চলে গিয়েছে! গরিব মানুষ কী করবে! অর্থনীতি বিগড়ে গিয়েছে। বাস্তুতন্ত্র বিগড়ে গিয়েছে। সেচের জমি কত বাড়িয়েছেন মমতাদিদি? আমাকে একবার জবাব দিন! আমি এখন হেলিকপ্টারে করে গোটা বাংলা ঘুরছি। দেখতে পাচ্ছি, ২০ শতাংশের বেশি ক্ষেতে কোনও সবুজ নেই। গুজরাতে প্রায় সর্বত্র তিনটে করে ফসল হয়। আর এখানে জলের কোনও অভাব নেই। তা হলে কেন উন্নতি হচ্ছে না! গঙ্গা হিমালয় থেকে, গঙ্গোত্রী থেকে সমস্ত সার এনে এখানে ফেলছে। এত উর্বর জমি। এত বড় পাটশিল্প। কমিউনিস্টরা আর মমতাদিদি পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য কী করেছেন? একটা জুটমিলেরও আধুনিকীকরণ হয়নি। স্রেফ পাট কেনা বাধ্যতামূলক বলে বারবার সার্কুলার জারি করে গিয়েছেন। কিন্তু পাট না থাকলে আর কেনা বাধ্যতামূলক করে কী হবে! সময়ের সঙ্গে আধুনিকীকরণ হওয়া উচিত ছিল। কৃষিকেন্দ্রে পাটের নতুন বীজের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করা উচিত ছিল। কিছুই হয়নি! আমার সঙ্গে ওড়িশায় একবার মমতাদিদির দেখা হয়েছিল। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, দিদি, আপনার কৃষিবিজ্ঞানীরা কত নতুন চাল খুঁজে বার করেছেন গত ১০ বছরে? কোনও জবাব দিতে পারেননি। তা হলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করছেটা কী! সেই জন্যই বলছি, উনি ব্যর্থ প্রশাসক। সরকারের তো একটা দায়িত্ব আছে। রাজ্যের মূল ১০টি শস্যের নতুন প্রজাতি খুঁজে বার করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষকরা তো আর সেটা করতে পারবে না।
কিন্তু এখানে তো বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। আমরা তো অন্য রাজ্যকে বিদ্যুৎ বিক্রি করি!
চাহিদা কম। তাই বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। বিদ্যুৎ বাইরে বিক্রি করা কোনও ভাল রাজ্যের পরিচায়ক হতে পারে না। বরং পার ক্যাপিটা বিদ্যুতের চাহিদা বেশি হওয়াটা ভাল রাজ্যের পরিচায়ক। সেটাই সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের মাপকাঠি। মাথাপিছু বিদ্যুতের চাহিদা, মাথাপিছু রোজগার এবং মাথাপিছু সঞ্চয় কত— এই তিনটেই তো উন্নয়নের মাপকাঠি।
শিল্প আসবে?
হ্যাঁ।
গুজরাত থেকে?
অবশ্যই আসবে। গুজরাত থেকে আসবে। মহারাষ্ট্র থেকে আসবে। যারা পূর্ব ভারতে নিজেদের পণ্য পাঠাতে চায়, তারা গুজরাত থেকে পাঠাবে না। কারণ, ওটা পরিবহণের দিক থেকে লাভজনক নয়। ওদের এখানেই কারখানা তৈরি করতে হবে। এখানে কারখানা হলে পুরো উত্তর-পূর্ব, পুরো বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্বের সমস্ত দেশে পণ্য যাওয়ার রাস্তা সুগম হবে। আর এখন কেউ গুজরাত-বাংলা, মহারাষ্ট্র-বাংলা নিয়ে ভাবে না। ওটা শুধু দিদির মনে আছে। এখানে ডালমিয়া, বিড়লারা শিল্প তৈরি করেছিল। দিদির মতে তো তাঁরা সকলেই বহিরাগত! বাংলার অর্থনীতিতে কিন্তু তাঁদের অবদান ছিল।
বাংলার প্রতি আপনার নজর কবে থেকে পড়ল? আপনি ২০১৬ থেকে বাংলায় আসছেন। কবে আপনার মনে হল, বাংলায় কিছু হচ্ছে না?
এর দুটো ভাগ আছে। প্রথমত, আমি দলের সভাপতি ছিলাম। ফলে আমার কাজই ছিল, দেশের প্রতিটি বুথে যাতে আমার দল পৌঁছে যেতে পারে। সেটা তো আমার কর্তব্য। ফলে আমি চেয়েছিলাম, বাংলারও প্রতিটি কোনায় আমার দল পৌঁছক। সেটা কী ভাবে পৌঁছনো যায়? বিশদে পড়াশোনা করলে। সেটা আমার টিম করেছিল। তখনই এই খামতিগুলো নজরে এসেছিল। দ্বিতীয়, অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করা। নিরাপত্তার দিক দিয়ে কোন রাজ্যে সরকার হলে লাভ হবে। উন্নয়নের নিরিখে কোন রাজ্যে সরকার হলে লাভ হবে। শিক্ষার নিরিখে কোন রাজ্যে সরকার হলে লাভ হবে। কোথায় সম্ভাবনা আছে। স্বাভাবিক জবাব— পশ্চিমবঙ্গ।
আপনি বাংলার জন্য যে সময় বিনিয়োগ করেছেন, তা অন্য কোনও রাজ্যের জন্য করেননি।
দেখুন অভীকজি, আমার হাতে প্রচুর সময়। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে ফ্রি মানুষ আমিই (হাসি)। আমার কাছে প্রচুর সময় আছে। বয়স ৫৬ বছর। এখনও প্রচুর সময়।
আপনি দাবি করছেন, বাংলায় ২০০র বেশি আসন পেয়ে সরকার গড়বেন। কিন্তু তাতে অমিত শাহের কী লাভ হবে? একটা দুষ্টু প্রশ্ন করতে পারি?
করুন!
বাংলায় জিতলে অমিত শাহ কি প্রধানমন্ত্রিত্বের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবেন?
বাংলা জয় করে আমার কোনও লাভ নেই। দেশের লাভই আমার লাভ। আমি নিজেকে দেশের থেকে আলাদা কী করে করব! আর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে বলতে পারি, আমার দল ওই ভাবে কিছু ভাবে না। ওটা আমার দলের সংস্কৃতিও নয়। বাংলায় জিতলে সেটা আমাদের জাতীয় সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর জয় হবে। আমার ভূমিকা তো একজন কর্মীর। আমি যখন সভাপতি ছিলাম, তখন অন্যরা চেষ্টা করতেন। নাম হত আমার। এখন আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করছি। নাম পাবেন মোদীজি আর নড্ডাজি (হাসি)। এতে কোনও বিভ্রান্তি নেই। বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাওয়া ভাল (আবার হাসি)।
এখন থেকে পাঁচ বছর পর অমিত শাহ নিজেকে কোথায় দেখেন?
আমি তো নিজেকে বিজেপি-তেই দেখি। দেখুন, দলই আমাদের ভূমিকা তৈরি করে দেয়। ব্যক্তিগত ভাবে কিছু ভাবার ভূমিকা আমার আছে বলে অন্তত আমি মনে করি না।
পশ্চিমবঙ্গ জিতে গেলে তো আর জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবে না। অমিত শাহের পরের চ্যালেঞ্জ কী হবে?
না-না। প্রচুর চ্যালেঞ্জ আছে। ওড়িশা বাকি আছে। তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল বাকি আছে। বিন্ধ্য পর্বতমালার ওপারে অনেক রাজ্য বাকি আছে। প্রচুর কাজ।
আপনার অনেক সময় নিয়ে নিয়েছি…।
দাঁড়ান, দাঁড়ান! আমি আনন্দবাজার ডিজিটালের মাধ্যমে বাংলার মানুষকে কিছু বলতে চাই। ভোটের অনেক বিষয় আছে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, এই বিষয়গুলোতে বাংলার মানুষের বিজেপি-কে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে আমি আরও কয়েকটা বিষয় বলতে চাই। আমার মতে, বাংলার সবচেয়ে বড় সমস্যা অনুপ্রবেশ। বাংলা ভারতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী রাজ্য। উত্তর-পূর্বের সঙ্গে সংযোগকারী রাজ্য। আবার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সাতটি দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের সংযোগকারী এলাকা। বাংলায় যে ভাবে রাজনৈতিক কায়েমি স্বার্থের কারণে প্রথমে কমিউনিস্ট এবং তার পরে তৃণমূল অনুপ্রবেশকে মদত দিয়েছে, তাকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রুখতে হবে। বাংলার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের জন্য চিন্তার। আগামী ১০ বছর পর কলকাতার নাগরিকও অনুপ্রবেশ থেকে বাঁচতে পারবে না। একটা কথা বলা হয় যে, বিএসএফ ভারত সরকারের সংস্থা। কিন্তু এত বড় একটা সীমান্ত, যেখানে নদী-নালা, জঙ্গল-পাহাড় এবং সমতলভূমি রয়েছে, সেখানে যত ক্ষণ না আপনি একটা বাস্তুতন্ত্র তৈরি করছেন, তত ক্ষণ অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাবে না। বাস্তুতন্ত্র বলতে সীমান্তে বেড়া দিতে হবে, থানাগুলো এবং জেলাশাসককে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ সীমান্ত পেরিয়ে এলে কোথায় থাকে? কারা তাদের আশ্রয় দেয়? বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি করে। কিন্তু যদি কেউ ভিতরে ঢুকে পড়ে, তা হলে কে দেখবে? গরুপাচার কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না? আমরা অসমে এই বাস্তুতন্ত্রটা হাতেকলমে করেছি। বেড়ার উপর ক্যামেরা লাগিয়েছি। তার সংযোগ পুলিশ থানায় দিয়েছি। জেলাশাসক, বিএসএফ এবং থানা— তিন পক্ষের উপরেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্যামেরার ফুটেজ দেখার জন্য। সেই কারণেই অনুপ্রবেশ কমে ১০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এটা প্রমাণিত তথ্য। পশ্চিমবঙ্গেও এটা করতে হবে। এটা কমিউনিস্ট, কংগ্রেস বা তৃণমূল— কেউই করতে পারবে না। কারণ, তিনটি দলই অনুপ্রবেশকারীদের নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বানিয়েছে। শুধু বিজেপি করতে পারবে।
শরণার্থী?
হ্যাঁ। এখানে অনেক মানুষ শরণার্থী হয়ে এসে বেআইনি ভাবে বসবাস করছেন। আমরা এখানে ক্ষমতায় এসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে তাঁদের সম্মানজনক ভাবে বাঁচার অধিকার দেব। এর ফলে বাংলার জীবনযাত্রারও অনেক পরিবর্তন হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভাল হবে বলে আমি মনে করি। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন চালাব। সবচেয়ে বড় কথা, অনুপ্রবেশকে এত কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করব যে, পরিষ্কার বার্তা যাবে, বাংলায় এখন অনুপ্রবেশ করা সহজ নয়। আমি মনে করি, বাংলার মানুষের উচিত দিদিকে প্রশ্ন করা যে, আগামী পাঁচ বছর আপনি কী করবেন। সিআরপিএফ, অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রীকে গালাগাল দেওয়া, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করা ছাড়া বাংলার গঠনমূলক উন্নতির জন্য কী করবেন? আমি তো ওঁর ভাষণ শুনছি। পুরো ভাষণই সিআরপিএফ-কে গালি দিয়ে!
কিন্তু গত ১০-১৫ বছরে বাংলাদেশের তো আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে। তা-ও কেন লোকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করছে?
এর দুটো কারণ আছে। এক, বাংলাদেশের উন্নয়ন সীমান্ত এলাকায় নিচুতলায় পৌঁছয়নি। যে কোনও পিছিয়ে-পড়া দেশে উন্নয়ন হতে শুরু করলে সেটা প্রথম কেন্দ্রে হয়। আর তার সুফল প্রথমে বড়লোকদের কাছে পৌঁছয়। গরিবদের কাছে নয়। এখন বাংলাদেশে সেই প্রক্রিয়া চলছে। ফলে গরিব মানুষ এখনও খেতে পাচ্ছে না। সে কারণেই অনুপ্রবেশ চলছে। আর যারা অনুপ্রবেশকারী, তারা যে শুধু বাংলাতেই থাকছে, তা নয়। তারা তো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। জম্মু-কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। দ্বিতীয়, আমি মনে করি এটা প্রশাসনিক সমস্যা। প্রশাসনিক ভাবেই এর মোকাবিলা করতে হবে। সেটা পশ্চিমবঙ্গের সরকার করেনি। পরিশেষে বাংলার মানুষকে জোড়হাতে বলতে চাই, আপনারা বহু দিন কংগ্রেসকে শাসন করার সুযোগ দিয়েছেন। তিন দশক কমিউনিস্টদের শাসন করার সুযোগ দিয়েছেন। এক দশক মমতাদিকে শাসন করার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু বাংলার অনুন্নয়নই হয়েছে। একবার আপনারা নরেন্দ্র মোদীকে সুযোগ দিন। বিজেপি-কে সুযোগ দিন। পাঁচ বছরে আমরা যে সংশোধন করব, তাতে বাংলা আবার ‘সোনার বাংলা’ হওয়ার অভিমুখে এগোবে। এটা আমি সত্যিই বিশ্বাস করি। বিশেষত, কলকাতার ভাই-বোন-নাগরিকদের বলছি, কলকাতায় পরিবর্তন না হলে বাংলাতেও পরিবর্তন হবে না। বাংলাকে আবার দেশে তার পুরোন গৌরবের জায়গাটা ফিরিয়ে দিতে হলে সবচেয়ে আগে কলকাতাবাসীকে পরিবর্তন করতে হবে। কলকাতার নাগরিকেরা সেই উদ্যোগ নিন।
আর কিছু বলবেন?
আমাদের দ্বিতীয় উদ্বেগ বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। কমিউনিস্টরা তো এগুলো মানতই না। তাদের প্রেরণা তো ছিল রাশিয়া আর চিন। মমতাজি এর প্রতি কোনও নজরই দেননি। ফলে বাংলা যে গোটা দেশ এবং পৃথিবীকে অনুপ্রেরণা দিত, সেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিবেকানন্দ যে ভাবে তাঁর আধুনিক বিচারধারা নিয়ে বেদ-বেদান্তকে সারা দুনিয়ায় প্রচার করেছিলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংস যে ভাবে অবধূতের কল্পনাকে পুনরুজ্জীবন দিয়েছিলেন, চৈতন্য মহাপ্রভু দেখিয়েছিলেন ভক্তিই মোক্ষের পথ, স্বামী প্রণবানন্দ বলেছিলেন— ঈশ্বরের সাধনা আর দেশ দুটো একই। এই পুরো ঐতিহ্য ধীরে ধীরে পাতালে প্রবেশ করেছে। শ্রী অরবিন্দ-সহ বহুজনের ভাবধারা প্রচারে গত ৪৪ বছর কোনও কাজই করা হয়নি। আমি মনে করি, এগুলোর পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে বাংলার সাংস্কৃতিক গৌরব আবার ফিরিয়ে আনা উচিত।
রবীন্দ্রনাথ তো আছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের পরীক্ষানিরীক্ষা প্রায় পুরোটাই ধসে যেতে বসেছে। ওটা স্রেফ একটা ঔপচারিকতা হয়ে রয়ে গিয়েছে।
কিন্তু বিশ্বভারতী তো আপনাদের অধীন।
আমাদের অধীনে ঠিকই। কিন্তু যে ভাবে কমিউনিস্টদের আমলে সেখানে লোকজন নেওয়া হয়েছিল, তাতে রাজ্য সরকারের সহযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া আমরা এটা দেখতে পারি না। যে কোনও মতামতই ৫০ বছর পর সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন করতে হয়। শান্তিনিকেতনে সেই বদলের কথা কেউ ভাবেননি। কেউ তাকিয়েও দেখেননি। শান্তিনিকেতনের মূল ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রেখে তাকে প্রাসঙ্গিক করতে হবে। আমি খুব দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে, একমাত্র বিজেপি-ই সেটা করতে পারে।
বাংলার সংস্কৃতি…!
আমাদের ইস্তাহারে বাংলার সংস্কৃতির জন্য প্রচুর বিষয় রেখেছি।
কিন্তু…!
আমাকে বলতে দিন। টিভি-র অ্যাঙ্করদের মতো বাধা দেবেন না।
আর কলকাতা?
কলকাতাকে বাদ দিয়ে বাংলার উন্নয়ন হতে পারে না। কলকাতার উন্নয়নে অনেক কিছু করা উচিত ছিল। কিন্তু কিছুই করা হয়নি। এই জন্য আমরা ২২,০০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছি। পরিকাঠামো ঠিক করা হবে। ১০টি বহুতল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। কলকাতাকে হেরিটেজ সিটি করার জন্য ইউনেস্কোর কাছে দরবার করা হবে। কালীঘাটের আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবন করে কালীমন্দিরের মাহাত্ম্য আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে। বরাহনগর, বালি এবং হাওড়ায় ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পকে মমতাদিদির সরকার গঙ্গায় ফেলে দিয়েছে। আমরা তাকে আবার গঙ্গা থেকে তুলে আনব। ঘাটাল, কান্দি আর উত্তরবাংলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যও তহবিল বানানো হয়েছে। জঙ্গলমহল, সুন্দরবন এবং উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য বোর্ড বানানোর প্রকল্প আছে। বিভিন্ন ভাষাকেও পুনরুজ্জীবিত করা হবে। সাঁওতালি, রাজবংশী, গোর্খালির মতো। সেগুলি সামগ্রিক শক্তি বাংলার সংস্কৃতি এবং বিবিধতাকে আরও শক্তি দেবে।
এত টাকা খরচ করবেন বলছেন। নির্মলা কি এত টাকা দেবেন আপনাকে?
আমি তো ইস্তাহার ঘোষণার সময়েই বলেছিলাম, আমি বেনিয়া। আগে টাকার কথা ভেবে তবেই সব করেছি।