কাতার বিশ্বকাপ ও ইসলাম সম্প্রসার

ভারতে নিষিদ্ধ। বহুদিন ভারত ছাড়া। এমন ধর্মগুরুকেই এবার সাদরে বিশ্বকাপের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানাল কাতার। জাকির নায়েক ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ পাওয়ার পরই তীব্র বিতর্ক চালু হয়ে গেল। এমনিতেই বিশ্বকাপে পোশাক-আশাক, মদ্যপান সংক্রান্ত নিয়মাবলী বিশ্বজুড়ে তুমুল ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এর মধ্যেই বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েককে আমন্ত্রণ করায় নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে কাতার বিশ্বকাপের ধর্মীয় অনুশাসন।
ভারতে ২০১৬ সালে আর্থিক তছরুপির এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ওপর। তারপরেই ভারত ছাড়েন তিনি। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাস করেন জাকির নায়েক। যদিও ২০২০-তে সেই দেশেই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ধর্মীয় প্রচারের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাঁর ওপর।
জানা যাচ্ছে বিশ্বকাপ চলাকালীন ধর্মীয় প্রচার চালাবেন। বিশ্বকাপের মঞ্চ কেন সরাসরি ধর্মীয় প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কাতারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন ক্রীড়া চ্যানেল আলকাস-এর উপস্থাপক ফয়জল আলজারি টুইট করে জাকির নায়েকের কাতারে যাওয়ার বিষয়টি কনফার্ম করা হয়েছে। তাঁর টুইট, “ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েক কাতারে উপস্থিত বিশ্বকাপের সময়। টুর্নামেন্ট চলাকালীন ধর্মীয় বক্তৃতা দেবেন উনি।”
অন্য এক সাংবাদিক জইন খান-ও জাকির নায়েকের আগমনের খবর কনফার্ম করে জানিয়েছেন, “বর্তমান সময়ে অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামিক প্রফেসর কাতারে পৌঁছেছেন ফিফা বিশ্বকাপের জন্য।”
ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় মতাবলম্বী মানুষদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য আইআরএফ-কে পাঁচ বছরের জন্য যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনই জাকির নায়েকের নিজস্ব টিভি চ্যানেল পিস টিভির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও জাকির নায়েকের পিস টিভির দর্শক সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে।যাইহোক, এমনিতেই বহু সমস্যায় দগ্ধ কাতার বিশ্বকাপে জাকির নায়েকের আমন্ত্রণ যে নতুন করে বিতর্কে ইন্ধন দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
Now Welcome to FIFA World Cup 2022 কাতার ????????

১) খেলা দেখতে দেখতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার সময় কিংবা খেলার উত্তেজিত মুহুর্তে কোন পুরুষ সমর্থক জার্সি/জামা খুলে ফেললে তার জেল হবে।

২) মহিলাদের এমন পোশাক পরতে হবে যেনো কাঁধ এবং মিডরিফ ( গলা থেকে বক্ষ অংশ) ঢাকা থাকে। সাথে হাঁটুর নীচে অবধি পোশাক বাধ্যতামূলক। অন্যথায় কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হবে।

৩) সমস্ত রকম বিয়ার-মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিয়ার জলের ঠিক পরেই পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সেই পানীয় নিষিদ্ধ। ফ্যান জোনের বাইরে কেউ লুকিয়ে এই কাজ করলে তাদের গ্রেফতার করা হবে।

৪) যে কোন রকম ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় বই নিয়ে কাতার যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

৫) জাকির নায়েক খেলার সময় স্টেডিয়ামে স্টেডিয়ামে ধর্মীয় সভা করবেন।

৬) কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনে শুধু ভারতবর্ষের ২২০০ লেবার প্রাণ হারিয়েছে। সস্তায় ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান থেকে লেবার নিয়ে গিয়ে ওখানকার ৫০-৫২° তাপমাত্রায় ১৪-১৫ ঘন্টা অবধি পরিশ্রম করানো হতো তাদের। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে পাসপোর্ট আটকে রাখার অভিযোগ এসেছে।

যারা ব্যক্তি স্বাধীনতা, মুক্তমনা, উদারতা, ভেদাভেদ, সহিষ্ণুতা, সংস্কৃতি নিয়ে বড় বড় লেকচার দেয় তারা এখন নিশ্চুপ। তাদের শুধুমাত্র বক্তব্য ‘ভারতবর্ষ একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র’ ।

ফুটবল মানুষকে উদারতা শেখায় সংকীর্ণতা নয়। আর ফুটবল বিশ্বকাপ সমস্ত ফুটবল প্রেমী মানুষের কাছে একটা কার্নিভাল। শুধু খেলা নয় এই বিশ্বকাপ গোটা বিশ্বকে একে অন্যের সাথে সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে শেখায়।
মেলবন্ধন ঘটে মানুষে মানুষে। সেখানে যদি কথায় কথায় ৫ বছর জেল ৭ বছর জেল ফতোয়া জারি হয় তবে উৎসব বদলে তৈরি হয় আতঙ্ক। এবারের বিশ্বকাপ আতঙ্কের। গোল সেলিব্রেশনের জন্য কোন প্লেয়ারের জেল হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকারময় এক অধ্যায় হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ।

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই নিয়ে আধুনিকতার ধ্বজাধারী বামপন্থীরা একেবারে নিশ্চুপ। তারা ভাসুরকর্তার নাম নেয় না লজ্জাবশত !

যখন কোনো মৌলবাদী দেশ বহুত্ববাদী সমাজের চিন্তাধারা অভিনয় করতে চায় তখন পদে পদে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। দুটি মতবাদই আব্রাহামিক হলেও একটি আরবের বালি ছেড়ে বার হতে পারেনি, অন্যটি সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে বিভিন্ন সমাজের সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করে তুলেছে। কুপমণ্ডুক মন নিয়ে সবার সঙ্গে মিশতে গেলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে, মৌলবাদের সঙ্গে সংঘাত প্রতি দিন।
মদ্যপান, খোলামেলা পোশাক, বিভিন্ন বর্ণে রঞ্জিত সমর্থক, ঠাসা গ্যালারি… বিশ্বকাপ ফুটবল তার ছন্দ থেকে অনেক দূরে, দেড় হাজার বছর দূরে। নতুন নতুন ঘটনা রোজ ঘটছে। ফুটবল বহির্ভূত বিষয়ের চর্চাই বেশী চলছে।
বইমেলা যেমন শুধু বই কেনাকাটার জায়গা নয়, বার্তা দেওয়ারও স্থান, তেমনি বিশ্বকাপ ফুটবল, ওলিম্পিক এসবও বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন, বার্তা দেওয়ারও মঞ্চ। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন সহ দশটি ইউরোপীয় দেশ সমকামীদের সমর্থনে যে বার্তা দেবে বলেছিল তা তাদের সাহসে কুলায়নি। মৌলবাদীদের চোখ রাঙানিতে ভয় পেয়ে তারা পিছিয়ে এসেছে। কিন্তু ইরান ভয় পায়নি। ইরানের খেলোয়াড় শুধু নয়, দর্শকরাও দেশে চলতে থাকা মো ল্লা ত ন্ত্র বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে বার্তা দিয়েছে। বিশ্ববাসীর চোখ খুলে দিয়েছে, ইরানে চলতে থাকা মধ্যযুগীয় বর্বরতা পৃথিবীর সামনে ন গ্ন করে দিয়েছে।

ইরান পারস্যে ফিরে যাক। অগ্নি উপাসকরা আরবের দাসত্ব ছেড়ে বেরিয়ে জরাথুস্ট্রীয় জীবনে ফিরে যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.