২৮ শে জুন বিশিষ্ট বিদ্যাবিদ ও বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের প্রথম রাজ্য সভাপতি অধ্যাপক হরিপদ ভারতীর (Haripada Bharati) (২৮শে জুন, ১৯২০ — ১৯ মার্চ, ১৯৮২) জন্মদিন। আমরা ছোটোবেলায় উনাকে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বলে জানতাম, তখন আমি নিতান্তই ছোটো। বাবার কাছে জেনেছিলাম, উনার মত বিদ্বজ্জনকে রাজ্যের সাধারণ মানুষ অন্তর থেকেই শ্রদ্ধা করতেন। রাজনীতির বাইরে তাঁর অনন্য পরিচয় ছিল। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে উনার একটি বক্তৃতার টেক্সট যা ১৯৭৮ সালে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন ব্রহ্মানন্দ শিক্ষক-শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে এক বক্তৃতা সভায় তিনি দিয়েছিলেন (১২ মার্চ, ১৯৭৮), আমার বাবা তা সযত্নে সংগ্রহ করেছিলেন, তার মুদ্রিত রূপ আমার কাছে এখনও রয়েছে। বিষয়: সমন্বয়ের অগ্রদূত বিবেকানন্দ। আমার সংগ্রহে রয়েছে ড. শ্যামাপ্রসাদের জীবনদর্শন নিয়ে তাঁর মূল্যবান প্রবন্ধ যেটা তুহিনা প্রকাশনী দ্বারা প্রকাশিত ও ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী স্মারক সমিতি দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিল।
অধ্যাপক হরিপদ ভারতী ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির প্রার্থী হিসাবে অধুনালুপ্ত জোড়াবাগান বিধানসভা ক্ষেত্রে লড়াই করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের হরপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করেন এবং বিধায়ক হন। তিনি ৪৬.৯৯ শতাংশ ভোট পান। হরপ্রসাদ বাবু পেয়েছিলেন ২৭.৪১ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী শ্রীমতী ইলা রায় ২৪.২ শতাংশ ভোট পান।
অধ্যাপক হরিপদ ভারতী ছিলেন হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সালে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি হন। দলে তিনি ‘মাষ্টার মশাই’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাজ্য বিজেপির সভাপতি হন ড. বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী (সভাপতি: ১৯৮২ — ১৯৮৬ এবং ১৯৯৫ — ১৯৯৭)।
অধ্যাপক ভারতী ছিলেন কলেজে দক্ষ প্রশাসক, স্নেহবৎসল ও ছাত্রদরদী শিক্ষক। তিনি অসম্ভব ভালো বক্তৃতা দিতেন। তাঁর বক্তৃতার ধাঁচা অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন পরবর্তী রাজ্য বিজেপি সভাপতি প্রয়াত তপন সিকদার মশাই (সভাপতি: ১৯৯১–১৯৯৫ এবং ১৯৯৭ — ১৯৯৯)।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভারতীয় জনসঙ্ঘ কর্তৃক পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতাকামী পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের তৎকালীন ঘটনাবলীর প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন অধ্যাপক হরিপদ ভারতী। স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দিতে বিশ্বের কাছে, রাষ্ট্রসংঘের কাছে দাবী তুলেছিলেন তিনি। সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতার ইউনিভারসিটি ইন্সটিটিউট হলে, সভামুখ্য ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের প্রশংসা করেছিলেন। মন্তব্য করেছিলেন এটি অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার এক দিক-নির্ণায়ক ঘটনা।
১৯৭২ সালের ৬ জুলাই মহাজাতি সদনে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জন্মদিন উপলক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে এসেছিলেন তদানীন্তন রাজ্যপাল এ এল ডায়াস, ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জী, তখন তরুণ জনসংঘ নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী, অধ্যাপক হরিপদ ভারতী, আচার্য দেবপ্রসাদ ঘোষ প্রমুখ। সেই সভায় ড. শ্যামাপ্রসাদের স্মৃতি অক্ষুণ্ণ রাখতে একটি স্মারক সমিতি গঠিত হয়। তার প্রথম সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন অধ্যাপক হরিপদ ভারতী। এই সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন বিচারপতি শঙ্করপ্রসাদ মিত্র।
এই সমিতির উদ্যোগেই পরে ১৯৭৯ সালের ৬ জুলাই ভারত সরকার ড. শ্যামাপ্রসাদের স্মরণে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মোরাজ্জী দেশাই। ১৯৮১ সালে এই সমিতির প্রচেষ্টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ‘শ্যামাপ্রসাদ চেয়ার’ স্থাপিত হয়।
এই পোস্টের সঙ্গে একটি ছবি আছে, এঁকেছেন শ্রী শীর্ষ আচার্য (Shri Shirsha Acharya) (বয়স -১৯)
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। (Dr. Kalyan Chakraborty)