নজিরবিহীন পুলিশ বিদ্রোহের সাক্ষী থাকল কলকাতা। মঙ্গলবার রাতে কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে কমব্যাট ফোর্সের সদস্যদের বিক্ষোভ নেমে এলো রাজপথে। সেই বিক্ষোভ সামাল দিতে বুধবার সকাল হতেই পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে ছুটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁকে সামনে পেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন পুলিসকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগের কেন্দ্রেই রয়েছেন কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) ডিসি কমব্যাট ফোর্স নভেন্দ্র সিং পাল। মূলত তাঁর বিরুদ্ধে অধঃস্তন কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন পুলিশকর্মীরা। এদিন সকাল ১০.১০টা মিনিট নাগাদ পুলিস ট্রেনিং স্কুলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর সঙ্গী ছিলেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার অর্জুন শর্মা। অভিযোগ যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হবে বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিস ট্রেনিং স্কুলের এই বিক্ষোভ এই পরিস্থিতিতে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কলকাতা পুলিসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় এবিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি কেউই। মঙ্গলবার পুলিস কমব্যাট ব্যাটেলিয়ন ফোর্সের বিক্ষোভের পরই বুধবার নবান্ন যাওয়ার আগে ট্রেনিং স্কুল পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের মূল অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়াই অতিরিক্ত সময় ধরে ডিউটি করতে হচ্ছে তাঁদের। এবং তাঁদের সুরক্ষার কথা ভাবছেন না পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
কমব্যাট বাহিনীর অভিযোগ, সম্প্রতি পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে বাহিনীর এক কর্মী নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এবং তারপর আরও তিনজনের মধ্যে সেই সংক্রমণ দেখা দেয়। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেননি। এমনকি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বিষয়টি তাদের জানানো হলে, নিচু তলার পুলিশকর্মীদের অপমান করেন তারা। মঙ্গলবার রাতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। শুরু হয় তুমুল পুলিশ বিক্ষোভ। কলকাতা পুলিশের এমন নজিরবিহীন বিদ্রোহের ঘটনা আগে কখনো প্রত্যক্ষ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক মহলের অবসরপ্রাপ্ত কর্তারা।
বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, কলকাতা ডিসি কমব্যাট ফোর্স নভেন্দ্র সিং পালকে পালিয়ে বাঁচতে হয় বিক্ষোভরত কর্মীদের থেকে। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, যদি ওই পুলিশ কর্তা পালিয়ে না বাসতেন তাহলে গণপিটুনিতে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। কপাল জোরে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনেও নিজেদের ক্ষোভ গোপন করেননি কমব্যাট ফোর্সের পুলিশকর্মীরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের জেরে আতঙ্কিত পুলিশকর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুলি উচ্চপদস্থ কর্তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। যদিও আশ্বাস দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রশমনে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।