পেগাসাস ‘হ্যাক’ নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলার সাক্ষী থাকল রাজ্যসভা। দিনভর হই-হট্টগোল চলল। তারইমধ্যে বিজেপির অভিযোগ, সংসদের উচ্চকক্ষে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ বিবৃতি দেওয়ার সময় কাগজ ছিনিয়ে নেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শান্তনু সেন। ছিঁড়ে দেন কাগজ।
বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই পেগাসাস ‘হ্যাক’ নিয়ে উত্তাল হয়েছে সংসদ। বৃহস্পতিবারও সেই ধারায় ছেদ পড়েনি। বরং কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও চাপে ফেলতে উদ্যত হন বিরোধীরা। দুপুরের দিকে পেগাসাস ‘হ্যাক’ নিয়ে বিবৃতি দিতে থাকেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী। কিন্তু সেই সময় রীতিমতো হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা। কার্যত শোনা যাচ্ছিল না মন্ত্রীয় কথা। তারইমধ্যে বৈষ্ণ দাবি করেন, ইজরায়েলি স্পাইওয়ার যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট-সহ অতীতে এই ধরনের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে সবপক্ষ। এই অভিযোগের কোনও তথ্যগত ভিত্তি নেই।’
বিজেপির অভিযোগ, সেই মন্তব্যের মধ্যেই কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর হাত থেকে কাগজ ছিনিয়ে নেন শান্তনু। তা নিয়ে বিজেপি সাংসদ হরদীপ সিং পুরীর সঙ্গে শান্তনুর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে আগামিকাল পর্যন্ত রাজ্যসভা স্থগিত হয়ে যায়। পরে রাজ্যসভার কক্ষের বাইরে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়কে প্রশ্ন করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিজেপির সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘মনে হচ্ছে মূলত তৃণমূল সাংসদ-সহ বিরোধী সদস্যরা নিজেদের জায়গা থেকে উঠে পড়েন। তারপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাত থেকে কাগজ ছিনিয়ে নেন এবং ছিঁড়ে দেন। এটা একদম বরদাস্ত করা যায় না। উনি বিবৃতি দিচ্ছিলেন। তারপর আপনাদের প্রশ্ন করার অধিকার আছে।’
গত রবিবার ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘দ্য ওয়ার’-সহ ১৭ টি সংবাদমাধ্যমের একটি গোষ্ঠীর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘পেগাসাস’ নামে পরিচিত একটি ফোন হ্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী হাজার-হাজার মানুষকে নিশানা করা হয়েছিল। ‘দ্য ওয়ার’-এর প্রতিবেদনে সোমবার দাবি করা হয়েছে, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। সম্ভাব্য তালিকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ছিল বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার ওই প্রতিবেদনগুলিকে ‘মাছ ধরার অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সঙ্গে জানিয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের উপর সরকারি নজরদারি চলছে, সেই দাবির স্বপক্ষে কোনও মজবুত ভিত্তি বা সত্যতা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়, ‘মৌলিক অধিকার হিসেবে বাকস্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা হল ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। আমরা সর্বদা খোলামেলা কথোপকথনের সংস্কৃতিতে জোর দিয়ে একটি অবগত নাগরিক সমাজের পক্ষে থেকেছি।’ পরে পেগাসাস ‘হ্যাক’-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন দুই শীর্ষ মন্ত্রী। পুরো বিতর্কের সঙ্গে কেন্দ্র বা বিজেপির নাম জড়ানোর জন্য ছিঁটেফোটা প্রমাণও নেই বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ।