রবিবারেই তিনি বলেছেন, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার-করা ওই টাকা তাঁর নয়। তা হলে ওই টাকা কার? রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সোমবার সকাল থেকে লাগাতার এই প্রশ্ন করা শুরু করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। দুপুর পর্যন্ত খবর, তাতে নিরুত্তর রয়েছেন পার্থ।
রবিবার রুটিন স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য পার্থকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল ইডি। সেখানে ঢোকার সময় গাড়ি থেকে নেমে হুইলচেয়ারে ওঠার আগে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে পার্থ বলেছিলেন, ওই টাকা তাঁর নয়। প্রাক্তন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমার কোনও টাকা নেই।’’ উল্লেখ্য, ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে মোট প্রায় ৫২ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়েছে। ইডি সূত্রের খবর, ওই টাকা পার্থের বলে জেরায় অর্পিতা দাবি করেছেন। কিন্তু রবিবার পার্থ সরাসরিই বলে দেন, ওই টাকা তাঁর নয়।
বস্তুত, স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর হাসপাতাল থেকে বার করার সময়েও পার্থকে একই প্রশ্ন করার অবকাশ পেয়েছিল সংবাদমাধ্যম। পার্থ তখন আরও একবার দাবি করেন, ওই টাকা তাঁর নয়। তিনি খানিকটা জোর দিয়েই বলেন, ‘‘আমার নয়, আমার নয়, আমার নয়! আমি টাকার লেনদেন করি না।’’
কে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, সেই প্রশ্নেও পার্থ বলেন, ‘‘সময় এলেই বুঝতে পারবেন।’’ ষড়যন্ত্র কার বা কাদের, তা আগে বললেও সেদিন তা খোলসা করেননি পার্থ। গত শুক্রবার জোকার হাসপাতালে ঢোকার সময় পার্থ বলেছিলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। রবিবার জোকার হাসপাতালে ঢোকার মুখে আবারও এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী। কে ষড়যন্ত্র করছে? সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে রবিবার পার্থ বলেছিলেন, ‘‘সময় এলেই বুঝতে পারবেন।’’ অর্থাৎ, গত শুক্রবারের মতোই রবিবারেও পার্থ স্পষ্ট করেননি, কে বা কারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে! যেমন এটিও স্পষ্ট করেননি যে, ওই টাকা তাঁর না-হলে বা তিনি টাকার ‘লেনদেন’-এ সঙ্গে যুক্ত না-থাকলে ওই টাকা কার। কারাই বা টাকার লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত আছেন বা থাকেন।
টাকা তাঁর নয়, পার্থ এ কথা বলার পর তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ রবিবারেই বলেছিলেন, ‘‘এ কথা আগে বলেননি কেন! এর পর তো কোনওদিন উনি বলবেন, অর্পিতাকে চেনেন না! কোনওদিন বলবেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে তিনি জানেন না!’’
কুণাল তথা তৃণমূলের বক্তব্য রাজনৈতিক। কিন্তু পার্থের ওই বক্তব্যের একটি তদন্তমূলক দিকও রয়েছে। সোমবার ইডির একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে পার্থের রবিবারে মন্তব্য সামনে রেখেই তাঁকে জেরা শুরু করেছে ইডির তদন্তকারীরা। রবিবার পার্থের ওই বক্তব্য বিভিন্ন খবরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন সোমবার তার প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, সোমবার সকাল থেকে সিজিও কমপ্লেক্সে পার্থকে রবিবার প্রকাশিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের খবরের প্রিন্ট আউট এবং সোমবার প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের কাগজে পার্থের বক্তব্যের কাটিং দেখিয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, উদ্ধার-করা বিপুল পরিমাণের ওই টাকা যদি তাঁর না-হয়,তা হলে তা কার? আর তাঁর বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে তিনি বার বার সংবাদমাধ্যমকে বলছেন, সেই ষড়যন্ত্রই বা কে অথবা কারা করছে?
তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, পার্থ সোমবার দুপুর পর্যন্ত ওই বিষয়ে নিরুত্তর থেকেছেন। এখন দেখার, তিনি বিষয়টি খোলসা করেন কি না। নাকি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে যেমন এড়িয়ে গিয়েছেন, তেমনই তদন্তকারীদের প্রশ্নও এড়িয়ে যান।