কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার কি অবশেষে দেশে জাতি-সুমারির দাবি মেনে নেবে? বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে সে রাজ্যের ১১টি দল আজ সোমবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জাতি-সুমারির দাবি পেশ করতে যাচ্ছে। তাতে বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবও থাকবেন। আর একটু পরেই সে বৈঠক শুরু হওয়ার কথা।
ওই বৈঠক ঘিরে বিজেপির অভ্যন্তরীণ তৎপরতায় জোর জল্পনা শুরু হয়েছে, তাহলে কি কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের দাবি মেনে নিতে চলেছে। দাবি আদায়ের কৃতিত্ব যাতে পুরোপুরি বিরোধীরা না পায় সে জন্যই আচমকা বিজেপিও এই ব্যাপারে মুখর হয়েছে।
দল যে বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সেই বার্তা দিতে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে বিহারের দীর্ঘদিনের বিরোধী দলনেতা, প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ সুশীল মোদী শামিল হচ্ছেন। বৈঠকে যাওয়ার আগে তিনি পুরনো নথিপত্র ঘেটে দাবি করেছেন, বিজেপি বহুদিন ধরেই এই দাবি সমর্থন করে আসছে।
জাতিসুমারি কী?
বর্তমান জনগণনায় শুধুমাত্র জনসংখ্যাকে শুধুমাত্র তিনটি ভাগে চিহ্নিত করা হয়। সাধারণ ক্যাটিগরি এবং তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি। এর বাইরেও দেশে শতাধিক জাতি আছে যেগুলিকে আলাদা করে চিহ্নিত না করে ওই তিন ক্যাটগরির মধ্যেই ধরা হয়। কিন্তু অন্যান্য অনুন্নতদের সংরক্ষণ চালু হওয়ার পর জাতভিত্তিক সুমারি জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে সব দল। কংগ্রেসও সম্প্রতি এই দাবি সমর্থন করেছে। কারণ, অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা যাতে সমস্ত জাতিগোষ্ঠী জনসংখ্যার অনুপাতে পায় তা নিশ্চিত করতে এটা জানা জরুরি।
সমস্যা হল, ১৯৩১-এর পর দেশে আর জাতিসুমারি হয়নি। বছর দশেক আগে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আর্থ-সামাজিক সমীক্ষায় বিভিন্ন জাতির সংখ্যার কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তা প্রকাশ করা হয়নি হিসাবে গোলমাল থাকায়।
গত শনিবার প্রয়াত হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রবিবার তাঁর শেষকৃত্বে অংশ নেন। কল্যাণ সিং ছিলেন দলের সেই নেতা যিনি হিন্দুত্বের সঙ্গে দলিত রাজনীতিকে মেশাতে পেরেছিলেন। তারই সুফল আজ উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি ভোগ করছে।
সূত্রের খবর, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিজেপিও জাতি সুমারি বা কাস্ট বেসড সেনসাসের দাবি আদায়ের পথে হাঁটতে পারে। কারণ, বিগত নির্বাচনগুলিতে দেখা গিয়েছে, উচ্চবর্ণের পার্টি বলে পরিচিত বিজেপি গোটা দেশেই দলিত ও পিছড়ে বর্গের মানুষের সমর্থন পাচ্ছে। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ২০১৯-এ তা দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। এখন তাই জাতি সমীক্ষার দাবি না মানলে দলিত ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে পার্টি নিজেদের দলিতের বন্ধু প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছে।
কিন্তু জাতিগত সুমারি নিয়ে গত মাসে সংসদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই ঘোষণা করে দেন, সাধারণ এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি ছাড়া জাত ভিত্তিক আর কোনওভাবে সুমারির ভাবনা সরকারের নেই। প্রসঙ্গত, করোনার কারণে এখনও জনগণনার কাজ শুরু করা যায়নি। আগের রুটিন অনুযায়ী চললে এতদিনে সুমারি শেষ হয়ে যেত। কারণ, যে বছর সুমারির ফলাফল ঘোষণা করা হয়, মাথা গোনা শুরু হয় তার এক বছর আগে থেকে। করোনার জন্য সব পিছিয়ে গিয়েছে। এই সুযোগে জাতিগত সুমারির দাবি নীতীশ কুমার ছাড়াও উত্তর প্রদেশে মায়াবতী, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার প্রমুখ তুলেছেন।