কদিন আগে দেশবাসীকে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে বাঙালি কবি মনমোহন বসুর কবিতা উদ্ধৃত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা ছাড়া ইদানীং প্রায়ই ঋষি অরবিন্দ, বিবেকানন্দর প্রসঙ্গ তাঁর বক্তৃতায় তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রী।
তাও একরকম ছিল।
কিন্তু শুক্রবার উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি শাভকাত মিরজিওয়েতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যা করে দেখালেন, তা এক কথায় নজিরবিহীন। অতীতে কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এমন নজির রয়েছে কিনা সন্দেহ।
উজবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ওই দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক হয়েছে ভার্চুয়ালি। অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমে। সেখানে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ছবিকে ব্যাকড্রপে ব্যবহার করেছে প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের বিদেশনীতির কালোত্তীর্ণ দর্শনই হল, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান। নয়াদিল্লির কূটনীতিকরা বলছেন, ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরার উদ্দেশেই এ হেন ব্যাকড্রপ ব্যবহার করা হয়েছে।
ভারত-উজবেকিস্তান এই দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে এদিন ৯টি মউ সাক্ষরিত হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এর মধ্যে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত বোঝাপড়ার বিষয়টি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা ও বাঙালির জন্য এটা কম গর্বের নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁদের কথায়, হতে পারে বিদেশনীতির সঙ্গে রাজনীতিকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য যদি থেকেও থাকে, তার পরেও বলা যায়, বাংলার কোনও মন্দিরকে এর আগে তো কেউ এভাবে তুলে ধরেননি।
প্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশ মন্ত্রকের এই পদক্ষেপ বাংলার গেরুয়া শিবির যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। বিশেষ করে রাজ্যে শাসক দল তৃণমূল যখন বহিরাগত বলে বিজেপির গায়ে তকমা সেঁটে দিতে চাইছে, যখন প্রচারে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি বলতে বোঝেটা কী! ঠিক সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী কৌশলে বাঙালি আবেগকে ছুঁতে চাইলেন বলেই মনে করছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার ডায়মন্ডহারবার সফরে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। তার কনভয়ের উপর লাঠি, ইট নিয়ে হামলা হয়। তাতে আহত হয়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়ের মতো প্রবীণ নেতারা। গত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে সেই ছবি ছেয়ে রয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম। শুক্রবার সেই ছবির পাশে যে ছবি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী, তাতে অসীম বৈপরীত্য।
তৃণমূলের এক নেতা অবশ্য ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর অবস্থা এখন পূর্বরাগের রাধার মতো। শয়নে স্বপনে বাংলাকে দেখছেন। তা ভাল। ভাল করেই দেখুন স্বপ্নে। বাস্তবে তো আর হবে না!