আগের বারের চেয়ে আরও ১০টি আসন বাড়িয়ে একক ভাবে সরকার গঠন করতে চলেছে তারা।মণিপুরে মোট ৬০টি আসনের বিধানসভায় বিজেপি এ বার পেয়েছে ৩১টি আসন। সরকার গঠন করতে ঠিক যে আসনসংখ্যা প্রয়োজন। ২০১৭-র নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ২১টি আসন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে তিনটি আসন দূরে ছিল কংগ্রেস। ২৮টি আসন পেয়ে তারা পয়লা নম্বরে ছিল। কিন্তু এ বার সেই কংগ্রেসই মাত্র ৬টি আসন পেয়ে এক ধাক্কায় নেমে এসেছে তৃতীয় স্থানে। অন্য দিকে, ৭টি করে আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে নাগা পিপপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ) এবং জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)।বলা হয়, কেন্দ্রে যে দল ক্ষমতায় থাকে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি মোটের উপর সেই দলের দিকেই ঝুঁকে থাকে।সেই রেওয়াজ অনুযায়ীই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে জয় নিয়ে প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল কেন্দ্রের শাসক বিজেপি। ভোটের আগে মণিপুরে গিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছিলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী। এ বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ক্ষমতায় ফিরব।” একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, এ বারের নির্বাচনে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল নয় বিজেপি। দলের প্রাথমিক লক্ষ্য একটাই— একক গরিষ্ঠতা অর্জন। হলও তাই। বুথফেরত সমীক্ষাতেও মণিপুরে বিজেপি-কেই এগিয়ে রেখেছিল অধিকাংশ সংস্থা। কিছু সংস্থা বিজেপি-র জয়ের উপর জোর দিলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে কয়েক আসন দূরে রেখেছিল তাদের। তবে বিজেপি যে বেশি আসনে জিতবে, বুথফেরত সমীক্ষায় তা নিশ্চিত ছিল। সব মিলিয়ে আবারও গেরুয়ার জয়ধ্বজ উড়ল মণিপুরেএই নির্বাচনে কোনও আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট করেনি বিজেপি। ফলে বিজেপি-র কাছে এ বারের নির্বাচন ছিল অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তার থেকেও দলকে জিতিয়ে আনা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা এন বীরেন সিংহের কাছে। কেননা বিজেপি-কে রাজ্যের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার ভার তাঁর উপরেই দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সেই দায়িত্ব তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালনও করলেন। নিজেও জিতলেন পূর্ব ইম্ফলের হেইনগ্যাং বিধানসভা ক্ষেত্র থেকে। ৬০ বিধানসভা আসনের সবক’টিতেই একক ভাবে প্রার্থী দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। অন্য দিকে, নাগা পিপপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), যারা গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র শরিক দল ছিল, তারাও এ বার আলাদা আলাদা ভাবে প্রার্থী দিয়েছিল। এনপিপি ৩৯টি এবং এনপিএফ ৯টি আসনে এবং কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল ৫৩টি আসনে।২০১৭-র নির্বাচনে এনপিপি, এনপিএফ, তৃণমূল এবং নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে সরকার গড়েছিল বিজেপি। কিন্তু পরবর্তীকালে এনপিপি, তৃণমূলের সমর্থন প্রত্যাহার এবং বিজেপি-র তিন বিধায়কও দল ছেড়ে দেওয়ায় সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই সঙ্কট সামাল দিয়েছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। টিকে গিয়েছিল সরকার। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এ বার আর সেই রাস্তায় হাঁটেনি গেরুয়া শিবির। এ বারের ভোটের ফল নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিল কংগ্রেস। কিন্তু দেশের বাকি রাজ্যগুলির মতোই মণিপুরেও তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে জনতা। ২০১৭-তে যে ভাবে ঝুলি ভরে দিয়েছিল এ বার তার ঠিক উল্টো ছবি ধরা পড়ল সেখানে। কংগ্রেসকে যে আর ভরসা করা যায় না, ভোটবাক্সেই তার প্রমাণ দিলেন মণিপুরবাসী। উল্লেখযোগ্য ভাবে আসন বাড়িয়েছে এনপিএফ এবং জেডিইউ। গত বার এনপিএফ পেয়েছিল ৪টি আসন। জেডিইউ কোনও আসনই পায়নি।