পার্থের ফোনে মানিকের নম্বর সেভ করা ছিল ‘মানিক ভট্টাচার্য ল’ নামে, বলছে ইডির চার্জশিট

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির ৮০ দিন পর নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, পার্থের ফোন থেকে মানিককে নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাতে কোথাও রয়েছে পার্থের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে মানিকের মেসেজ। কোথাও রয়েছে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ করে পার্থকে হস্তক্ষেপ করতে বলছেন জনৈক ব্যক্তি। পার্থ ও মানিক সম্পর্কে আর কী কী ছিল ইডির চার্জশিটে?

শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় গত ২৩ জুলাই গ্রেফতার হন পার্থ। এখনও তিনি সিবিআই হেফাজতে। অন্য দিকে, সিবিআই এবং ইডি দুই কেন্দ্রীয় সংস্থারই আতশকাচের তলায় ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক। অবশেষে তাঁকেও গ্রেফতার করল ইডি। পার্থের বাড়িতে তল্লাশির সময়েই ইডি গিয়েছিল মানিকের বাড়িতে। তখনই জারি হয় ‘লুক আউট নোটিস’। তার পর সামনে আসে পার্থ-মানিকের মোবাইল বার্তার কিছু বিষয়।

চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, গ্রেফতারের সময়ে বাজেয়াপ্ত হওয়া পার্থের মোবাইলে মানিকের নাম ‘মানিক ভট্টাচার্য ল’ বলে সেভ করা ছিল। কে এই ‘মানিক ভট্টাচার্য ল’? তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে পার্থ জানান, ইনিই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বিধায়ক। প্রসঙ্গত, মানিক ভট্টাচার্য এক সময়ে শিক্ষকতা করতেন কলেজে। আইন বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি।

কেন পার্থের ফোনে ‘মানিক ভট্টাচার্য ল’ নামে পলাশিপাড়ার বিধায়কের নাম সেভ করা ছিল? সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে উচ্চ আদালতে মানিক জানিয়েছিলেন, ১৯৮১ সাল থেকে তিনি শিক্ষকতা করছেন। সুরেন্দ্রনাথ সান্ধ্য কলেজ এবং বিজয়গড় বিদ্যাপীঠে বাণিজ্য বিভাগে পড়াতেন তিনি। পরে ১৯৯৮ সালে যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের অধ্যক্ষ হন মানিক। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন ওই পদে। আবার মানিক এই কলেজ থেকেই আইন নিয়ে পাশ করেছিলেন। যে কারণে পার্থের ফোনে ওই ভাবে মানিকের নম্বর সেভ করা থাকতে পারে বলে ইডি সূত্রে খবর।

ইডির চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর পার্থকে ‘মানিক ভট্টাচার্য ল’ একটি মেসেজ পাঠান। প্রাইমারি টেটের ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে ওই মেসেজ বলে দাবি করে ইডি। মানিক ওই মেসেজে লেখেন, ‘দশ মিনিট দিস। কাল বাড়ি যাব।’ জবাবে পার্থ লেখেন ‘ওকে’।

শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ইডির গ্রেফতারের খবর প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার। বয়ানে অসঙ্গতি এবং জেরায় অসহযোগিতার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার পলাশিপাড়ার বিধায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইডির তরফে সোমবার মানিককে সিজিও কমপ্লেক্সে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু সেই সময় তিনি ইডি আধিকারিকদের তদন্তে সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় মানিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে যে নথি জমা দিয়েছিলেন, সেখানে একাধিক গরমিল রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। সে কারণেই এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। শেষে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তার পরই ইডির চার্জশিট নিয়ে চর্চা শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.