কলকাতা, ২ মে (হি স)। রবিবার পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু এর আগের বিভিন্ন নির্বাচনের ছবিগুলো কেমন ছিল? দেখা যাক এক ঝলকে—

প্রথম নির্বাচন (১৯৫২)
বিধানচন্দ্র রায়ের কংগ্রেস ১৫০টি আসন পায়। বিরোধী জ্যোতি বসুর দল বামফ্রন্ট মাত্র ৩৯টি আসন পেয়েছিল। মোট আসন ছিল ২৩৮টি।

দ্বিতীয় নির্বাচন (১৯৫৭)
১৯৫৭ সালে কংগ্রেস পায় ১৫২ টি আসন ও সরকার গঠন করে। মোট আসন ছিল ২৫২টি।

তৃতীয় নির্বাচন (১৯৬২)
মোট ২৫২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এবারও কংগ্রেস ১৫২টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে।

চতুর্থ নির্বাচন (১৯৬৭)
এই প্রথম সরকারে আসে বামেদের ইউনাইটেড ফ্রন্ট। পায় মোট ১৩৩টি আসন। কংগ্রেস পায় ১২৭টি আসন।

পঞ্চম নির্বাচন (১৯৬৯)
২৮০-র মধ্যে ২১৪ টি আসন এবং প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকের কাছাকাছি পেয়ে অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকার গঠন করে।
তবে মাত্র ১ বছর ১৫৫ দিন ক্ষমতায় ছিল এই সরকার।

ষষ্ঠ নির্বাচনে (১৯৭১)
মাঝে ২১৫ দিনের রাষ্ট্রপতি শাসন জারি থাকার পরে নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন কংগ্রেসের প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ।

সপ্তম নির্বাচন (১৯৭২)
১৯৭২ সালের সপ্তম বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। তাদের জোট ছিল সিপিআইয়ের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী হন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। কয়েকজন নতুন কংগ্রেস যুব নেতা বিধায়ক হন। সিপিএম-এর ১৪ জন বিধায়ক ভোটে রিগিংয়ের অভিযোগ ও প্রতিবাদে বিধানসভা বয়কট করেন।

অষ্টম নির্বাচন (১৯৭৭)
কেন্দ্রে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের পতনের পর ১৯৭৭ সালের ১৪ জুন এই নির্বাচন হয়।বামফ্রন্ট এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। এই বিজয় বাম দলগুলির কাছেও বিস্ময়কর ছিল। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) নেতা জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে রাজ্যে প্রথম বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে।

বামফ্রন্ট ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৩১টি আসন পায়।এই নির্বাচনের ফল বামফ্রন্টের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ, তারা নির্বাচনের আগে জনতা পার্টিকে ৫৬% আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন বামফ্রন্ট সরকার গঠন করে।জ্যোতি বসু এই সরকারে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) নেতা সন্তোষ রানা 
গোপীবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

নবম নির্বাচন (১৯৮২)
১৯৮২ সালে বামফ্রন্ট আরও শক্তিশালী হয় কারণ ইতিমধ্যে বামফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিপিআই, পশ্চিমবঙ্গ সোস্যালিস্ট পার্টি এবং ডিএসপি । অন্যদিকে কংগ্রেস (আই) এবং কংগ্রেস (এস) জোট বেধেছে। ১৯মে ভোট হল । আগের মতই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বামফ্রন্ট জিতে ক্ষমতায় এল। ইন্দিরা কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২০ থেকে বেড়ে ৪৯ হল‌ এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এল ‌। কিন্তু জনতা পার্টি ‌ প্রায় মুছে গেল। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মেরুকরণ হল- বাম বনাম কংগ্রেস (আই)তে। বামফ্রন্ট ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৩৮টি আসন জিতল। এমন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এই ভোটে বেশ কিছু অঘটন ঘটে ছিল। ছয় জন বামমন্ত্রী পরাজিত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন – বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য , অশোক মিত্র, পার্থ দে। নির্বাচনের পর জ্যোতি বসু ফের জিতে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। হাসিম আব্দুল হালিম হলেন বিধানসভার স্পিকার।

দশম নির্বাচনে (১৯৮৭)
বাম শাসন অব্যাহত থাকে। প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বামেরা পায় ২৫১ আসন।

একাদশ নির্বাচন (১৯৯১)
১৯৮৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন করলে পরবর্তী ভোট ১৯৯২ সালে হওয়ার কথা। লোকসভার নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। হাওয়া অনুকূল বুঝে চার বছরের মাথায় বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে ১৯৯১ সালেই এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়।

ওই নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস ঝাড়খন্ড পার্টি এবং জি এন এল এফের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে। এই নির্বাচনের আগেই কংগ্রেস প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়কে রাজনীতিতে ফিরিয়ে নিয়ে এসে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব দেন। কংগ্রেস চেয়েছিল সিদ্ধার্থ শংকরের ভাবমূর্তিকে ইউএসপি করে এগোতে। তবে তাঁকে ফিরিয়ে এনেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলে সেই সময় আদৌ সুবিধে করতে পারেনি কংগ্রেস।

জ্যোতি বসু প্রচারে এ রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলছেন। তাছাড়া বামেরা নিজেদের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে না গিয়ে জাতীয় সমস্যাগুলি নিয়ে প্রচার চালাতে থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মন্ডল কমিশন ইত্যাদি প্রসঙ্গ তোলার পাশাপাশি তাদের সমর্থনের কারণ হিসেবে প্রচারে স্থায়িত্বের কথা তোলেন। তাছাড়া নতুন মুখের দিকে জোর দিতে গিয়ে মন্ত্রী আব্দুল বারী সহ ৩৫ জন বিধায়ককে এই নির্বাচনে আর টিকিট দেন না।

এই বিধানসভা নির্বাচনে শুধু সিপিএম একাই পেয়েছিল ১৮৭টি আসন। তাছাড়া ফরওয়ার্ড ব্লক আরএসপি এবং সিপিআই পেয়েছিল যথাক্রমে ২৯,১৮ এবং ৬টি আসন। অন্যদিকে কংগ্রেসের ঝুলিতে ছিল ৪৪টি আসন। মুখ্যমন্ত্রী হন সেই জ্যোতি বসু।

দ্বাদশ নির্বাচন (১৯৯৬)
বামেদের দুর্গ অব্যাহত রেখে পরপর পাঁচবার ক্ষমতা দখল করেন জ্যোতি বসু। ২৯৪টির মধ্যে বামফ্রন্ট ২০৩ আসন পায়।

ত্রয়োদশ নির্বাচন (২০০১)
কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে ২০০১ সালে হারিয়ে জয়ী হয় বামফ্রন্ট। দীর্ঘ ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর সরিয়ে দাঁড়িয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে চেয়ারে বসান জ্যোতি বসু।

চতুর্দশ নির্বাচন (২০০৬)
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ২৩৫টি আসনে জিতে বিপুলভাবে ক্ষমতায় ফেরে বামফ্রন্ট। বিরোধী তৃণমূল পায় মাত্র ৩০টি আসন।

পঞ্চদশ নির্বাচন (২০১১)
৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন ছয় দফায় আয়োজিত হয়েছিল। প্রাপ্ত আসন ছিল তৃণমূল ২২৭, বামফ্রন্ট ৬২।

ষোড়শ নির্বাচন (২০১৬)
একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবেই রাজ্যে সরকার গঠন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পাশে পেয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তিন বিধায়কের সমর্থন। বাম আর কংগ্রেস জোটের আসন সংখ্যা ছিল ৭৭। বিজেপি মাত্র তিনটি আসন দখল করতে পেরেছিল। আর নির্দল বিধায়কের সংখ্যা ছিল ৩। 

নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষে ভোট পড়েছিল ৪৫. ৭১ শতাংশ। ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাম আর কংগ্রেস জোট। মাত্র ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। 

হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক

অশোক সেনগুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.