ডঃ তরুণ মজুমদার
অতি সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হয়ে যাওয়া যুগান্তকারী কৃষি আইন ২০২০ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অপপ্রচার কৃষক সমাজ তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথে অযথা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক; তাদের গঠনমূলক সমালোচনা দেশ তথা সমাজকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু বর্তমান ভারতীয় রাজনীতিতে সর্বক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা করার যে সস্তা রাস্তা বিরোধীরা নিঃসংকোচে বেছে নিয়েছেন, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। কৃষক নিজের ইচ্ছায় উৎপাদিত শস্য বিক্রি করে বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারলে, রাজ্যের ভেতরে ও বাইরে কৃষিজ উৎপাদনের বাণিজ্য বাধামুক্ত হ’লে প্রতিবাদ কিসের জন্য? দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী বারংবার আশ্বাস দিয়েছেন যে বর্তমানে চালু থাকা নূন্যতম সহায়ক মূল্যে (MSP) সরকার কর্তৃক শস্য ক্রয়ের প্রক্রিয়া চালু থাকবে। এই নতুন কৃষি আইন তাকে কোনভাবেই পরিবর্তন করবে না। তা সত্ত্বেও বিরোধীদের এই সীমাহীন মিথ্যা অপপ্রচার কেন?
বিগত শতাব্দীর সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকের মধ্যে আমরা খাদ্যশস্য সহ অন্যান্য কৃষি উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছি। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের পর থেকেই কৃষকেরা ক্রমাগত লোকসানের মুখ দেখতে বাধ্য হয়েছেন। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ভাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কৃষিতে বিশ্বায়নের ঢল নামার ফলে কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর কৃষকসমাজ দিয়ে উন্নত দেশগুলির কৃষিপণ্যের মোকাবিলা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে দেশের জাতীয় সরকার কৃষির উপর একটি সামগ্রিক নীতি প্রণয়নের কথা ভেবেছিলেন, যাতে করে কৃষিজ ফলনের পরিমাণের উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ না করে কৃষি পণ্যের গুণগত মান ও কৃষি আয় এর উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করা যেতে পারে। এই সাধু উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ১৮ই নভেম্বর প্রখ্যাত কৃষিবিদ, ভারতে সবুজ বিপ্লবের জনক ডঃ এম এস স্বামীনাথনের নেতৃত্বে কৃষকদের জন্য জাতীয় কমিশন গঠন করা হয়।
কৃষকদের সমস্যার গভীরে পৌঁছে তার থেকে নিষ্কৃতির উপায় অনুসন্ধান করাই ছিল কমিশনের মূল কাজ। কমিশন তাঁর রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয় ২০০৬ সালের ৪ই এপ্রিল। কমিশনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ছিল—- কৃষি কে সংবিধানের রাজ্য তালিকা থেকে যৌথ তালিকায় নিয়ে আসা; উর্বর কৃষিজমি কে শিল্পের জন্য কর্পোরেট সংস্থার কাছে হাতবদল রোধ করা; কৃষি প্রযুক্তি ও তার মার্কেটিং এর উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা; কৃষিজাত পণ্যের গুণগত মান ও কস্ট-কম্পিটিটিভনেস বৃদ্ধি করা; ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মেকানাইজড্ চাষ, শস্য উৎপাদনের খরচ কমানো, ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি ও অধিক মুনাফার জন্য যৌথ চাষ, চুক্তি চাষের উপর গুরুত্ব আরোপ করা; কৃষি পণ্য উৎপাদন খরচের অন্তত দেড় গুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদান করা; কৃষি মান্ডি গুলিতে কৃষি পণ্য বিক্রি-জনিত কর প্রত্যাহার করা প্রভৃতি। দুর্ভাগ্য যে ২০০৬ সালে সুপারিশগুলি জমা হওয়ার পরও কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য সেই অর্থে সঠিক পদক্ষেপ করা হয়নি, পরিবর্তে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধার জন্য এই ইস্যু গুলিকে জাগিয়ে রেখে কৃষকদের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায় কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করা হয়েছে দিনের পর দিন। উল্টে গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনার ফলে চাষের মজুরিগত ব্যয় অত্যন্ত বেড়ে গেছে। দরিদ্র ক্ষুদ্র চাষির উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার এই দায় কিছুটা হলেও গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনার উপর বর্তায়। অন্যদিকে, ভূমি সংস্কারের নামে কৃষিজমি গুলিকে টুকরো টুকরো করে এবং প্রচুর মালিক তৈরি করে বিকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা করা গেছে ঠিকই কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন, দক্ষতা, প্রতিযোগিতা, উৎপাদনশীলতা–এর কোনটাই বাড়ানো যায় নি। প্রকৃতপক্ষে কৃষি জমির একটি ন্যূনতম আয়তন ভীষণভাবে প্রয়োজন, নইলে কৃষিতে লাভজনক বিনিয়োগ অসম্ভব। ঢালাও ভর্তুকি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, অঢেল কৃষি ঋণের ব্যবস্থা এতদিনেও ভারতীয় কৃষি কে কেন উৎপাদনশীলতায়, কৃষিপণ্যের গুণমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কৃষি ব্যবস্থার সমতুল্য করতে পারল না —- সে প্রশ্ন কে তুলবে? আমাদের রাজ্যে অসংখ্য নদী, খাল, বিল, পুকুর, ভেড়ির ন্যায় জলাশয়ের অভাব নেই। তবুও বছরে রাজ্যে যেখানে ৩০ লক্ষ টনেরও বেশি মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা সেখানে হচ্ছে মাত্র ১৬ লক্ষ টন। নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারার ব্যর্থতা, পড়শী রাজ্য থেকে মাছ আমদানি করতে আমাদের বাধ্য করে। কিন্তু কেন এই অপদার্থতা? আজও যদি প্রশ্ন না তোলা হয় তবে আরো পিছিয়ে যেতে হবে না তো?
শুধুমাত্র ভর্তুকি আর সর্বক্ষেত্রে অত্যধিক সরকারি নিয়ন্ত্রণ সস্তা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি এবং দুর্নীতি কেই কেবলমাত্র পুষ্ট করে; কৃষির মূল সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চাইলে কৃষিকে বাজারোপযোগী করতেই হবে। যুথবদ্ধ কৃষিজমিতে চুক্তি চাষের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তিগত কৌশল, উপযুক্ত সেচ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই উৎপাদনশীলতা ও ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। সাথে সাথে কৃষিপণ্যের বিক্রিতেও বেসরকারি বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। ফসলের বৈচিত্র্য আনয়ন, কৃষককে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলা, সহজেই ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার সুবিধা, খামখেয়ালি প্রকৃতির ছোবলে অনিবার্য লোকসান থেকে ভারতীয় কৃষককে বাঁচাতে চুক্তি চাষ আজ বাস্তবিকই অপরিহার্য।
বর্তমান কৃষি আইনে চুক্তি চাষের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার সাথে কৃষকদের অগ্রিম চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে উপযুক্ত দামের নিশ্চয়তা আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকবে। দামের অনিশ্চয়তা থেকে কৃষককে রক্ষা করার জন্য বীমা ও অন্যান্য সংস্থার সাথে বেসরকারি সংস্থার চুক্তি বাধ্যতামূলক। ফলতঃ কৃষক দাম কমে যাওয়ার ভবিষ্যৎ ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি পাবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কৃষকের ফসলের মূল্য মেটানো ও কৃষিজ পণ্য তুলে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকবে চুক্তিকারী সংস্থার উপর। যেকোনো রকম বিতর্ক দেখা দিলে, এই বিল অনুযায়ী মহকুমা শাসকের অধীনে গঠিত সালিশি বোর্ড তার মীমাংসা করবে। এই আইনের সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো চুক্তিতে ফসলের একটি অগ্রিম দাম নির্ধারিত করা থাকলেও বাজারের পরিস্থিতি দেখে কৃষক পরবর্তীতে আরও বর্ধিত দাম আদায় করতে পারবেন।
আইনে পরিণত হওয়া বাজার সংক্রান্ত কৃষি বিলটির সৌজন্যে কৃষক তার উৎপাদিত ফসল স্বাধীনভাবে ইচ্ছেমত বিক্রি করতে পারবেন এবং একইসাথে MSP ও চালু থাকবে। কৃষক সমগ্র দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বাজারের সাথে যুক্ত থাকতে পারবেন; কোন নির্দিষ্ট কৃষিমান্ডিতে কৃষিজাত পণ্য বিক্রির বাধ্যবাধকতা আর থাকবে না। যেখানে বাড়তি দাম পাবেন সেখানেই পণ্য বিক্রি করার স্বাধীনতা কৃষকের হাতে থাকবে।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন সংক্রান্ত কৃষি আইনটির আক্ষরিক অর্থ ধরে অপব্যাখ্যা না করে যদি এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যটি গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করা হয় তবে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে ফুড চেইন মার্কেটিং, কোল্ড স্টোরেজের মত পরিকাঠামো তে বেসরকারি বিনিয়োগ, এর দ্বারা উৎসাহিত হবে। বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে; কৃষিপণ্যের অপচয় নিঃসন্দেহে অনেক কমে যাবে। খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে এই বিধি ভবিষ্যতে অনিবার্যভাবে ঐতিহাসিক ভূমিকা নিতে চলেছে।
ভারতীয় কৃষির এই যুগান্তকারী সদর্থক পটপরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক কতিপয় কিছু শকুনদের কুৎসিত ভূমিকা। সস্তা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদগ্র বাসনায় এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামাচ্ছে। প্রকাশ্য রাজপথে ট্রাক্টর জ্বালিয়ে প্রতিবাদের নামে নোংরামিতে শান দেওয়া হচ্ছে। অথচ যারা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বন্ধে খোঁজ রাখেন, তারা বিলক্ষণ জানেন বিগত শতাব্দীর সত্তর-আশির দশকে কৃষক যাতে নিজের জমিতে ট্রাক্টর ব্যবহার করতে না পারেন সেই দাবিতে বামদলগুলোর দেশব্যাপী হিংসাত্মক আন্দোলনের বহর। নিজেদের রাজনীতির স্বার্থে কৃষকের স্বাধীনতার মূল্য এদের কাছে পূর্বেও ছিল না, এখনো নেই। আছে শুধু মিথ্যে লোক ঠকানো ‘ভাত-দে’ আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের চিরাচরিত অপপ্রয়াস। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫, বামেদের সাথে হাত মিলিয়ে কৃষকের ট্রাক্টর ব্যবহারের স্বাধীনতা হরণের হাস্যকর আন্দোলনে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল তৎকালীন কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার। ট্রাক্টর এর উপর ১৫ শতাংশের বেশি এক্সাইজ ডিউটি এবং অন্যান্য ট্যাক্স ও লেভি ইচ্ছাকৃত বাড়িয়ে তাকে মহার্ঘ করে তোলা হয়েছিল যাতে মাঝারি আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন কৃষক ট্রাক্টর কিনতে না পারেন। দেশজুড়ে কৃষক সমাজের থেকে প্রতিবাদ উঠে আসায় বাধ্য হয়ে কেন্দ্র সরকার ১৯৭৬ সালে অত্যন্ত হাস্যকর ভাবে ১২ অশ্ব ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক্টর এর উপর থেকে এক্সাইজ ডিউটি প্রত্যাহার করে নেন। অথচ বাস্তবে প্রায় সমস্ত ট্রাক্টরের ইঞ্জিন ক্ষমতা ২৫ থেকে ৭৫ এইচ.পি এর মধ্যে। ভাবতে অবাক লাগে এক সময় যারা কৃষকদের ট্রাক্টর ব্যবহার করতে দেয়নি, আজ তারা হঠাৎ করে কৃষক দরদী হয়ে উঠেছে।
প্রথিতযশা কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ এম এস স্বামীনাথনের নেতৃত্বে ২০০৪ সালে কৃষির উপর গঠিত যে জাতীয় কমিশনের সুপারিশ গুলিকে কে মূল আকর ধরে এই নতুন কৃষি বিল গুলি আইনে পরিণত হয়েছে, সেই কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বলিষ্ঠ নেতা ও সর্বভারতীয় কিষান সভার সাধারণ সম্পাদক শ্রী অনুপ কুমার অঞ্জন। অর্থাৎ যে সুপারিশ গুলি কে মূল আধার করে এই নতুন কৃষিনীতি রচিত হ’ল, সেই সুপারিশে বামপন্থীদের সর্বভারতীয় কৃষক নেতার সম্মতি ছিল। বিস্মিত হতে হয়, সেই বামপন্থীরাই আজ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। দ্বিচারিতায় পরিপূর্ণ দেউলিয়া রাজনৈতিক স্বার্থে পরিচালিত দেশ বিরোধী এই আন্দোলন-আন্দোলন খেলা বামেদের স্বভাবজাত হয়ে দাড়িয়েছে।
২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক-মুহূর্তে জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক প্রকাশিত নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষির উপর করা অঙ্গীকার গুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেখানে APMC আইন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি সহ বাধামুক্ত কৃষিপণ্যের বাণিজ্য, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন তুলে দেওয়া প্রভৃতির কথা বলা হয়েছিল। অথচ আজ জাতীয় কংগ্রেস তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দেশব্যাপী অপপ্রচার চালিয়ে কৃষকদের ক্ষেপিয়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে।
সর্বভারতীয় প্রেক্ষিত ছেড়ে যদি আমাদের রাজ্যের দিকে চোখ ফেরানো যায়, সেখানেও বাম এবং বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের অপরিসীম দ্বিচারিতা লক্ষনীয়। এরাজ্যে বাম আমলেই Frito-Lay এর হাত ধরে চুক্তি চাষ এর সূচনা হয়েছিল ২০০৩ সালে। মাত্র ১৪০ জন আলু চাষির প্রায় ৭০০ একর জমিতে শুরু হয়েছিল চুক্তিভিত্তিক আলু চাষ। বর্তমানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি কৃষক সাফল্যের সাথে চুক্তিভিত্তিক আলু চাষে নিযুক্ত। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে Frito-Lay এর সাথে চুক্তি ভিত্তিক আলু চাষে যুক্ত কৃষকেরা আলুর দাম কেজি প্রতি পেয়েছেন ৮ টাকা ৪০ পয়সা করে সেখানে অন্যান্য সাধারণ আলু চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পেয়েছেন প্রতি কেজি ৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে প্রায় পাঁচ টাকার ফারাক। ২০০৬ সালে আয়োজিত কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইন্দো-আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স কর্তৃক আয়োজিত একটি সেমিনারে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্যটি একটু শুনে নেওয়া যাক– “Frito-Lay is a success story in West Bengal. When they started their unit in West Bengal we were sceptical. Initially, they were not satisfied with potatoes produced locally and imported them from other states. But now they are helping farmers produce potato which is of better quality than what is grown in Punjab.”
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর, দেবযানী ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাথে একটি সমঝোতা পত্র সই করে। এর ফলে সংস্থাটি কৃষকদের সাথে চুক্তিভিত্তিক চাষে যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট উৎপাদিত কৃষিপণ্য, সমগ্র রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কেএফসি ও পিৎজা হাট গুলিতে সরবরাহ করবে।
এরপরেও নতুন প্রণীত কৃষি আইন, ২০২০ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির এই অনাবশ্যক বিরোধিতা ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোটা দুর্ভাগ্যজনকই শুধু নয় বরং সমগ্র জাতির পক্ষে চরম ক্ষতিকারক নির্লজ্জ দেশ বিরোধিতার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দেশের কৃষক সমাজের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির লক্ষ্যে গৃহীত এই নতুন কৃষি আইনের শুধুমাত্র সস্তা রাজনীতির কারণে বিরোধিতা করা থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিরত থাকুক এই আশা রাখি।