তৃণমূলের কোর কমিটি থেকে ইস্তফা প্রবীর ঘোষালের

বেশ কিছুদিন ধরেই বেসুরো ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূলের হুগলি জেলার কোর কমিটির সদস্য পদ এবং জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র পদ থেকে ইস্তফা দিলেন হুগলি উত্তর পাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তাঁর এই ইস্তফাপত্র দেওয়ার পরেই দলের তরফে তাঁকে পাল্টা শোকজ করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই বেসুরো তিনি। দলের বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন প্রবীর ঘোষাল। এমনকী সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর পুরশুড়ার সভাতেও গরহাজির ছিলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
সেই মতই এদিন দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন প্রবীরবাবু। বলেন, “তৃণমূলে একটা চক্র কাজ করছে, যাতে ভাল লোক দলে থাকতে না পারে।ভেবেছিলাম বিধায়ক পদও ছেড়ে দেবো। মানুষের কথা ভেবে ছাড়ছি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলাম, বলেছি এই সব কথা। উনি বলেছেন অন্য আসনে দাঁড়াতে। আমি এখানের ভূমিপুত্র। অন্য কোথাও দাঁড়াব না”। 
এদিন দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “আমি নিজে মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা পরিস্থিতি জানিয়েছিলাম। উনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমার সামনেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কিছুই হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীরই কথা কেউ শোনেন না”। 
এদিন দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি দুই দলত্যাগী মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর নামে প্রশংসাও করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, “প্রাক্তন বনমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “রাজীব ভাল ছেলে। ভাল কাজ করেছে। এই ভাল লোকেরা দলে থাকতে পারছেন না।” অন্যদিকে প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী সম্পর্কে তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী বড় সংগঠক। মমতার পর ওই তো গ্রহণযোগ্য।” এমনকি, বৈশালী ডালমিয়ার বহিষ্কার নিয়েও দলের ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। সাফ জানিয়েছেন, “বৈশালী ডালমিয়া বহিষ্কারের হওয়ার মতো এমন কিছু কথা বলেননি। উনি আমার মত দলের অসুখের কথাই বলেছেন।”
হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রবীর বাবুর আরও বক্তব্য, ” দলের শুদ্ধিকরণ প্রয়োজন। যদি তা না হয়, তবে দলকে ভুগতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলার পরেও কেন সমস্যার সমাধান হল না তা আমি বলতে পারব না। পার্টির শৃঙ্খলা নিয়ে কিছু বলার নেই। হুগলিতে অন্তর্কলহ বেড়েছে। আরও বেশি ঝগড়া বেড়েছে।” কাকতালীয়ভাবে দেখা গিয়েছে যারা দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের ভোট প্রকৌশলী প্রশান্ত কিশোর এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রবীর ঘোষালও তার অন্যথা নন। এদিন, প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরাশি সাল থেকে আছি। আমার মনে হয় ভাল লোকেরা এভাবে এখানে থাকতে পারবে না। পিকে আসার পর তো হুগলির কোনও উন্নতি হয়নি। দলে অনেক পচামুখ আছে। তাঁদের জন্যই সমস্যা। পচামুখের জন্যই দলের ক্ষতি হচ্ছে। হুগলি জেলায় হারার একটা বড় কারণ এটা। আমার খারাপ লেগেছে যে আমি কাল যেতে পারিনি। তবে এখনই দল ছাড়ার কথা ভাবছি না। গতকালের সভার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সব কাজ করেছি। কোনও ব্যক্তির কুৎসা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না”। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.