বঙ্গে তিন বন্ধু আছে। একজন সাধারণ মানুষ, সে বড় কর্পোরেট অফিসে কাজ করে। মাঝে মাঝে মুম্বাই দিল্লি যেতে হয়। তার টাকা পয়সার অভাব নেই। যখন অফিসের কাজে বাইরে যেতে হয় তখন তো বিমান ভাড়া কোম্পানি দিয়ে থাকে তাই বিমানে ওঠার ব্যাপারটা খুব নর্মাল তার কাছে।
দ্বিতীয় জন চাকরি না পেয়ে এখন মুদির দোকান খুলেছে, ব্যবসা ভালোই চলে। খুব বড় ব্যবসা না হলেও তার বেশ ভালো ভাবেই দিন চলে যায়। বছরে একবার ট্রেনে চেপে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যায়। তবে তার একটা নেশা আছে। সেটা হল, দেশ ভক্তির নেশা ,তার সাথে সে আবার হিন্দুত্ববাদী। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধু সার্কেলে সে এখন গেরুয়া বলে পরিচিত।
শেষ জন হল, আধুনিক মানুষ। সে রাতে ঘুমের জন্য একটা 30ml গলাতে না ঢাললে খুব অস্থির হয়ে ওঠে। শনি রবি ছুটির দিন একটি গঞ্জিকা সেবন করে। আসলে সে একজন সরকারি চাকুরে। বাড়িতে সরকারি গাড়ি আসে তাকে নিতে। বুঝতেই পারছেন সমাজে দাদার একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে।
মজার বিষয় হল, তৃতীয় বন্ধু খুব পুঁজিবাদী বিরোধী। সে সব কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত করে দেবার পক্ষে। তবে দাদা কিন্তু চোখের সমস্যা হলে, বেসরকারি হসপিটালে যায়। সেখানে বিদেশি কোম্পানির ফ্রেম কিনে আনে। রাতে 30ml কিন্তু ইংরেজি ছাড়া খেতে পছন্দ করে না। তারপর ধরুন, শহরের বাইরে যেতে হলে ভলভো চেপে যাতায়াত করেন। আবার, পুঁজিবাদী কোম্পানির বিরোধী হলেও দাদা মাসের শেষে ছেলে মেয়ে বউ নিয়ে কেএফসি গিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন, “happy family”….
আরো মজার বিষয় হল বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা বন্ধু বিদেশি ঘড়ি গিফট করলে হেব্বি খুশি হন।
এতদূর সব ঠিক ছিল। তাল কেটে গেল, বিমানের দুটো টিকিট দেখে। কলকাতা থেকে দুবাই। একটা সেই বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করা বন্ধুর, আরেকটা হল জয় শ্রী রাম বলা গরিব “মুদির দোকানদার”….
এটা কেমন হল?
আসলে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা বন্ধুর অফিসের কাজে দুবাই যাওয়ার ছিল, তো তার মনে হল আমার যে বন্ধু ব্যবসা করে তাকে যদি নিয়ে যায় তাহলে সাথেও একজন থাকবে তার সাথে বিদেশের ব্যবসা নিয়েও তার আইডিয়া হবে। ফিরে এসে সেইসব আইডিয়া নিজের ব্যবসার কাজে লাগতেও পারবে। আর যতই হোক স্কুলের বন্ধু। ওর বিমানে চড়ে ঘোরাটাও হবে।
কিন্তু আধুনিক, প্রগতিশীল বন্ধুর সেটা সহ্য হল না। ঐ ব্যাটা অশিক্ষিত ছেলেটা যদি এবার ব্যবসা আরো বাড়িয়ে নিয়ে 3 তলা বাড়ি তৈরি করে তাহলে সরকারি বাবুর সন্মান তো যাবে। কারণ এতদিন ওই মুদির দোকান করা বন্ধুর পরিচয় দিত একজন অশিক্ষিত বলে। কিছু করতেও পারবেনা বলে সবাইকে বলত।
তাহলে ওর বদনাম করার উপায়?
রটিয়ে দিল “আসলে মুদির দোকান করে, ছেলেটা লোক ঠকিয়ে এত কমিয়েছে যে আজ ও বিদেশ যাচ্ছে। ব্যবসা মানেই লোক ঠকানো।” । তার সাথে জুড়ে দিল, নিজেকে গরিব বলা ব্যাবসায়ী কি করে এত খরচ করে বিদেশ যেতে পারে? দেখুন কত বড় মিথ্যাবাদী। গরিব মানুষের টাকা গুলো ব্যবসার নামে আত্মসাৎ করে বিদেশ যাচ্ছে ফুর্তি করতে।…..
এবার একটা বাচ্চা ছেলে দিল RTI করে, ব্যাস। সেই ব্যবসায়ীর বিদেশ যাত্রার ডিটেল এখন সবার সামনে। সবাই আসল সত্য জেনে গেছে।
সেই RTI করা বাচ্চা ছেলে বলে উঠল ” কাকা আমার দাদুর পেনশন এর কাগজ ঠিক করতে আপনি নাকি টেবিলের নীচে হাত পেতে দিতেন?”….. সরকারি বাবু , হাজার চেষ্টা করল মুদির দোকানের মালিক কতটা অসৎ প্রমাণ করতে। কিন্তু বাচ্চা ছেলেটার সাহস দেখে আসে পাশের লোকজন সাহস করে এগিয়ে এসে 34 বছর ধরে চাকরি করা গর্বিত বাবুকে চেপে ধরল।দুঃখের বিষয় বাবুর এখন পরিবারের 7 জন ছাড়া পাশে আর কেও নেই সমর্থন করার জন্য!
অতনু লাহা