বাংলায় ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই নজর ছিল বিজেপির (BJP) প্রার্থী তালিকার দিকে। অবশেষ সেই প্রতিক্ষার অবসান ঘটল শনিবার। দিল্লির বিজেপি সদর দপ্তর থেকে ঘোষিত হল প্রার্থী তালিকা। প্রথম দুই দফার মোট ৫৬ আসনে প্রার্থী দিল বিজেপি। বিজেপির আদি সদস্যরা নাকি অন্য দল থেকে আসা নেতা-কর্মী, কাদের পাল্লা ভারী হল এই দফায়?
কেউ কেউ আশা করেছিলেন, তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে আসা নেতা-কর্মীরাই জায়গা করে নেবেন প্রার্থী তালিকায়। দলের পুরনো কর্মীরাও কিছুটা হতদ্যোম হয়ে পড়েছিলেন। প্রার্থী বাছাইয়ের পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। ফলে ‘অতি সাবধানে’ প্রার্থী বাছাই করতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে!
এই পরিস্থিতিতে গোটা জঙ্গলমহল অর্থাৎ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশ, পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার চারটি বিধানসভা আসনের প্রার্থী ঘোষণা করল বিজেপি। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, বিজেপির বাংলা দখলের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই আসনগুলি। বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, এই দফার প্রার্থী তালিকায় দল বদল করা নেতাদের তুলনায় গুরুত্ব পেয়েছেন বিজেপির পুরনো নেতারা।
যেমন পুরুলিয়ার ৯টি আসনের মধ্যে দু’টি বাদে বাকি বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে লড়াই করছেন বিজেপির পুরনো সদস্যরাই। শুধুমাত্র পুরুলিয়া এবং জয়পুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীরা যথাক্রমে তৃণমূল এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের সদস্য ছিলেন। পুরুলিয়ার সুদীপ মুখোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে এসেছেন। প্রায় একই ছবি বাঁকুড়াতেও। এই জেলার ১২টি আসনের মধ্যে তালডাংরা এবং শালতোড়ার বিজেপি প্রার্থীরা তৃণমূলের সদস্য ছিলেন। এই জেলার বাকি ৯টি আসনে বিজেপির পুরনো সদস্যরাই টিকিট পেয়েছেন।ঝাড়গ্রামের চারটি আসনেই লড়ছেন বিজেপির পুরনো সদস্যরা।
রাজনৈতিক মহলের নজর ছিল দুই মেদিনীপুরে। পূর্ব মেদিনীপুরের ‘হাইভোল্টেজ’ নন্দীগ্রামে প্রত্যাশামতোই প্রার্থী হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। হলদিয়া, কাঁথি দক্ষিণ ও উত্তর, রামনগর ছাড়া বাকি আসনে প্রার্থী রয়েছেন বিজেপির আদিরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে চন্দ্রকোণা ছাড়া বাকি আসনে আদি বিজেপির প্রার্থীরাই লড়াই করছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার চারটি আসনের মধ্যে একমাত্র গোসাবা আসনেই তৃণমূল থেকে আসা সদস্য লড়াই করছেন।
এই প্রার্থী তালিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের কথায়, তৃণমূল বা অন্যান্য দল থেকে আসা সদস্যদের টিকিট দিলে বেজায় বিপাকে পড়তে হত গেরুয়া নেতৃত্বকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হত তারা। ঠিক যেমনটা হল পুরুলিয়ায় জয়পুর কেন্দ্রে। ফরোয়ার্ড ব্লকের নরহরি মাহাতোকে প্রার্থী করার পরই দলের অন্দরের অসন্তোষের খবর সামনে আসছে । তবে প্রশ্ন উঠছে অন্য দল থেকে আসা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিয়ে। প্রার্থী পদ না পেয়ে তাঁরা কি আদও গেরুয়া শিবিরের হয়ে কাজ করবে? সময়ই উত্তর দেবে এই প্রশ্নের।