রাজভবনের সামনে উপর্যুপরি দু’দিন বিক্ষোভের জেরে স্থানীয় থানার নিচুতলার এক পুলিশকর্মীকে হালকা সাজা দিয়ে দায় সারলেন কর্তৃপক্ষ। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পুলিশের একাংশে। রাজভবনের ফাঁড়ির কোনও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু পদোন্নতি হয়েছে ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আইসি-র।
গত ১৭ মে নারদ মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী, এক বিধায়ক সহ চারজন। এর পরই সিবিআইয়ের দফতর নিজাম প্যালেসের সামনে তৃণমূলের ক্ষোভের ঝড় আছড়ে পড়ে। সেই ক্ষোভের আঁচ দেখা গিয়েছিল রাজভবনের সামনেও। পরদিন রাজভবনের সামনে ভেড়ার পাল নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থক বর্ণিত কিছু যুবক। গত বুধবার তা নিয়েই সরব হন খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। টুইট করেও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি গোটা ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে থেকে রিপোর্ট তলব করেন খোদ রাজ্যপাল।
রাজ্যপাল উল্লেখ করেছেন, রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে সেদিন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছিল। সেদিন পুলিশের সামনেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশ বাহিনীর সামনেই ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলে এই লুম্পনেদের তথাকথিত প্রতিবাদ। তারা রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে নানা ধরণের স্লোগান তোলেন, যেটা মর্যাদাহানিকর। দীর্ঘক্ষণ তারা নর্থ গেট আটকে রাখে। রাজভবনের মতো হাই সিকিউরিটি জোনে এই ঘটনায় রাজ্যপাল ও তার পরিবারের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারত। এই ঘটনার সময় পদস্থ পুলিশ কর্তারা কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। রাজভবনের চারপাশ ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও এইভাবে জমায়েত হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কলকাতা পুলিশ কমিশনারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে রাজভবনে দেখা করতে বলেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের ১৯ মে-র ওই কড়া বার্তার পর বৃহস্পতিবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় লালবাজারের কর্তারা ডায়েরি রুজুর নির্দেশ দেন। আর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? বুধবার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে জানান, রাজভবনের আউটপোস্টের (ফাঁড়ি) কাউকে গ্রেফতার করার এক্তিয়ার নেই। এই এক্তিয়ার রয়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানার। বিক্ষোভের খবর ফাঁড়ি থেকে তৎক্ষণাৎ ওই থানায় জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) যুগ্ম কমিশনার হেয়ার স্ট্রিট থানার ডিও এবং এডিও-কে লর্ড সিনহা রোডে এসবি অফিসে ডেকে পাঠান। ডিও-কে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হলেও এডিও-কে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাঁর সার্ভিস বুকেও এটির উল্লেখ থাকবে।
প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যপালের প্রকাশ্য ক্ষোভের পরেও কেন রাজভবনের ফাঁড়ির কারও সাজা হলনা? সূত্রের খবর, ঘটনার দু’দিন ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন মহম্মদ সুকুর আলি সর্দার নামে এক ইন্সপেক্টর। তিনি সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে যোগ দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের পঞ্চম ব্যাটেলিয়ানের সহকারী কমিশনার হিসাবে। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর গাড়ির চালক রুহিদাস ওরাংকেও।
রাজভবনে মোট চারটি ফটক থাকলেও যাতায়তের জন্য ব্যবহৃত হয় নর্থ গেট। বাকি তিনটি ফটকের জন্য প্রতিদিন তিন শিফটে পুলিশ পাঠানো হয় কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স থেকে। প্রতি শিফটে থাকেন প্রায় ১৬ জন পুলিশকর্মী। নর্থ গেটের ফাঁড়ির জন্য মোট বরাদ্দ ২৭ জন পুলিশকর্মী। এঁদের ২ জন ইন্সপেক্টর, ৪ জন সাব ইন্সপেক্টর, ৪ জন এএসআই, ১২ জন কন্সটেবল এবং ২ জন (এক জন মহিলা সহ) গ্রিন পুলিশ। সূত্রের খবর, আপাতত আইসি-র পদ ফাঁকা হওয়ায় দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত ওসি। অর্থাৎ, তৃণমূলের বিক্ষোভের পর রাজভবনের পুলিশি ব্যবস্থা বাড়েনি, বরং কমেছে।
রাজভবনের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ, এ নিয়ে রাজ্যপালের চিঠির পরেও কেন সিআই-এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উলটে পদোন্নতি দেওয়া হল, কেন ফাঁড়ির সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হলনা— এ সব প্রশ্ন উঠেছে ওই ফাঁড়ির পুলিশকর্মীদের মধ্যেই। যদিও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করতে চাননি।
2021-05-27