বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতি। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে সোমবার সকালে উদ্ধার হয়েছে গত বছর বিজেপিতে যোগ দেওয়া সিপিএম বিধায়কের ঝুলন্ত মৃতদেহ। যে ভাবে গলার পাশাপাশি একটি হাতও দড়িতে বাঁধা অবস্থায় ঝুলছিল মুখের সামনে থেকে, সেই ভিডিয়ো দেখিয়ে বিজেপি তোপ দাগতে শুরু করেছে। দেবেন্দ্রনাথ রায়কে খুন করে ঝুলিয়ে দেওযা হয়েছে, যাতে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়— এই দাবি বিজেপির রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত সব নেতার। বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে প্রায় গোটা উত্তর দিনাজপুর জেলা। বিজেপি ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলতে শুরু করেছে।
দেবেন্দ্রনাথ রায়ের পরিবারের দাবি, রবিবার রাত একটা নাগাদ কয়েক জন বাইক আরোহী তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। তার পরই আজ সকালে তাঁর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি বন্ধ দোকানের বারান্দার সামনে থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে হেমতাবাদ কেন্দ্র থেকে সিপিএমের টিকিটে জিতেছিলেন দেবেন্দ্রবাবু। ২০১৯-এ তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। তাঁর মৃত্যু নিয়ে তদন্তে নেমেছে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ঝুলন্ত বিধায়কের পকেটে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে।
বিধায়কের দেহ উদ্ধার হতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ টুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক শ্রী দেবেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়ির কাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। ২০১৯-এর নির্বাচনের সময় তিনি দলে যোগ দেন। স্থানীয়রা বলছেন, তাঁকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। মমতা সরকারের গুণ্ডারাজে আরও এক নৃশংস হত্যা।
দেবেন্দ্রবাবুকে খুন করা হয়েছে দাবি করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে দুষেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা নিশ্চিত যে, উনি খুন হয়েছেন। এবং পরিচিত লোকের দ্বারাই খুন হয়েছেন। পরিচিত লোক না হলে কেউ রাত একটায় বেরবেন না। এক জন বিধায়কের সুরক্ষা যদি এই হয়, তাঁকে যদি বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার কী অবস্থা বুঝতেই পারছেন। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটছে। তার চূড়ান্ত হল দেবেন্দ্রনাথের হত্যা। খুবই নিন্দনীয়। এতে মানুষের মনের মধ্যে ভয় আসছে— বিধায়ককে যদি খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষকে কে দেখবেন? এই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল যুবনেতার নামও উঠে আসছে। আমরা চাই, এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক, দরকারে কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে তদন্ত হোক। না হলে আইনশৃঙ্খলার উপর মানুষের ভরসা থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুলিশমন্ত্রী। পুলিশের কাজ কেবল বিরোধীদের আটকানো, আর চোর-গুণ্ডারা ঘুরে বেড়াচ্ছে ও এ ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে। এটা খুব চিন্তাজনক।’’ বিধায়ক মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ বিকাল সাড়ে তিনটের সময় মিছিল করবে বিজেপি। সদর দফতর থেকে সর্দার পটেলের মূর্তি পর্যন্ত সেই মিছিলে যোগ নেতৃত্ব দেবেন দিলীপ ঘোষ। সঙ্গে থাকবেন দলের রাজ্য নেতৃত্বও। সূত্রের খবর, ওই মিছিল থেকে বনধের ডাক দেওয়া হতে পারে।
বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুকে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক বলেছেন। মমতা সরকারকে আক্রমণ করে তিনি টুইটে জানিয়েছেন, ‘‘মমতা সরকারের আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা ও গুণ্ডারাজকে ফের প্রমাণ করল এই নৃশংস হত্যা। জনতা এই সরকারকে ভবিষ্যতে ক্ষমা করবে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।’’ ঘটনার নিন্দা করে টুইট করেছেন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ও। তিনি লিখেছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লেখার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বেশি কিছু লিখতেও চাই না। এর উত্তর আমরা মানুষেকে সঙ্গে নিয়ে দেব। শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’
দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যু নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, বলেছেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে আজ হত্যা করা হয়েছে। যে ভাবে তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, পরিকল্পনা মাফিক খুন করে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর এক ষড়যন্ত্র। আমরা মনে করি, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগসাজশ জড়িত। উত্তর দিনাজপুরে যে ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতি জনমত সংগঠিত হচ্ছে, তা দেখে ভীত তৃণমূল কংগ্রেস এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা চাইছি, এই হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্তের আদেশ দেওয়া হোক। হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর যে ষড়যন্ত্র, আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি। অবিলম্বে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
হেমতাবাদের বিধায়কের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সোমবার সকালে করা টুইটে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘রাজ্য রাজনৈতিক হিংসা কমার কোনও লক্ষণই নেই। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ উঠছে। রাজনৈতিক হিংসা থামাতে ও সত্য সামনে আনতে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন।’’