সিপিএমের কৃষক সভা অস্তমিত, নদীয়া জেলায় সংগঠন বাড়াচ্ছে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ

১০ ই অক্টোবর, কল্যাণী। ২০১১ সালে সিপিএমের রাজ্যপাট গেছে, সেই সঙ্গে তাদের কৃষক সংগঠনও ধীরে ধীরে অস্তাচলে। আর তারই জায়গায় ক্রমশ সংগঠন বাড়িয়ে নিচ্ছে অরাজনৈতিক কৃষক সংগঠন ‘ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ’।

কৃষিতে নদীয়া জেলার গুরুত্বই আলাদা, কারণ এখানেই রয়েছে রাজ্যের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাণীসম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাসও নদীয়া জেলায় রয়েছে, রয়েছে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। নবগঠিত পলল মৃত্তিকার কারণে এই জেলা, কৃষি ক্ষেত্রের এক উজ্জ্বল ঝুড়ি। কৃষককে রাজনৈতিক পথে না টেনে অরাজনৈতিক পথে এক সামগ্রিক আন্দোলনে সামিল করতে চায় সর্ব ভারতীয় কৃষক সংগঠন ‘ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ’। সম্প্রতি এই জেলায় নতুনভাবে চাঙ্গা হয়েছে সংগঠনটি।

১০ ই অক্টোবর সংগঠনের নদিয়া জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ‘কৃষি আইন (২০২০) -পশ্চিমবঙ্গের কৃষকের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে একটি আলোচনা সভা’র আয়োজন করা হয়েছিল নদীয়ার কল্যাণীর সয়ম্বর হলে। সভাপতিত্ব করেন ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সংগঠন সম্পাদক শ্রী অনিল চন্দ্র রায় মহাশয়। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মানবেন্দ্র রায় (বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), ড. অরবিন্দ মিত্র (প্রাক্তন অধ্যাপক, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি অর্থনীতিবিদ্), বিশিষ্ট শিক্ষা ও পরিবেশবিদ ড. মোহিত রায় এবং অধ্যাপক ড. চিত্তরঞ্জন মন্ডল মহাশয় (প্রাক্তন অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)। সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘কৃষি আইন(২০২০)’ নিয়ে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের মতামত প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সংগঠন সম্পাদক শ্রী অনিল চন্দ্র রায় জানান যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তারা চারটি দাবি রেখেছেন-
১) সমস্ত কৃষি পণ্য থেকে কমপক্ষে সমর্থন মূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা চাই।
২) ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের রাজ্য ও কেন্দ্রস্তরে তালিকাভুক্ত করা প্রয়োজন, সেই ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্ক সিকিউরিটি থাকা প্রয়োজন, সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সকলে যেন সেই তালিকা পেতে পারেন।
৩) এই বিষয়ে সমস্ত বিবাদের মীমাংসার জন্য স্বতন্ত্র ন্যায়ালয়ের ব্যবস্থা করা হোক এবং সমস্ত বিবাদের মীমাংসা কৃষক তার নিজের জেলাতেই যাতে পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হোক।
৪) এই আইনে কর্পোরেট কোম্পানিও কিষাণের পরিভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিতর্কের মাধ্যমে যারা কেবল কৃষির উপর নির্ভরশীল তাদেরকেই কিষানের পরিভাষার মধ্যে যাতে আনা যায় — তার ব্যবস্থা করা হোক।

অনিল বাবু আরও জানান যে ‘ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ’ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে এক বছর সময় দিচ্ছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাবেন। এই ‘আলোচনা সভা’তে আরও উপস্থিত ছিলেন নদিয়া জেলা সম্পাদক মিলন খামারিয়া ও সহ সভাপতি সুশান্ত মজুমদার মহাশয়। সমগ্র অনুষ্ঠানের ‘সঞ্চালনা ও সঙ্গীত পরিবেশনা’য় ছিলেন বিশিষ্ট বেতার শিল্পী এবং ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের কল্যাণী নগর খণ্ডের সভানেত্রী শ্রীমতী সঙ্ঘমিত্রা মিশ্র। করোনা পরিস্থিতিতে যথাযথ সতর্কতা ও দূরত্ব বজায় রেখে এই সভা আয়োজিত হয়েছিল৷ কার্যক্রমের সফলতার বার্তা ছড়িয়ে পড়তে রাজ্যব্যাপী সঙ্ঘের কৃষি সংগঠকদের মধ্যে বিশেষ উদ্দীপনা দেখা দেয়। বহু মানুষ ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের সদস্য হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। এই সংগঠনের প্রতি শহুরে মানুষের আস্থাও ক্রমাগত বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.