বামফ্রন্ট আমলে দুর্নীতি তৃণমূলের আমলের থেকে কিছু কম ছিল না, সাংগঠনিক দক্ষতা ও বিরোধী শক্তির দুর্বলতায় তা ধামা চাপা দিয়ে দিতে পারতো সিপিএম।
সেই আমলে জ্যোতি বসু তার ছেলেকে(আটের দশকে) ৩০০ কোটি টাকার শিল্পপতি করে ফেলেছিল, বিরোধী না থাকলেও বামফ্রন্টেরই কিছু সত মানুষ আওয়াজ তুলেছিলেন, তখন এখনকার মতো নিউজ মিডিয়া ছিলনা , সম্বল শুধু আনন্দবাজার, বর্তমান , আজকাল , যুগান্তর, ইংরেজি স্টেটসম্যান বা টেলিগ্রাফ্ ইত্যাদি প্রিন্ট মিডিয়া, তখন ঘরে বসে টিভিতে সরাসারি ঘটনা দেখার সুযোগ ছিল না।
তবু যতীন চক্রবর্তীর ঘটনা সাড়া ফেলেছিল, বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারি যাতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন জ্যোতি পুত্র চন্দন, তার সংস্থাকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেবার প্রতিবাদ করেন বামফ্রন্টের মন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী , যতীন চক্রবর্তীর সাথে ঠিক কি হয়েছিল তা আজ আর সম্পূর্ণ জানা সম্ভব নয়, তবে এর পরিণতি তার পক্ষে যে সুখের হয়নি সে কথা সর্বজনবিদিত। শোনা যায় ডাকাতের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হন তার মেয়েও, সে রহস্যের পর্দা কোনোও দিনই উঠবে না বহু বিদ্রোহী ট্রেড ইউনিয়ন নেতা যেমন সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে লরি চাপা পরে মরে গেছেন , তেমনই এও চাপা পড়েই থাকবে।
আলিমুদ্দিনে বসতেন সর্বক্ষনের সিপিআই(এম) কর্মী সুশীল রায়চৌধুরী। সুশীলবাবু যখন খুন হন, তখন তাঁর বয়স ৭৫৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে দলের টাকাপয়সার হিসেব রাখতেন তিনি৷ অত্যন্ত সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত অজাতশত্রু সুশীলবাবু এক রাতে ইএম বাইপাসের উপর চিংড়িঘাটায় বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে নৃশংস ভাবে খুন হন৷ খালের ধারে তাঁর দেহ মেলে৷ কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁকে খুন করল, সে রহস্য এখনও ভেদ হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু, পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ অভিযোগ ওঠে, কিছু নেতা পার্টির টাকা নয়ছয় করায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অকুতোভয় সুশীলবাবু৷ তাই রাতারাতি ‘পথের কাঁটা’ উপড়ে ফেলা হয়৷
বুদ্ধদেববাবু বিধানসভায় দাঁড়িয়েই দু’-দু’বার ঘোষণা করেছিলেন, সুশীলবাবুর খুনিরা ধরা পড়বেই৷ কিন্তু খুনিরা ধরা পড়েনি৷ ওই খুনের নেপথ্যে বিরোধীদের হাত আছে, এমন অভিযোগও সিপিএম কখনত্ত তোলেনি৷ দলের নেতা-কর্মী খুনের ঘটনায় অনেক সময়েই পার্টি কমিশন বসায়৷ সুশীলবাবুর ক্ষেত্রে তা-ও হয়নি৷ বস্তুত , অজ্ঞাত পরিচিত ব্যক্তি খুনের মতোই রাজ্য সিপিএমের এই কোষাধ্যক্ষের হত্যারহস্য ধামাচাপা দেওয়া হয়৷
সুশীলবাবু খুনের বিষয়ে প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি প্রাক্তন আইপিএস রচপাল সিং বলেন, ‘সুশীলবাবুর খুনের তদন্ত করতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম৷ পর দিনই আমাকে রেলে বদলি করে দেওয়া হয়৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন পুলিশমন্ত্রী৷ উনি আমায় ডেকে ধমকেছিলেন৷’।
চুরি বিদ্যা বড়ো বিদ্যা , যদি না পড়ো ধরা, সিপিএম এই সত্যিটা ভালো বুঝেছিল। আজও এইপ্রজন্মের যা গুটি চারেক সিপিএম আছে , কেউতো জেলে যায়নি, প্রমাণ দিন ইত্যাদি বলে এড়েতর্ক করে।
তবু নয়ের দশকের মাঝামাঝি এলসিএস শব্দটা বিশ্রী খিস্তির মতো প্রতিভাত হতে থাকে জনমানসে, মানুষকে আর ভুল বোঝানো সম্ভব ছিল না।
বিমান বোসের বান্ধবী অধ্যাপিকা মনীষা মুখার্জী কিন্তু নিরুদ্দেশ, তিন দশকেরও বেশী সময় পার হয়ে গেছে তার জীবিত থাকার আশা বড়োই ক্ষীণ ।
বামফ্রন্টের শেষবেলায় বড়ো কীর্তি রেশন কেলেঙ্কারি, এটি হয়তো অনেকেরই মনে আছে, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া , পুরুলিয়া ও বীরভূম জেলার গ্রামাঞ্চলে গণরোষে অনেক ডিলারের দোকান ভাঙচুর শুরু হয় নয়ের দশকের শেষে, এই দুর্নীতিগ্রস্ত ডিলাররা ছিলেন সিপাআইএম মদতপুষ্ট , তাদের নেতা কর্মী সমর্থক ।
বামফ্রন্টের সবচেয়ে বেশী পাপ শ্রমিক শোষণ ট্রেড ইউনিয়নের নামে মালিকের দালালি করে কতো নেতা ধনী হয়েছেন তা বাংলার মানুষ জানে। প্রমাণ নেই, প্রমাণ নেই বলে চেঁচিয়ে লাভ নেই সেটি আজও অবশিষ্ট সিপিএমরা বোঝেনা।
আজ যে এত হম্বিতম্বি করছে মহঃ সেলিম সেই হিন্দমোটর কারখানার জমি শ্রীরাম গ্রুপের কাছে সস্তায় বেচে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। ২০১১ পর্যন্ত ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পুরো একটা তলা নিয়ে বিনা ভাড়ায় বাস করেছেন এই সেলিম, বিদ্যুৎ মাশুলও ছিল ফ্রী। এটাও দুর্নীতি ।
তৃণমূলের দুর্নীতি ধরা পড়ে যায়, তৃণমূল বেড়াল গায়ে মুখে মেখে দুধ খায়, আর সিপিএম বিল্লি খেত স্ট্র দিয়ে, এটাই তফাৎ ।
এছাড়া আর কোনও তফাৎ ছিলনা,তফাৎ নেই, আর ভবিষ্যতে যদি আদৌ সিপিএম টিঁকে থাকেও কোনো তফাৎ থাকবেও না।