অসমের ভৌগোলিক অবস্থান, কৃষ্টি-সংস্কৃতি সভ্যতা অক্ষুণ্ণ রেখেই নাগরিকত্ব : রাজনাথ সিং

অসমের ভৌগোলিক অবস্থান রক্ষা করে, কৃষ্টি সংস্কৃতি ও সভ্যতা অক্ষুণ্ণ রেখে নাগরিকত্ব দিতে অসুবিধা নেই। অসমের মানচিত্র, কৃষ্টি সংস্কৃতি ও সভ্যতা অক্ষুন্ন রাখতে বিজেপি সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নাগরিকত্ব আইনের অধীনে যারা নাগরিকত্ব পাবে তাঁদের বোঝা কেবল অসম বহন করবে না, দেশের অন্য রাজ্যকেও এই বোঝা বহন করতে হবে। আজ মঙ্গলবার মধ্য অসমের হোজাইয়ে বিশাল নির্বাচনি সমাবেশে এ-কথাগুলি বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। 
রাজনাথ বলেন, অসমে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হলে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীরা রাজ্যের ভৌগোলিক মানচিত্র, কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ভাষার বিপদ ডেকে আনবে বলে ভুল বার্তা ছড়িয়ে একাংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং রাষ্ট্রদ্রোহী মানুষকে বিপথে পরিচালিত করছে। এনআরসি সম্পর্কেও ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষের মধ্যে একাংশ বিরোধী নেতা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল বলে হোজাই জেলার বিহুতলির সর্বজনীন ময়দানে বিজেপি প্রার্থী রামকৃষ্ণ ঘোষের সমর্থনে বিশাল জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দিতে গিতে গেয়ে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এই মন্তব্য করেন। 
প্রদত্ত ভাষণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, বিজেপি সমাজের সমস্ত শ্রেণির উন্নয়নের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে। বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা পালন করে। বিজেপির কথা আর কাজের মধ্যে পার্থক্য নেই। রাজনীতি কেবল ক্ষমতা আর নিজের লাভের জন্যই নয়। রাজনীতি সমাজের উন্নয়নের জন্য করতে হয়। রাজনীতি মানে শুধুই কথা নয়, কথা আর কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা চাই। এই বিষয়টি গতবারের ইস্তাহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালন করে দেখিয়েছে সনোয়াল সরকার। 
বিজেপি সরকার দেশে এক আইন, এক সংবিধান প্রবর্তন করে জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধরা প্রত্যাহার করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। গোটা দেশ তথা বিশ্ব তা দেখেছে। জম্মু কাশ্মীরে বলবৎ ৩৭০ ধারা বাতিল করে সমস্ত দেশে এক আইন এক নিশানের প্রবর্তন করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। অসমে বিজেপির সর্বানন্দ সনোয়াল সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে রাজনাথ বলেন, অসমে কংগ্রেসের আমলে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল যদিও, সেই উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করেছে সর্বানন্দ সনোয়াল সরকার। 
এদিকে হোজাইয়ের বিশাল নির্বাচনি সভায় অংশগ্রহণ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং অসমিয়া ভাষায় রাজ্যবাসীকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে তাঁর ভাষণ শুরু করেন। তিনি উপস্থিত জনতাকে ‘ভাল আছে নেকি’ বলে সকলের কুশল-সমাচার জানতে চেয়েছেন। হোজাই জেলার অন্তর্গত লামডিঙের নির্বাচনি সমাবেশে অংশগ্রহণ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং আসেন হোজাই।
এখানে সর্বজনীন বিহুতলি ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে অসমকে পবিত্র রাজ্য বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রাজ্য মা কামাখ্যা, ব্রহ্মপুত্রের রাজ্য। এই রাজ্যের সাথে অন্য কোনও রাজ্যের তুলনা হয় না। এখানে অনেকে মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। শ্রীমন্ত শংকরদেবকে স্মরণ করে তিনি বলেন, অসমিয়া ভাষা, সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট কাজ করছে। ভূপেন হাজরিকা শুধু অসমের সম্পদ ছিলেন না, তিনি ভারতের সম্পদ। ভারতের সংগীতসম্রাটকে ভারতরত্ন বিজেপি সরকার দিয়েছে। ভূপেন হাজরিকাকে সম্মান করা মানে অসমের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে সম্মান করা। 
রাজনাথ বলেন, সর্বানন্দ সনোয়াল পাঁচ বছরে তিন লক্ষ ৩৫ হাজার ভূমিহীনকে ভূমির পাট্টা দিয়েছে। আগামী দিনেও যাঁরা ভূমিহীন রয়েছেন তাঁদেরও ভূমি পাট্টা দেওয়া হবে। বলেন, বিজেপির নির্বাচনি ইস্তাহারে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রাজনাথ সিং বলেন, কংগ্রেস সত্তর বছরে মাত্র ৩৫ হাজার মানুষকে ভূমির পাট্টা দিয়েছিল। 
প্রতিরক্ষা বলেন, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি কেউ গড়েছে, তা-হলে তা করেছে সনোয়াল সরকার। অসম মালা, মনরেগা, কনকলতা মহিলা সবলীকরণ, উজ্জ্বলা প্রকল্প ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা সম্ভব কেবল বিজেপি সরকারের জন্যই। 
অসমে পুনরায় বিজেপি সরকার হলে অরুণোদয় প্রকল্পের ৮৩০ টাকার পরিবর্তে ৩,০০০ টাকা, দুই লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীদের সরকারি চাকরি, পাঁচ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি কর্মসংস্থাপন করা হবে। সরকারি বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে শিক্ষা, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাইকেল প্রদান ইত্যাদি নানা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন রাজনাথ। এছাড়া দুরন্ত দৌড়বিদ হিমা দাস যেভাবে দৌড়েন, ঠিক সেই বেগে বিজেপি সরকার দৌড়বে বলে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেন। 
ভারত এখন দুর্বল দেশ নয়। ভারতীয় সেনা এখন সমস্ত ক্ষেত্রে সক্ষম এবং এর প্রমাণ অসমের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের আমলে রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান ঘটানো হয়েছে। সে-সময় মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে অসমে রাজনাথ সিং নিয়ে এসেছিলেন এসেছিলেন আর তার অল্প সময়ের ভিতরেই সেনাবাহিনীর যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তার ফলে অসমের থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়েছিল। 
বর্তমানে মোদী সরকারের নেতৃত্বে দেশের সেনা এতই শক্তিশালী হয়েছে যে কোন শত্রু ই দেশের দেশের কোন ক্ষতি করতে পারবে না বলে তিনি বলেন যে দেশের সীমান্ত অঞ্চলে বিজেপি সরকার থাকার জন্যই দেশে অনুপ্রবেশকারী দেশের ভিতরে ঢুকতে সাহস করে না । প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার আসবেই আর অসমে দ্বিতীয়বারের জন্য বিজেপি সরকার আসবে। 
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহিলাদের কষ্ট বুঝতে পেরে বিনামূল্যে গ্যাসের সংযোগ দিয়েছেন। আর অসমে ৩৫ লক্ষ মহিলা এই সুবিধা পেতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি বছর কিষাণ সম্মান নিধি ৬,০০০ টাকা সহ অন্যান্য প্রকল্প প্রদান করা হয়েছে। কংগ্রেসের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নিজেই বলেছিলেন, দিল্লি থেকে ১০০ টাকা পাঠালে অসমে পৌঁছত ১৫ টাকা। 
কংগ্রেসের শাসনকালে দুর্নীতির ফলে টাকা জনসাধারণ নয়, কংগ্রেসের দালালদের পকেটে ঢুকেছিল। বিজেপি সরকার সেই দালালরাজ দূর করার জন্য অসম সহ গোটা দেশের সুবিধাভোগীরা যাতে তাঁদের প্রাপ্য টাকা সম্পূর্ণ পান এর প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকলকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। এর ফলে জনধন যোজনা প্রকল্প সহ অন্য প্রকল্পের টাকা সরাসরি দেশের জনতা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাচ্ছেন। এতে দিল্লি থেকে এখন ১০০ টাকা দিলে ১০০ টাকাই পেতে সক্ষম হচ্ছেন জনসাধারণ। 
তিনি বলেন, অসমের চা পৃথিবী বিখ্যাত। এই চা নিয়ে কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির নাটক করছে। চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের উন্নতির কথা না বলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মতো কংগ্রেস নেত্রী নাটক করে রাজনৈতিক লাভের পথ খুঁজছেন বলে সমালোচনা করেন রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, অসমের চায়ের কথা মোদী জানেন। প্রকৃত পক্ষে চা বানানো আর চায়ের ব্যবসায়ী যদি হয় তা-হলে চা-ওয়ালা দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষেই তা সম্ভব। 
অসমের ধুবড়ির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উন্নত টেকনোলজি দ্বারা ফেন্সিং গড়ে তোলায় রাজ্য আজ সুরক্ষিত। অসমে পুনরায় বিজেপি সরকার হবে। রামকৃষ্ণ ঘোষ জিতলে পুনরায় হোজাইয়ে এসে এখানে অন্ন গ্রহণ করবেন বলে রাজনাথ সিং তাঁর ভাষণ শেষ করেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.