তৃতীয় বার নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে দিল বিজেপি। কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফেরা তো বটেই। পাশাপাশি শক্তিবৃদ্ধিরও লক্ষ্য নিয়েছে গেরুয়া শিবির। দল ঠিক করেছে, দেশের এমন ১৪৪টি আসনে এখন থেকে শক্তি বাড়ানোর কাজ শুরু হবে, যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে সাফল্য আসেনি। বাংলায় এমন লোকসভা আসনের সংখ্যা ১৯। কোন কোন আসন সেই তালিকায় রয়েছে, তা প্রকাশ্যে না এনেই কর্মসূচি সফল করতে উদ্যোগী রাজ্য বিজেপি। গোটাটাই হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশমতো।
সম্প্রতি বিজেপি সর্বভারতীয় সমীক্ষার মাধ্যমেই দেশের ১৪৪ এবং বাংলার ১৯ আসন বেছেছে। কোন কোন আসন বাছা হয়েছে, তা রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হলেও আপাতত তা গোপন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালে মোদী সরকার গঠনের সময় বিজেপি ২৮২ আসনে জয় পেয়েছিল। ২০১৯ সালে আরও ২১টি আসন বাড়িয়ে পদ্মশিবির জেতে ৩০৩টি আসনে। শরিক দল মিলিয়ে এনডিএ-এর ঝুলিতে আসে মোট ৩৩৬টি আসন। লোকসভার বাকি ২০৯টি আসনের মধ্যে থেকেই ১৪৪টি বেছে নিয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে মোট ৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ১৮টিতে। বাকিগুলির মধ্যে তৃণমূল পায় ২২টি এবং কংগ্রেস জেতে দু’টি আসনে।
গত লোকসভা নির্বাচনের পরে দেশে একটিই আসন হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির— বাংলার আসানসোল। বাবুল সুপ্রিয় পদত্যাগ করার পর উপনির্বাচনে সেই আসনটি দখল করে তৃণমূল। অন্য দিকে, গত রবিবার উত্তরপ্রদেশে আজমগড়, রামপুর আসন জিতেছে বিজেপি। তবে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমীক্ষার ভিত্তিতে নতুন আসনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তা ২০১৯ সালের ফলাফলের নিরিখে। সে কারণে আসনসোল যেমন জেতা আসনের তালিকায় রয়েছে, তেমনই আজমগড় ও রামপুর রয়েছে পরাজয়ের তালিকায়।
প্রাথমিক ভাবে এই ১৪৪টি আসনের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের উপর। শুধু লোকসভা আসন নয়, তার অন্তর্গত বিধানসভা আসনগুলিতে সংগঠন কী অবস্থায় রয়েছে, কী পরিবর্তন দরকার, তা ঠিক করবেন ওই মন্ত্রীরা। এ জন্য ১৪৪টি আসনেই আগামী জুলাই মাসের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সফর হবে। ওই সফরের সময় ওই এলাকার মানুষের চাহিদা বুঝে নির্বাচনে কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া দরকার, তা-ও দেখবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বলা হয়েছে, কী করে নজরবন্দি আসনগুলি জেতার পরিস্থিতি তৈরি করা যায়, তার রূপরেখা তৈরি করতে হবে মন্ত্রীদের।
দলের তরফে এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘লোকসভা প্রবাস যোজনা’। ১৮ মাসের এই কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি প্রতিটি রাজ্যেও আলাদা কমিটি গড়া হবে। এ ছাড়াও, লোকসভা আসন ধরে ধরে হবে ‘ক্লাস্টার কমিটি’। এই কমিটিরও নেতৃত্বে থাকবেন একজন করে মন্ত্রী।
কর্মসূচির বিস্তারিত নির্দেশে বলা হয়েছে, নজরে-থাকা প্রতিটি লোকসভা এলাকায় একজন পর্যবেক্ষক থাকবেন, যিনি ওই এলাকার বাসিন্দা নন। তবে আহ্বায়ক হবেন এলাকারই বাসিন্দা। পরে একই ভাবে প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতেও এমনই কমিটি তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক জায়গায় সব সময়ের কর্মী (ফুল টাইমার) নিয়োগ করতে হবে। পর্যবেক্ষকদের ঘনঘন দায়িত্বে থাকা এলাকায় গিয়ে থাকতে হবে। নিয়মিত রাত্রিবাসও করতে হবে।
তবে আপাতত জুলাই মাস পর্যন্ত ১৪৪ আসন এলাকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সফরকেই গুরুত্ব দিতে চাইছে বিজেপি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, মন্ত্রীরা এক একটি লোকসভা এলাকায় তিনদিন করে থাকবেন। সেই সময়ে বিভিন্ন স্তরের সাংগঠনিক বৈঠকের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথাও বলতে হবে। জেলার বিশিষ্টদের সঙ্গে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা সভায় যোগ দিতে হবে। এরই মধ্যে দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনকেও পরামর্শ দেবেন মন্ত্রীরা। তিনদিনই দলের কর্মী, সমাজসেবী বা কোনও প্রান্তিক পরিবারের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতে হবে মন্ত্রীদের।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় এই ধরনের কর্মসূচি দেখা গিয়েছে। তবে বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে না পারায় দলের ভিতরেই এমন কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অনেকেই বলেন, ভিনরাজ্যের নেতাদের নিয়ে এসে বাংলার রাজনীতিতে লাভ করতে পারেনি বিজেপি। দলের এই নতুন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত এক নেতা বলেন, ‘‘কে কী বলেছেন, জানি না। তবে দল এমনটা মনে করে না। বাংলায় ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও আমাদের ফল খারাপ তো বলা যাবে না। আমরা একটা সর্বভারতীয় দল। এটাই আমাদের পদ্ধতি। গোটা দেশে এই ভাবে কাজ করেই সাফল্য এসেছে।’’