নীলবাড়ি দখল বিজেপি-র কাছে নিছক ভোটের লড়াই হলেও শুভেন্দু অধিকারীর কাছে মোটেও ওই টুকই নয়। তাঁর কাছে অনেক চ্যালেঞ্জ। তৃণমূল সরকারে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলানো প্রাক্তন মন্ত্রীর কাছে এই লড়াই অনেকটা ব্যক্তিগতও। নন্দীগ্রামে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের বিজেপি-র টিকিটে জয় তো চ্যালেঞ্জই। কিন্তু বিজেপি-র সার্বিক জয় না মিললে নন্দীগ্রামে জিতে গেলেও শুভেন্দু রাজনৈতিক জবাব দিতে পারবেন না পুরনো দলকে।
গুঞ্জনের বয়স অনেক হলেও, প্রস্তুতির মেয়াদ লম্বা হলেও একেবারে নির্বাচনের মুখে এসে দলবদল করেন শুভেন্দু। ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে অমিত শাহর হাত থেকে পদ্মের পতাকা হাতে নেওয়ার পর থেকেই তাঁর উপরে ভরসা শুরু হয়ে যায় বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। একেবারে সেই দিনই অমিতের চপারে করে কলকাতা ও নিউটাউনের হোটেলে ভোট পরিকল্পনার সাংগঠনিক বৈঠকে যোগদান। এর পরে কলকাতা বা দিল্লি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি বৈঠক হোক বা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে জেপি নড্ডার বাসভবনে মত বিনিময় সবেতেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়েছেন শুভেন্দু। পদ্মের প্রচারেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে তাঁকে ব্যবহার করেছে গেরুয়াশিবির। কার্যত রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পরেই মুখ হিসেবে তাঁকে তুলে ধরা হয়েছে প্রচার পর্বে। তাই বিজেপি-র রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও তাঁর কাছে অনেক প্রত্যাশা।
শুধু দলের নয়, অনুগামীদের থেকেও প্রত্যাশার অনেক চাপ শুভেন্দুর উপরে। বাংলার রাজনীতিতে ‘দাদার অনুগামী’ শব্দবন্ধ যুক্তই তো হয়েছে তাঁকে ঘিরে। তাই ‘দাদা’-র রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অনেক ভাই। যাঁরা শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপি-তে এসেছেন তাঁরাও চেয়ে আছেন রবিবারের ফল ঘোষণার দিকে। শুভেন্দু নিজে মুখে কখনও কিছু না বললেও অনুগামীদের মধ্যে অন্য চিন্তাও রয়েছে। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হচ্ছে সেই প্রশ্নে বরবারই ‘বাংলার ভূমিপুত্র’ বলে জল্পনা বাড়িয়েছেন বই কমাননি। তবে শুভেন্দু অনুগামীরা অনেকেই ‘দাদাই মুখ্যমন্ত্রী’ দাবি করছেন। আবার কেউ কেউ অতটা না ভাবলেও উপ-মুখ্যমন্ত্রী বা বড় দফতর ভেবে রেখেছেন।
এই ভাবনার পিছনে শুভেন্দুর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি যেমন কারণ, তেমনই নন্দীগ্রামে তিনি জিতলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর জন্য বড় পুরস্কার মিলবে—এমন ধারণাও রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন নন্দীগ্রামে দাঁড়াতে চান বলে ঘোষণা করেছিলেন সে দিনই শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ ছিল, ‘‘হাফ লাখ ভোটে যদি নন্দীগ্রামে মাননীয়াকে হারাতে না পারি আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ রাজনীতিতে এমন চ্যালেঞ্জের আক্ষরিক অর্থ ধরতে নেই সেটা সকলেরই জানা। তবু চ্যালেঞ্জটা যে বড্ড কঠিন। শুভেন্দু না ভাবলেও ভাবাচ্ছে অনুগামীদের।