অতীতে বার বার নির্বাচনে পরাজিত হওয়া রাহুল সিংহকে এ বার বিধায়ক করতে মরিয়া বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে ‘সুবিধাজনক’ আসন হাবড়ায় প্রার্থী করার পাশাপাশি শেষবেলার প্রচারেও রাহুলের পাশে থাকছেন খোদ অমিত শাহ।
রবিবার পর পর ৩টি কর্মসূচি রয়েছে অমিতের। হাবড়া বিধানসভা এলাকায় তিনি রোড-শো ছাড়াও একটি ঘরোয়া বৈঠকে যোগ দেবেন। শেষে হাবড়ায় বিজেপি কর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে বসবেন তিনি। রাহুলের কথায়, ‘‘অমিতজি আসছেন মানে সেটা বড় পাওনা তো বটেই।’’
তৃণমূল অবশ্য অমিত-সফরকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। এই আসনের তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘অমিত শাহ আসুন। আমার বিরুদ্ধে প্রচার করুন। কিন্তু আমি বলছি, রাহুল সিংহ এ বারও হারবেন।’’
রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি রাহুল কোনও দিনই নির্বাচনে জিততে পারেননি। অতীতে বিধানসভা, লোকসভা দুই নির্বাচনেই প্রার্থী হলেও কোনও দিন জয়ের মুখ দেখেননি তিনি। এ বার সেই রাহুলকেই উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া আসনে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার জোড়াসাঁকো আসনে হারের পরে গত লোকসভা নির্বাচনেও কলকাতা উত্তর আসনে রাহুলকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। অমিত সে বারও রাহুলের সমর্থনে রোড-শো করেন। প্রসঙ্গত সেই রোড-শো চলার সময়েই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়। প্রবল মোদী-হাওয়ায় বিজেপি রাজ্যে ১৮ আসনে জিতলেও গেরুয়াশিবিরের অনেক ভরসা কলকাতা উত্তরে লক্ষাধিক ভোটে হারেন রাহুল।
তবে নীলবাড়ির লড়াইয়ে হাবড়া আসনে তাঁর জয় অনেক সহজ বলেই দাবি করছেন রাহুল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে মাত্র ১২.৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। জ্যোতিপ্রিয় জিতেছিলেন ৫৪.৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে। তবে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ফলের নিরিখে বিজেপি-র শক্তি অনেকটাই বাড়ে বারাসত লোকসভা আসনের অন্তর্গত এই বিধানসভা এলাকায়। বারাসত আসনে তৃণমূল লক্ষাধিক ভোটে জিতলেও হাবড়ায় ১৯ হাজার ৪৫২ ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এই অঙ্কেই ভরসা রাখছেন রাহুল। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনে লোকসভার ফল নিয়ে অঙ্ক কষার কোনও অর্থই হয় না। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘অমিত শাহর আগে বারাসত থেকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাকে হারানোর ডাক দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আমি বলছি, রাহুল সিংহ এ বারও হারবেন। আমিই হারাব। লিখে রাখুন। ৫০ হাজার ভোটে হারাব।’’
দিলীপ ঘোষ রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি হওয়ার পরে রাহুলকে কেন্দ্রীয় সম্পাদক করা হয়। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিজেপি-র যে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয় তাতে কোথাওই ছিল না তাঁর নাম। ওই দিনই মুকুল রায়কে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি ঘোষণা করা হয়।
পদ হারানোর কথা জেনেই রাহুল ভিডিয়ো বিবৃতিতে বলেন, “চল্লিশ বছর বিজেপি-র সেবা এবং বিজেপি-র একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করে এসেছি। জন্মলগ্ন থেকে বিজেপি-র সেবা করবার পুরস্কার এটাই যে— তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আসছেন, তাই আমাকে সরতে হবে। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের কিছু আর হতে পারে না। পার্টি যে পুরস্কার দিল সেই পুরস্কারের পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলতে চাই না।” এখানেই থামেননি রাহুল। কিছুটা হুমকির সুরেই বলেছিলেন, “আমি যা বলার দশ-বারো দিনের মধ্যে বলব এবং আমার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করব।”
না। এর পরে আর কিছুই বলেননি রাহুল। দলেই থেকেছেন। দাবি মতো প্রার্থী হতেও পেরেছেন বিধানসভা নির্বাচনে। তবে কমিশনের কোপে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। শীতলখুচির গুলিচালনা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য ৪৮ ঘণ্টা প্রচারে নামতে পারেননি। এ বার অমিতকে নিয়ে প্রচারে সব খামতি পূরণ হবে বলেই মনে করছেন রাহুলের অনুগামীরা।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে পূর্বস্থলীতে জনসভার পরে নাকাশিপাড়ায় জনসভা করবেন অমিত। এর পরে জনসভা রয়েছে স্বরূপনগরে। সেখান থেকে বিকেলে যাবেন হাবড়ায়। দেশবন্ধু পার্ক থেকে হাবড়া সুপার মার্কেট পর্যন্ত রোড-শো করার পরে তিনি স্থানীয় অনুপমা কমিউনিটি হলে স্থানীয় বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি ঘরোয়া সভা করবেন। নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে প্রচার পর্ব শেষ করে চন্দ্রা প্যালেস নামে একটি বাড়িতে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়াতেই নৈশভোজ সেরে কলকাতায় ফিরতে পারেন অমিত।