Bengal Polls: শুক্রবার শহিদ মিনারে মোদী, করোনা শঙ্কিত বাংলার ৪ শহরে উপস্থিত থেকে ৫৭ সভাই লক্ষ্য

করোনা শঙ্কিত বাংলায় ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন। বিজেপি সূত্রে তেমনটাই জানানো হয়েছে। ভোট আবহে এটা তাঁর ১৩তম সফর। এই সফরে শুক্রবার তাঁর ৪টি সমাবেশ করার কথা। এই ৪ ধরলে রাজ্যের ২৩ জেলার ১৮টিতে মোট ২২ সমাবেশ হবে তাঁর। এর মধ্যে প্রথম ১৮ সমাবেশের ক্ষেত্রে করোনাবিধি সে ভাবে মানা না হলেও শুক্রবার খুবই সতর্ক বিজেপি। রাজ্যে করোনা সক্রমণের বাড়াবাড়ি এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে শুক্রবার সর্বাধিক ৫০০ মানুষের সামনে ভাষণ দেবেন মোদী।

পুরনো সফর সূচি মেনে শুক্রবার রাজ্যের ৪ জায়গায় মোদী উপস্থিত থাকবেন। সপ্তম এবং অষ্টম দফায় রাজ্যে মোট ৭১ আসনে ভোটগ্রহণ রয়েছে। তার মধ্যে সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে প্রার্থী মৃত্যুর কারণে ভোটগ্রহণ ১৬ মে। ফলে শেষ দু’দফায় মোট ৬৯ আসনে ভোটগ্রহণ। এর মধ্যে ৫৬ আসনের প্রচারের লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনায় শুক্রবার ৪ সভায় মোদী শারীরিক ভাবে হাজির থাকবেন। তবে বিজেপি কিন্তু কলকাতার শহিদ মিনার-সহ অন্তত ৫৭টি সভাস্থল তৈরির পরিকল্পনা করেছে। রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও কোনও বিধানসভা এলাকায় একাধিক জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে সভা হতে পারে। সেই হিসাব ধরলে সভার সংখ্যা হবে অনেক বেশি। তবে সেই সব সভা মোদীর লক্ষ্যে থাকলেও তিনি সশরীরে সে সব মঞ্চে থাকবেন না।

নীলবাড়ির লড়াইয়ে সব জেলায় মোদীকে নিয়ে এসে প্রচারের পরিকল্পনা ছিল রাজ্য বিজেপি-র। এর মধ্যে দুই দিনাজপুরের জন্য একটি সমাবেশ বরাদ্দ ছিল। সেটি গত ১৭ এপ্রিল হয়ে গিয়েছে গঙ্গারামপুরে। আবার ঝাড়গ্রামকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে ধরা হয়েছিল। একই ভাবে শিলিগুড়ির সমাবেশেই দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারকে যুক্ত করা হয়। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এই সব জেলাগুলিতে দল ‘সুবিধাজনক’ জায়গায় বলেই মনে করছে বিজেপি। সে কারণেই শিলিগুড়ির সভা থেকে চার জেলার ১৮ আসনের জন্য প্রচার সারেন মোদী। অন্য দিকে, বিজেপি-র কাছে ‘কঠিন’ জমি দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও নদিয়ায় দু’টি করে সমাবেশ করেছেন তিনি। কলকাতার ক্ষেত্রেও একই নীতি বিজেপি-র। মহানগরে ব্রিগেড সমাবেশ করে গেলেও শুক্রবার ফের আসছেন মোদী।

তবে এই সফরে নতুন নিয়মে হবে সমাবেশ। কলকাতায় সপ্তম দফায় ভোট রয়েছে কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, রাসবিহারী ও বালিগঞ্জ আসনে। ঠিক ছিল ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কে হবে মোদীর সমাবেশ। কিন্তু এখন যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে মোদীর সভার জন্য মূল মঞ্চ বাঁধা হবে শহিদ মিনার ময়দানে। সেখানে তিনি ভাষণ দেবেন ৫০০ সমর্থকের সামনে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেই বক্তৃতা শোনার ব্যবস্থা থাকবে দক্ষিণের পাশাপাশি উত্তর কলকাতার সব বিধানসভা এলাকায়।

উত্তরের ৭ আসন চৌরঙ্গি, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা, ও কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় ভোটগ্রহণ অষ্টম দফায়। শহিদ মিনার এলাকা চৌরঙ্গি বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়লেও এই আসনে আরও একটি সভা হবে লেবুতলা পার্কের কাছে ভূপতিচরণ রায় মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনে। এ ছাড়াও কোন বিধানসভা এলাকার কোন জায়গায় ভার্চুয়াল সভা হবে তারও পরিকল্পনা করে ফেলেছে বিজেপি। ঠিক হয়েছে, প্রতিটা জায়াগাতেই করোনাকালের দূরত্ববিধি বজায় রেখে সর্বাধিক ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। প্রত্যেকের জন্য মাস্ক যেমন বাধ্যতামূলক থাকবে তেমনই পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার রাখা হবে। এ ছাড়াও বিজেপি-র পরিকল্পনা কলকাতার সব আসনের প্রতিটি বুথ এলাকাতেই একটি করে টেলিভিশন রাখা হবে। সেখানে কর্মীরা মোদীর কথা শুনবেন। কলকাতার দায়িত্ব প্রাপ্ত এক নেতা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ বুথে পরিকল্পনা মতো প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছে। বাকিটাও করে ফেলা হবে।

কলকাতার মতোই পরিকল্পনা মালদহ জেলাতেও। সেখানে মোদী শারীরিক ভাবে উপস্থিত থাকবেন মালদহ শহরে। বিএড কলেজ ময়দানে কলকাতার মতোই ৫০০ জনের ব্যবস্থা থাকবে। সেই বক্তৃতা শোনার ব্যবস্থা থাকবে সব বিধানসভা এলাকায়। জেলার ১২টি আসনেই ভোটগ্রহণ রয়েছে সপ্তম ও অষ্টম দফায়।

মুর্শিদাবাদের সমাবেশটি হবে বহরমপুর শহরে। আগের পরিকল্পনা ছিল জেলার সব আসন থেকে কর্মী-সমর্থক এনে ভরিয়া ফেলা হবে বহরমপুর স্টেডিয়াম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল। তাই সপ্তম ও অষ্টম দফায় হতে চলা জেলার ২২ আসনে ভার্চুয়াল উপস্থিতি থাকবে মোদীর।

বীরভূম জেলায় মোদীর সভাটি হবে সিউড়ি শহরে। করোনাবিধি মেনে কর্মীদের উপস্থিতিতে ভাষণ দেবেন মোদী। এই জেলার ১২টি আসনেই ভোটগ্রহণ শেষ দফায়। কলকাতা, মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো এই জেলাতেও বিজেপি প্রতিটি বিধানসভা এলাকার যত সম্ভব বেশি বুথ এলাকায় বক্তৃতা সম্প্রচারের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা বিজেপি-র।

বাংলায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বামেরা আগেই সব বড় সভা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। এর পরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী রাজ্যের সব সফর বাতিল করেন। তিনিও এখন করোনা আক্রান্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বড় সভা বা কর্মসূচি না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তবে কোনও সফর বাতিল করেননি মুখ্যমন্ত্রী। একই পথে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রীও। রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম যে যে জায়গায় মোদীজির উপস্থিত থাকার কথা, সর্বত্র তিনি আসুন। এটা স্থানীয় নেতা, কর্মী, ভোটার— সকলেরই দাবি। এর আগে মোদীর সব সমাবেশেই বিপুল সমাগম হয়েছে। তিনি প্রতিটি এলাকাভিত্তিক সেখানকার ভোটারদের আবেগ এবং সমস্যার কথা তুলে বক্তব্য রাখেন। সেই কারণে ৪টি সমাবেশের সব ক’টিই হচ্ছে। এই ভাবেও যে সফল সমাবেশ করা যায় তার একটা নতুন নজির তৈরি হবে শুক্রবার।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.