তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পর যখন দিকে-দিকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তখন বিজেপি নেতাদের মুখে ছিল কটাক্ষের হাসি। বেশিদিন কাটল না, বিজেপি মাত্র প্রথম চার দফা ভোটের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করতেই তৃণমূলের থেকেও বিড়ম্বনাজনক অবস্থায় পৌঁছল গেরুয়া শিবিরের অন্দরের কোন্দল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল, যখন বিজেপির প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রার্থীতালিকা নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল মুকুল রায়, শিবপ্রকাশ, অর্জুন সিং, সব্যসাচী দত্তদের। এমনকী আত্মহত্যার হুমকিও দিলেন দলীয় কর্মীদের। ‘দলবদলু’দের টিকিট দেওয়া বা পছন্দের প্রার্থীদের না করানোর জন্য বিজেপিতেই শুরু হয়েছে মুষলপর্ব। সোমবার রাত থেকে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, গুয়াহাটি গিয়েও কলকাতা ফিরে আসেন অমিত শাহ। রাজ্য বিজেপির নেতাদের সঙ্গে গভীর রাতেই সারেন তিনি। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। বরং মঙ্গলবার সেই বিক্ষোভ আরও বেড়েছে। সূত্রের খবর, এদিনই রাজ্য নেতাদের ফের দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। ভোটের বাংলা ছেড়ে বিশেষ বিমানে রাতেই দিল্লি পৌঁছানোর কথা দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের।
গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, দলের প্রার্থীতালিকা নিয়ে দলীয় কর্মীদের এই বিক্ষোভে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় কর্মীদের এই ক্ষোভের আঁচ কেন আগে থেকে আন্দাজ করা যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সেই বিষয়েই বুধবার সকাল দশটায় বৈঠকে বসছেন বিজেপির কোর কমিটি। সেখানে রাজ্য নেতাদের একাধিক কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রার্থী অসন্তোষ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে রাজারহাটের একটি পাঁচতারা হোটেলে সোমবার রাতেই বৈঠকে বসেন অমিত শাহ, তাতে যোগ দেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও। সূত্রের খবর, দলের এই পরিস্থিতি দেখে চিন্তিত অমিত শাহ, জে পি নাড্ডারা। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তাঁদের পরামর্শ, প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে হবে। সূত্রের খবর, এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সমস্যা মেটানোর সময়ও বেঁধে দিয়েছেন শাহ। পাশাপাশি পর্যালোচনা হয়েছে প্রথম দুই দফার আসন নিয়েও।
এখনও সম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি বিজেপি। মাত্র চার দফার (তাও সম্পূর্ণ নয়) প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হতেই দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাকে রীতিমতো গুরুত্ব দিয়ে দেখতেই হচ্ছে অমিত শাহদের। সেই কারণেই রবিবার রাতে সফরসূচির অদলবদল করে কলকাতায় এসে রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসতে হয়েছে অমিত শাহকে। গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থীদের নিয়ে কর্মীদের অসন্তোষ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত রিপোর্টও তলব করেছেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের থেকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, কর্মী অসন্তোষের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনে একটি বা দু’টি কেন্দ্রে প্রার্থী বদলও করতে পারে গেরুয়া শিবির। কিন্তু তাতেও বিড়ম্বনা কি কমবে বিজেপির, উত্তর দেবে সময়।