আমাদের মাতৃভূমি ভারতে মেধা , বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ ও তার বৃদ্ধি এবং ধ্রুপদী তামিল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এবং ঐশ্বরিক ভাষা সংস্কৃত সহ উন্নত সাহিত্যের একটি মহান ঐতিহ্য ছিল।প্রাচীন ভারত বর্ষে প্রতিটা মানুষের সমাজজীবন চারটি আশ্রমে বিভক্ত ছিল। যথা : (১) ব্রহ্মচর্য, (২) গার্হস্থ্য, (৩) বাণপ্রস্থ ও (৪) সন্ন্যাস। পরিণত বয়সেই গার্হস্থ ব্যক্তি তার বাণপ্রন্থ জীবন শুরু করতেন। অতএব তাঁর মস্তিষ্ক ভাণ্ডারে সঞ্চয় হয়ে থাকত জীবন থেকে পাওয়া প্রচুর অভিজ্ঞতা। বাণপ্রস্থী গুরুরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলি ছাত্রদের সামনে জ্ঞানের আকারে তুলে ধরতেন। তাই, বলা যায়, প্রাচীন ভারতের শিক্ষাধারা জীবনের নানা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ছিল।বৃটিশ রাজনৈতিক শক্তি যখন আমাদের শাসন করতে শুরু করে, তখন এসবই গৌণ হয়ে যায়।এখন অনেকেরই কাছে ইংরেজি ভাষা এবং ব্রিটিশ মডেল হয়ে উঠেছে আমাদের শিক্ষার মাধ্যম ও পদ্ধতি। মিশনারিরা ইউরোপীয় আদলে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে ফলে গুরুকুল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।ইংরেজ রাজত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজদের আইন-আদালত প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। ইংরেজ বণিকরাও নানা স্থানে তাদের বাণিজ্যাগার স্থাপন করে। তাদের অধীনে কর্মরত ভারতীয়দের ইংরেজি জ্ঞানের প্রয়ােজন ছিল। মধ্যবিত্ত বাঙালি চাকরি লাভের আশায় ইংরেজি শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ বােধ করে। এই সুযােগে কয়েকজন বিদেশি কলকাতায় ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয় খােলেন। এঁদের মধ্যে সারবর্ন, মার্টিন বাউল, আরটুন পিট্রাস ও ডেভিড ড্রামন্ড পরিচালিত বিদ্যালয়- গুলি উল্লেখযােগ্য। ভারতে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তারা ভারতের নানা অঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে মার্শম্যান, ওয়ার্ড ও উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন, চার্চ মিশনারি সােসাইটি ও লন্ডন মিশনারি সোসাইটির উদ্যোগে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল—এমনকি চুচুড়া, বর্ধমান, বহরমপুর, কালনা, মালদহ ও দক্ষিণ ভারতে বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানত খ্রিস্টধর্ম-সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হলেও এইসব বিদ্যালয়ে ইতিহাস, ভূগােল, ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হত। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপটিস্ট মিশন শ্রীরামপুরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। যেমন-
ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি :
1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে মার্শম্যান, উইলিয়াম কেরি এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই তিনজন খ্রিস্টান মিশনারিকে একত্রে “শ্রীরামপুর ত্রয়ী” বলা হয়। প্রধানত খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে শ্রীরামপুরে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে 26টি আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল প্রকাশ করেন। এরপর 1818 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর বিদ্যালয় শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রচেষ্টায় মোট 126টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
লন্ডন মিশনারি :
এই মিশনারিরা কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন জেলায় বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলির মধ্যে চুঁচুড়া, কালনা, বর্ধমান, বহরমপুর, মালদহতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলি উল্লেখযোগ্য।
স্কটিশ মিশনারি :
1830 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের সহায়তায় আলেকজান্ডার ডাফ এর স্কটিশ মিশন বাংলায় কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এগুলি “ডাফ স্কুল” নামে পরিচিত। এগুলির মধ্যে “কলকাতা জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন” বিশেষ উল্লেখযোগ্য যা বর্তমানে “স্কটিশ চার্চ কলেজ” নামে পরিচিত।
জেসুইট মিশনারি :
বেলজিয়ামের জেসুইট মিশনারিদের উদ্যোগে কলকাতায় 1860 খ্রিস্টাব্দে “সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ” এবং 1842 খ্রীস্টাব্দে “লরেটো হাউস স্কুল” প্রতিষ্ঠা করেন।
আমরা অনেকবার শুনেছি যে এই লর্ড ম্যাকাওলি কীভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছেন, কিন্তু আপনি কি এই একই দোষে দুষ্ট এবং আরও বিপজ্জনক আলেকজান্ডার ডাফ সম্পর্কে জানেন?
টমাস বাবিংটন ম্যাকিউলে’র পক্ষে ভারতের অবিচ্ছিন্ন শিক্ষাগত ঐতিহ্যের এমন ব্যাপক ক্ষতি করা সম্ভব হতো না যদি না তিনি অবিচ্ছিন্ন সরকারী সহায়তার জন্য তিনি ব্রিটিশ-অধিকৃত ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছ থেকে সাহায্য পেতেন। মিশনারি স্পনসরড শিক্ষার প্রথম নেতিবাচক প্রভাব ছিল এটি সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদকে উন্নীত করেছিল। অ্যাডভোকেট তরুণ জৈন লিখেছেন যে মিশনারিরা যখন ভারতীয়দের তাদের নিজেদের দোষ গুলি শিখিয়েছিল তখন তারা সম্পূর্ণরূপে আত্মবিশ্বাস এবং স্থানীয়দের আত্মসম্মানকে ধ্বংস করেছিল। স্বামী বিবেকানন্দের কথায় এটি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়: “শিশুকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রথম জিনিসটি সে শিখে যে তার বাবা একজন বোকা, দ্বিতীয় জিনিসটি দাদা একজন পাগল, তৃতীয় জিনিসটি যে তার সমস্ত শিক্ষক হিপোক্রিট, চতুর্থ যে তাঁদের সমস্ত পবিত্র গ্রন্থ মিথ্যার ভর”।উইকিপিডিয়া বলে: “একটি মিশন স্কুল বা মিশনারি স্কুল হল একটি ধর্মীয় স্কুল যা মূলত খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা তৈরি এবং পরিচালিত হয়। মিশন স্কুলটি সাধারণত ঔপনিবেশিক যুগে স্থানীয় জনগণের পশ্চিমীকরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত। (মিশন স্কুল, উইকিপিডিয়া)আঞ্চলিক শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির প্রশংসা করার এবং সেই সংস্কৃতিকে শিক্ষার মাধ্যমে পরিচিত জ্ঞানের উপকারী হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিবর্তে, মিশন স্কুলগুলিকে পশ্চিমের গৌরব দাবি করেছে এবং এই চিন্তাটি বিস্তার করেছে যে পশ্চিমা জীবন ছাত্রের নিজস্ব সংস্কৃতির চেয়ে আদর্শ এবং উচ্চতর। তাই পশ্চিম থেকে আসা যেকোন কিছুকে “হ্যাঁ” বলার অহেতুক উন্মাদনা আমাদের মধ্যে রয়েছে। যদিও পশ্চিমের অর্জিত জ্ঞানের প্রশংসা করা ভালো ,তবে সতর্ক থাকা উচিত যে জ্ঞানের প্রশংসা করা ভালো , পশ্চিমের নয়! বর্তমানে কি চলছে তা পড়ুন। মিশন স্কুলগুলি বিবাহিত মহিলা কর্মীদের সিঁদুর রাখার অনুমতি দেয় না। শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিফর্ম সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমা পোষাক কোড অনুসরণ করে ডিজাইন করা হয়েছে। ব্রিটিশ মিশনারিরা ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য ইংরেজি শিক্ষা ব্যবহার করেছিলরাগবেন্দ্রন এসএস উনিশ শতকের প্রথম ভাগে ভারতে এসেছিলেন, আলেকজান্ডার ডাফের জীবন কাহিনী লিখেছেন, বলছেন তিনি বিশ্বাস করতেন যে “পতনশীল মানুষের বিকৃত চাতুর্য দ্বারা গড়া মিথ্যা ধর্মের সমস্ত ব্যবস্থার মধ্যে, হিন্দুধর্ম অবশ্যই সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং ভারত ছিল শয়তানের পার্থিব আধিপত্যের প্রধান আসন। পাশ্চাত্য শিক্ষা হিন্দুদের তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় নিখুঁত অবিশ্বাসী এবং খ্রিস্টধর্মে নিখুঁত বিশ্বাসী করে তুলবে”। লর্ড বেন্টিঙ্কের শাসনকালে ভারতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হবে এই প্রশ্নে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা প্রাচ্যবাদী (Orientalist) এবং পাশ্চাত্যবাদী (Anglicist) নামে দুটি পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যায় । এভাবে সরকারি শিক্ষানীতি নির্ধারণে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় । প্রাচ্যবাদীরা ভারতে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষাদানের পক্ষপাতি ছিলেন । এই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এইচ টি প্রিন্সেপ, গিলক্রিস্ট, কোলব্রুক ও এইচ এইচ উইলসন প্রমূখ । পাশ্চাত্যবাদীরা ভারতে পাশ্চাত্যশিক্ষা, অর্থাৎ ইংরেজি, আধুনিক বিজ্ঞান প্রভৃতি শিক্ষার প্রসারের দাবি জানায় । এই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন টমাস ব্যাবিংটন মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কলভিন প্রমূখ ।মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষার সপক্ষে মত প্রকাশ করেন এবং ভারতীয় সভ্যতা ও চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থার তীব্র নিন্দা করে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে এক প্রস্তাব (Minutes) পেশ করেন যা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত । ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে তিনি বলেন—”একটি ভালো ইউরোপীয় গ্রন্থাগারের একটি তাক ভারত বা আরবের সমগ্র সাহিত্যের সমকক্ষ ।” মেকলে ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে চুইয়ে পড়া তথ্য বা ‘filtration theory’ প্রচার করেন । তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে ভারতের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে । জল যেভাবে ওপর থেকে নীচের দিকে প্রবাহিত হয় তেমনি এই উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাহায্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ক্রমে ভারতের সাধারণ ও নিম্নবিত্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে ।
১৮০৬ সালের এপ্রিল মাসে স্কটল্যান্ডে আলেক্সান্ডার ডাফ জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৩০ সালে চার্চ অফ স্কটল্যান্ডের প্রথম মিশনারি হিসাবে কলকাতার তীরে পৌঁছেছিলেন।এখানে এসে তিনি প্রথম যে কাজটি করেছিলেন তা হ’ল, উচ্চশ্রেণীর হিন্দু ও মুসলমানদের ইংরেজী শিক্ষার টোপ দিয়ে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করা।এর আগে পর্যন্ত মিশনারিদের মূল নজর ছিল নিম্ন শ্রেণীর দিকে এবং তাঁরা তাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের সময় বাংলা ভাষার ছোঁয়াটুকু পর্যন্ত লাগতে দেননি। ডাফ সমাজের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে কেবলমাত্র ইংরেজী এবং শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষাতেই শিক্ষিত করার প্রচার শুরু করার আগে পর্যন্ত তাঁরা মূলত আঞ্চলিক ভাষাতেই নিজেদের কাজের নির্দেশনা করতেন।
ডাফ সুচিন্তিতভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতার বীজ বপন করে ধীরে ধীরে হিন্দু ও মুসলমানদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে চেয়েছিলেন।
তাঁর কাজের সাফল্যের পিছনে এই নিম্নলিখিত প্রভাবগুলি ছিল:
১) শিক্ষাব্যবস্থায় ভারত সরকারের নীতি পরিবর্তন করা।
2) খ্রিস্টান গীর্জার আওতায় থাকা মিশনারি সংস্থার তত্বাবধানে বাড়িতে এই শিক্ষার স্বীকৃতি সুরক্ষিত করা।
৩) উচ্চ-বর্ণের হিন্দুদের মনে খ্রিস্টীধর্মের সুরক্ষার বীজ বপন করা।
আলেকজান্ডার ডাফ একটি তত্ত্বের প্রস্তাবনা করেছিলেন যা তিনি “নিম্নগতির পরিস্রাবণ তত্ত্ব” বা “ডাউনওয়ার্ড ফিলটারেশন পলিসি” নামে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে সমাজের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণিগুলিতে খ্রিস্টধর্মের জ্ঞান প্রবেশ করাতে পারলেই তা শেষ পর্যন্ত সামাজিক সিঁড়ি হিসেবে সমাজের সব স্তরের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়বে। ১৯৩৫ সালের ৭ ই মার্চ এমনই একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল যেখানে ভারতে উচ্চশিক্ষার অগ্ৰগতির জন্য ব্রিটিশ সরকারের লক্ষ্য হয়ে উঠলো ভারতের আদিবাসীদের মধ্যে ইউরোপীয় বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রচার করা এবং শিক্ষার জন্য বরাদ্দ হওয়া সমস্ত তহবিলই সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানো আর সেটাও শুধুমাত্র ইংরেজি শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারের জন্য। ১৮৩৪ সালে ডাফ ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। ১৮৪০ সালে তিনি চার্চ অব ইংল্যান্ড এবং চার্চ অব স্কটল্যান্ড নামক নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রচুর তহবিল নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাইবেল শিক্ষার প্রচার ও ধর্মান্তরীকরন। ডাফ তাঁর এই ধর্মান্তরীকরনের নিরবচ্ছিন্ন ধারা অব্যাহত রাখতে ফ্রি- চার্চ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ১৮৫৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৪৪ সালে গভর্নর জেনারেল ভিসকাউন্ট হার্ডিং তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে, তাঁর প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা সকলেই সরকারী চাকরীর পাওয়ার যোগ্য। সেইসব সর্বাধিক কুখ্যাত বাঙালি, যাঁরা খ্রিস্টধর্ম গ্ৰহন করেছিলেন তাঁর অধীনে অনেক প্রভাবশালী বাঙালি যেমন রেভারেন্ড লাল বিহারী দে এবং কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জির মতো মানুষ খ্রীষ্টানধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। ১৮৪৯ সালে, ডাফ ইংল্যান্ড ফিরে যান। তারপর তিনি মার্কিন ভভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তবে তিনি আবার ১৮৫৬ সালে ভারতে ফিরে আসেন। ১৮৫৭ সালে অর্থাৎ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনাকালে ডাফ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের থাকার ব্যবস্থা করে নেন। শেষ পর্যন্ত, ১৮৬৩ খ্রীষ্ট্রাব্দে স্বাস্থ্যের অবনতি হলে ডাফ চিরতরে ভারত ছেড়ে চলে যান।বাঙালিদের মধ্যে যাঁরা বলেন যে রাজা রামমোহন রায় গর্বিত হিন্দু ছিলেন, আমি তাঁদের এটাই বলি যে রাজা রামমোহন রায় “হিন্দু অজ্ঞতা” দূর করতে চাওয়ার নাম করে ডাফের পদ্ধতিগুলোকে অনুমোদন করেছিলেন। একটা ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর শিক্ষা গ্ৰহনের মধ্য দিয়ে কীভাবে অজ্ঞতা দূর করা যায়, খ্রীস্টানরা সেই বিজ্ঞানে বিশ্বাস করে না যা তাঁরা আপনাকে এবং অন্যদের শোনায় বরং তাঁদের বিশ্বাস সম্পূর্ণ বিপরীতে। না, এটা এখন পুরোপুরি স্পষ্ট যে ডাফের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনে সহায়তা করার জন্য বাধ্য এবং অনুগত খ্রীস্টান সৈন্যদল তৈরী করা। মিশনারিরা জ্ঞানকে ধর্মের রঙ ও স্বাদ দিতে এবং মানুষকে ধর্মান্তরিত করতে ব্যবহার করে একথা কি আমার হিন্দু বন্ধুরা অনুভব করেন? হিন্দুদের নিজেদের ধর্মকে অপছন্দ করতে শেখানোর মিশনারীদের কৌশল কি এখনও আমার বন্ধুরা বোঝেন? হিন্দু বন্ধুরা ! আপানারা এখনই সাবধান হোন।বন্ধ হোক শিক্ষা ও আধুনিকতার নামে ধর্মের পরিবর্তন।।
।।সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য্য।।