হ্যাঁ দেবে।প্রাচীনকাল থেকেই দিচ্ছে তো। এই বাংলাতেও বহু মানুষের অন্নসংস্থানের উৎস মন্দির । কিভাবে দেবে ? কোথায় দিচ্ছে ? কতজনকে দিতে পারবে ?
ভাত একটি প্রতীকী পদার্থ – ভাত বলতে খাদ্য বস্তু বোঝায় যা যেকোনো জীবিত সত্ত্বার – মানুষ বা মনুষ্যত্বর জীবের প্রয়োজন। যদিও মনুষ্যত্বর জীবের শুধুই খাদ্য প্রয়োজন মানুষের শুধু খাদ্য হলেই চলে না । মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না , বাঁচার জন্য খায় । অবশ্যই বেঁচে থাকার জন্য নুন্যতম চাহিদা খাদ্য। কিন্তু মানব সভ্যতার একমাত্র লক্ষ্য যদি ভাতের জোগাড় হতো তাহলে বিশ্বজুড়ে সভ্যতা বলতে আমরা যা বুঝি – সুপ্রাচীনকাল থেকে আজ অব্দি – তা গড়ে উঠত না। সব মনোযোগ , সব উদ্যোগ যদি ভাত কেন্দ্রিক হতো তাহলে শিল্প , সাহিত্য , ধর্ম , সংস্কৃতি , দর্শন , রাজনীতি , নান্দনিকতা , প্রেম – অপ্রেম , মানবিকতা ইত্যাদি শব্দগুলো তৈরিই হতো না ।ভাতের জোগাড় ছাড়া আর সবক্ষেত্রেই অর্থ ব্যয় মাত্রই যদি অপচয় হিসাবে গণ্য হতো তাহলে পৃথিবীতে এত আশ্চর্যের ইমারত গড়ে উঠত না , এত ছবি আঁকা , এত গল্প লেখা , এত গান গাওয়া , এত বই পড়া , এত ফুল ফোটানো ,এত প্রার্থনা , এত অনুষ্ঠান , ভাবের এত আদান প্রদান কিছুই হতো না । ভাত – একটি চরম এবং বাস্তব সত্য স্বীকার করেও যুগ যুগ ধরে মানুষ এমন কিছু করেছে , এমন কিছু ভেবেছে আপাত দৃষ্টিতে যার কোন বস্তুগত মুল্য নেই কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে সেসব কালজয়ী কীর্তি হিসাবে গণ্য হয় ।
যে মানুষ বই পড়তে ভালবাসে তার কাছে একটি গ্রন্থাগারই একটি মন্দির। বইএর প্রতি যার আগ্রহ নেই তার মনে হতে একটি গ্রন্থাগার নির্মাণ ও সেখানে বই – তথ্য সংরক্ষণ অর্থের অপচয় । যে মানুষ নাটক ভালবাসে তাঁর কাছে একটি নাট্যশালাই মন্দির। যিনি নাটক বিষয়ে আগ্রহী নন তাঁর মনে হতে পারে সেখানে সময় ও অর্থ নষ্ট করে ধ্যাস্টামো হয় । বিশাল বিশাল প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন পৃথিবীর বড় বড় শহরে প্রচুর জায়গা জুড়ে রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণ করতেও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় । কখনো কি কারো মনে হয়েছে ওগুলো ভেঙ্গে ওই জায়গায় বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া উচিত ! ওখান থেকে তো ভাত পাওয়া যায় না !কলকাতা শহরে এত রেস্টুরেন্ট, আর্ট গ্যালারী , নাট্য মঞ্চ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ,বিনোদন পার্ক , স্টেডিয়াম , সুইমিং পুল , জিম , বার এমনকি হুঁকো খাওয়ার ঠেক – সেসবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ‘ভাত’ সরবরাহের উৎস ? ওইসব জায়গার অতি অল্প সংখ্যক কর্মীর জন্য হয়ত ভাতের জোগাড় হয় কিন্তু যে বিশাল সংখ্যার মানুষ প্রতিদিন সেখানে যান তারা কিন্তু মনের ক্ষুধা নিবারণের জন্যই সেখানে যান , ভাত পেতে নয়।
তা বলে দেবালয় বা উপাসনা কেন্দ্র ? অনুগামীর সংখ্যা হিসাবে সব ধর্মের মানুষের জন্য দেবালয় বা উপাসনা কেন্দ্র আছে । যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস করেন তারা সেখানে গিয়ে মনের শান্তি প্রাণের আরাম পান । এই মানুষের সংখ্যাটা পৃথিবী জুড়ে কম নয় ।
রবীন্দ্রনাথের পিতৃদেব এই উদ্দেশ্যেই শান্তিনিকেতনে একটি সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ করেছিলেন, স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড়মঠে বহু অর্থ ব্যায়ে যে বিশাল এবং সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ করেছিলেন সেখানে আজো লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন মনের শান্তি খুঁজতে কিম্বা জীবনের দিশা পেতে । আজকের যে বিশ্বভারতী হাজার হাজার মানুষের অন্নচিন্তার সমাধান করছে তার প্রাণ ভোমরাও আশ্রমের অই মন্দিরেই আছে- ওখান থেকেই শুরু। মানুষের জন্যই মন্দির, মসজিদ , চার্চ , গুরুদ্বারা এসব তৈরী হয় ।
সেসব যাই হোক অযোধ্যায় শ্রী রাম মন্দিরের ভুমিপুজনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেই পুরনো প্রশ্নটি আরও গলার জোর বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে – মন্দির কি ভাত দেবে ? অন্য সব বাদ দিন , একটু দেখা যাক মন্দির ভাতের জোগাড় করতে পারে কিনা । দেশের কয়েক লক্ষ মন্দিরের অন্তত কয়েকটি বহু আলোচিত মন্দির ভাত দেয় কিনা দেখা যাক ।
ভারতবর্ষের অন্যতম বিখ্যাত মন্দির তিরুপতির শ্রী বালাজি মন্দির । এই মন্দিরের আয়ের হিসাব সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়ায় , তির্যক মন্তব্য করা হয় এমনভাবে যেন মন্দিরের অর্থ পুজারীরা ইচ্ছা মত করে বা ভোগ করে । এই মন্দিরের কমিটির বেশির ভাগ সদস্য সরকার মনোনীত । এই বালাজী মন্দিরের কর্মী সংখ্যা চোদ্দ হাজার , আরও বেশ হাজার মানুষ এই মন্দিরে আংশিক কর্মচারী হিসাবে কাজ করে সংসার চালান। এছাড়া এই সংস্থা পরিচালিত একাধিক স্কুল কলেজ ,দুটি বড় আধুনিক হাসপাতাল , অস্থি বিকলাঙ্গদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র , মোবাইল চিকিৎসা কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম , জল ও বন সংরক্ষণ , গবেষণা সাহিত্য প্রকাশ এসব সব প্রকল্পেও বহু মানুষ নিযুক্ত । এই মন্দির সংস্থা অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার কে বছরে পঞ্চাশ কোটি টাকা দেয় । এই সমস্ত কাজে যে অর্থ ব্যয় হয় তা আসে ভক্তদের দেওয়া প্রনামী থেকে যা তারা দেবতাকে উদ্দেশ্য করে দেন।এটা অনেকেই জানেন প্রতিদিন প্রায় ষাট হাজার মানুষ ওখানে বিনামূল্যে প্রসাদ পেয়ে থাকেন।এর পরেও বলবেন মন্দির ভাত দেয় না! সারা দেশ ও বিদেশ জুড়ে স্বামী নারায়ণ মন্দির। যাদের মুল কেন্দ্র গুজরাট । শুধু গুজরাট কেন্দ্রেই তারা চারটে হাসপাতাল , প্রায় চোদ্দটা সাধারণ ও আবাসিক স্কুল , বেশ কয়েকটা হোস্টেল , মোবাইল ক্লিনিক চালান । এছাড়া যেকোনো দুর্যোগে ত্রাণ , শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ , সাহিত্য সেবা , ধর্ম প্রচার ইত্যাদি কাজে তারা অগ্রণী । সারা পৃথিবীতে পাঁচটি মহাদেশ জুড়ে প্রায় পঞ্চাশটি বিশাল আকারের এবং আর হাজার খানেক ছোট বড় মন্দির আছে এই সংস্থার।কলকাতাতেও মাঝারিমাপের একটা মন্দির আছে ।ওই মন্দিরটা দেখে খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যায় সারা দেশ জুড়ে কত স্থায়ী অস্থায়ী বেতনভুক কর্মী এখানে আছেন। যারা গুজরাটের বা দিল্লীর অখহর ধাম দেখেছেন তাদের বঝাতে হবে না। ভারতে এই সংস্থা দশটার বেশি আধুনিক মানের স্কুল ও আটটা কলেজ চালায় । এছাড়া বহু প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সমর্থন দেয় । প্রতি বছর পাঁচ হাজার অভাবী শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেয় ।সেবা কাজের জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে এদের। এরপর কি বলবেন সব ভাত মন্দিরের ঠাকুর আর সাধুরাই খেয়ে ফেলে – কাউকে কিছু না দিয়ে ? হিমালয়ের কোলে মাতা বৈষ্ণদেবী র মন্দির। খুব সহজে যাওয়া যায় না ।শুধু মূলমন্দির ও আরও অনেক ছোট খাটো পরিচালনা নয় , এলাকার উন্নয়নে এইসব মন্দিরে ভক্তদের দেওয়া এখানেও ব্যাবহার করা হয় । মন্দির পরিচালনা উন্নয়ন্মুলক কর্মকাণ্ডে এখানেও প্রায় তিন হাজার বিভিন্ন পদে কর্মচারী আছেন যাঁদের মধ্যে আশিজন পুরোহিত । ভারতবর্ষের ‘ধনী’ মন্দিরের তালিকায় প্রথম দিকেই যে নামটি থাকে সেটি হল কেরলের শ্রী গুরুভায়ুর মন্দির , যেখানে ভগবান বিষ্ণু অবস্থান করছেন। সরাসরি এটি কেরল সরকার নিয়ন্ত্রিত পরিচালন সমিতি দ্বারা পরিচালিত হয়।অর্থাৎ ভক্তরা ভগবানকে যে অর্থ প্রণামী হিসাবে দেন তার নিয়ন্ত্রণ কেরল সরকারের হাতে। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠছে যে মন্দিরের অর্থ ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন খাতে অন্যায়ভাবে ব্যয় করা হচ্ছে সেই মামলা এখন বিচারাধীন। যেখানে শতাধিক কর্মচারী শুধু প্রণামীর টাকা গোণার জন্য নিযুক্ত সেই মন্দির কত শত মানুষের মুখে অন্ন যোগায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
অমৃতসর স্বর্ণ মন্দিরের ‘ গুরু কা লঙ্গর ‘ থেকে প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ মানুষকে ভোজন করানো হয়। যেকোনো উৎসবের সময় এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। সাধারণ ভক্ত স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও কয়েকশো স্থায়ী কর্মী এই কাজে নিযুক্ত ।শ্রী শ্রী সত্য সাঁই বাবার পুরতাপুট্টী আশ্রম বা হোয়াইটফিল্ড হাসপাতাল যারা গেছেন তারা জানেন ধর্মস্থান বা মন্দির শুধু ভাত যোগায় না মানুষের জীবন যাপনের অনেক কিছুই মন্দিরকেন্দ্রিক ধর্ম জোগান দেয় । স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড়ে গঙ্গা নদীর ধারে যে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার শাখা প্রশাখা আজ বিশ্ব জুড়ে । লক্ষ লক্ষ মানুষ কে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে এই মন্দিরকেন্দ্রিক মিশন তাদের দেহের , মনের ক্ষুধা নিবৃত্ত করছে এবং এক আদর্শ দেশ গঠনের কাজ করে চলেছে। সারা দেশ জুড়ে মিশনের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কত মানুষ চাকরী করেন সেই হিসাবকে ছাপিয়ে যায় সারা দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনে কিভাবে স্থায়ী পরিবর্তন এনেছে এই মিশন । এসব কিছুর শুরু বেলুড়ের ওই মন্দির থেকেই ।ভারতবর্ষে মূল্যবোধ ভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা ব্যাবস্থার অন্যতম রূপকার রামকৃষ্ণ মিশন ।
সুন্দরবনের দ্বীপে , পুরুলিয়ার মাটিতে , কিম্বা উত্তরপূর্ব ভারতের দুর্গম এলাকায় মিশন মন্দিরকে কেন্দ্র করেই চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা ও স্বনির্ভরতার কার্যক্রম । মন্দির কি শুধুই ভাত দেয় ? রামকৃষ্ণ মিশনের মতই ভারত সেবাশ্রমের কাজ শুরু হয়েছিল অপার বাংলার ছোট্ট একটি মন্দির থেকেই। বুকে আগুন নিয়ে ভারত সেবাশ্রমের সন্ন্যাসী দল দেশে -বিদেশী শতাধিক মন্দির নির্মাণ করে মানব সেবার কাজ করে চলেছেন।মানুষের আপদে বিপদে যে নামটি মনে পরে যায় টা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ । আধুনিক ভারতের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কন্যাকুমারীর সমুদ্র বক্ষে গড়ে ওঠা মন্দিরকে কেন্দ্র করেই দেশ ব্যাপী আধ্যাত্ম ভিত্তিক সেবা সংগঠন – বিবেকানন্দ কেন্দ্র । ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য শ্রীল প্রভুপাদ ১৯৭২ সালে বলেছিলেন যে “ইসকন মন্দিরের দশ মাইলের মধ্যে কেউ যেন ক্ষুধার্ত না থাকে ।” সেই থেকে ইসকন ভক্তরা বিশ্বের বহু বড় বড় শহরে ‘ফুড ফর লাইফ’ নামে একটি কর্মসূচী চালায় । প্রতিদিন নিখরচায় রেস্তোঁরা, মোবাইল পরিষেবা এবং অন্যান্য উপায়ে তারা মানুষের কাছে নিরামিষ খাবার পৌঁছে দেয়। ‘মিড ডে মিল ’ কর্মসূচীর অংশ হিসাবে প্রতিদিন প্রায় বার লক্ষ শিশুর জন্য খাদ্য সরবরাহ করে । প্রায় চল্লিশ টি গ্রামকে ‘পরিবেশ অনুকুল’ গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার কাজ করছে ইস্কন । হিন্দু ধর্ম কেন্দ্রিক এরকম শত শত সংগঠন জনকল্যাণমূলক কাজ করছে । মন্দিরই তাদের প্রেরণার পাথেয় যোগায় । এক দুদিন ভাত যোগান নয় এই সব প্রতিষ্ঠান অন্নপূর্ণার ভাণ্ডার হয়ে উঠেছে ।
মন্দির কি ভাত দেয় ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বেশি নয় হাতের কাছেই – তারাপীঠ , তারকেশ্বর বা দক্ষিণেশ্বর ঘুরে আসুন। এখানে শুধু তারাপীঠের কথা বলি । তারাপীঠে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সারে চারশো হোটেলে দু হাজার কর্মীর অন্ন সংস্থান হয় । মন্দিরের সেবায়েত ও তাদের সহকারীর সংখ্যা প্রায় ৯০০ । রামপুরহাট ষ্টেশন থেকে তারাপীঠ মন্দির অব্দি প্রায় সারে চারশো টোটো , অটো , ভ্যান , ট্রেকার ইত্যাদি চলে । এছাড়া বড় গাড়ী খাটে । দালালী বা গাইডের কাজ করেন আর প্রায় ৫০০ মানুষ ।অন্তত তিনশো ছোট বড় নানা জিনিষের দোকান ।এছাড়া সাধু, জ্যোতিষী , টুরিস্ট অপারেটর এরা আছে । এদের সকলের অন্নসংস্থান হয় একটি মন্দিরের দৌলতে – মা তারার প্রাচীন মন্দির।আজ মন্দির বন্ধ , এত মানুষের অন্নের উৎস বন্ধ । মন্দিরই ত এদের ভাত দেয় ।
ভারতবর্ষে কত মন্দির আছে ? সঠিক হিসাব দেওয়া সম্ভব নয় ।২০১১ এর জনগণনা অনুসারে ভারতে প্রায় তিন লক্ষ ধর্মস্থান আছে । অন্তত দুলক্ষ মন্দিরের তালিকা পাওয়া যায় । বহু আগে একটি হিসাব হয়েছিল – সেই অনুযায়ী তামিনাড়ুতে ৩৪০০০ , অন্ধ্র প্রদেশে ৪৩০০০, কর্ণাটকে ৩৪০০০ , কেরালায় ২৪০০০ , মহারাষ্ট্রে ৪৫০০০ , শুধু মথুরা -বৃন্দাবনে ৫০০০ মন্দির আছে । এর থেকেই একটা আন্দাজ করা যায় । মন্দিরকে কেন্দ্র করেই বড় বড় শহর ও রাজ্যের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। পুরী , কাশী , প্রয়াগ , বৃন্দাবন , হরিদ্বার , তিরুপতি , মাউন্ট আবু , উজ্জয়িনী , কন্যাকুমারী , দেওঘর -বৈদ্যনাথ , গয়া – বুদ্ধগয়া ,নবদ্বীপ ,গঙ্গার দু কূলে গড়ে ওঠা অসংখ্য জনপদ – মন্দির ছাড়া কল্পনা করতে পারেন ? মন্দির না থাকলে এই কোটি কোটী মানুষের ভাতের বিকল্প উৎস কিভাবে হতো ?
ঠিক এভাবেই একদিন অয্যোধ্যার আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটে যাবে শ্রী রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে । বলাই বাহুল্য আন্তর্জাতিক তীর্থ পর্যটনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠবে । অয্যোধ্যার টানে ভারতের অন্য তীর্থ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও সারা পৃথিবী থেকে ভক্তের ঢল নামবে ।স্রেফ ভাতের জোগাড় কখনও সভ্য মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না । স্বামী বিবেকানন্দের কথায় – মানুষের লক্ষ্য দেবত্ব অর্জন করা । সেই লক্ষ্যে পোঁছাতে গেলেও মন্দির প্রয়োজন।স্কুল , কলেজ , হাসপাতাল এসবের প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না কিন্তু মন্দির নির্মাণ স্কুল কলেজ নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন বাধা নয় । হিন্দু মন্দির শুধু পুজা অর্চনার জন্য নয় । কালজয়ী শাস্ত্র সমূহের পঠনপাঠন , উন্নত জীবন বোধের বিকাশ , মানসিক শান্তির উপায় , জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম আয়োজন এসবও মন্দিরকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে।মন্দির অন্ন যোগায় ও অন্নের সংস্থান করতে সমর্থ করে ।
সোমেশ্বর বড়াল (Someshwar Baral)