বিশেষ প্রতিবেদক
ইতিমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে । নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে বিভিন্ন খবরের কাগজ ও অন্যান্য গণমাধ্যমে বিগত কয়েক বছরের মতো এবারো বড় বড় করে খবর হয়েছে – ‘আল আমিনের’ (Al Amin) সাফল্য – ‘মিশনের ছাত্ররা’ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোন কোন স্থান অধিকার করেছে ইত্যাদি।কিন্তু কোথায় কোন স্কুলে এরা পড়ে , আল আমিনের কটা স্কুল আছে এরাজ্যে ? কোন বোর্ডের অনুমোদিত এইসব স্কুল ? সেগুলোতে কোন মাধ্যমে পড়ান হয় ? এসব প্রশ্ন গদ গদ মিডিয়া তোলে না। এরাজ্যে দূরের কথা , সারা দেশে এই আল আমিন মিশনের কোন সরকারী স্বীকৃত বোর্ড অনুমোদিত স্কুল নেই – এরা শুধু ছাত্রাবাস চালায় । বিশাল বিশাল সেই সব ছাত্রাবাসের পরিকাঠামো সরকারী স্কুল তো বটেই বহু নামী বেসরকারি স্কুলকেও হার মানায় । তাহলে এই ছাত্র ছাত্রী যাদের নিয়ে মিশন অহঙ্কার করে , বিজ্ঞাপন দেয় তারা কারা ? তারা মিশনের হোস্টেলে থাকা ছাত্র ছাত্রী যারা আল আমিনের হোস্টেল এ থাকে , সেখানেই ক্লাস করে আর বছরের পর বছর বিভিন্ন সরকারী স্কুল থেকে ‘রেগুলার’ পরীক্ষার্থী হিসাবে পরীক্ষা দেয়। সরকারিভাবে তারা ওই সমস্ত স্কুলের ছাত্র বা ছাত্রী কিন্তু আল আমিন এমনভাবে বিজ্ঞাপন দেয় বা বাংলার মিডিয়া এমনভাবে খবর করে যেন আল আমিন কোন স্কুল চালায় আর সেইসব স্কুল থেকেই এরা পরীক্ষা দেয় ।
হোস্টেল চালানো কি অপরাধ ? একদম নয় । বহু সংস্থা এভাবে হোস্টেলে ছাত্র ছাত্রী রাখে যারা অন্য সরকারী স্কুলে পড়ে । সরকারী স্কুলে ভর্তি না হয়ে কি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া যায় না ? অবশ্যই যায় । তাহলে আল আমীনের দোষটা কোথায় ? সরকারী নিয়মে কোন ছাত্র ছাত্রীকে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে পরীক্ষায় বসতে হলে সেই স্কুলে ভর্তি হয়ে , সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে , সেখানেই শিক্ষাবর্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাস করতে হবে । স্কুলের বাইরে থেকে ক্লাস করে পরীক্ষা দিলে প্রাইভেট বা বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসাবে গণ্য হতে হবে। এছাড়া মুক্ত বিদ্যালয় থেকে তারা পরীক্ষায় বসতে পারে । নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে পরীক্ষা দিলে যে ‘মর্যাদা’ থাকে প্রাইভেট বা বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসাবে তা থাকে না বলেই বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে তা চায় না । তাছাড়া আল আমীনের হোস্টেলে থাকা অভিভাবকরাও চাইবেন না যে তাদের ছেলেমেয়ে প্রাইভেট বা বহিরাগত পরীক্ষার্থীর তকমা সারা জীবন বহন করুক । এক্ষেত্রে তারা মিশনে ছেলে বা মেয়েকে রাখবেন না । সর্বোপরি বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা শুধুমাত্র সরকারী বোর্ড অনুমোদিত বিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র ছাত্রী হিসাবে পড়া ছেলে মেয়েরাই পেয়ে থাকে।
আল আমীন কি করে ? তারা তাদের হোস্টেল এ ছেলে মেয়েদের রাখে , একদম স্কুলের মত করে ক্লাস করায় , সংলগ্ন সংখ্যালঘু এলাকার কোন স্কুলে ছেলে মেয়েদের নাম লিখিয়ে রাখে কিন্তু অভিযোগ যে, ছেলে মেয়েরা সেখানে একদিনও যায় না এবং নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে পরীক্ষা দেয়। মজার কথা, যেই দেখা গেল কোন ছাত্র ছাত্রী খুব ভাল ফল করেছে অমনি তারা – ‘আমাদের ছেলে মেয়ে বলে’ –দাবী করতে থাকে।এটি সরকারী নিয়মের সম্পূর্ণ বিরোধী অথচ বছরের পর বছর তারা এটা করে চলেছে আর এক শ্রেণীর মিডিয়া উদবাহু হয়ে সেই খবর করে চলেছেন। সরকার শুধুমাত্র যে নীরব তাই নয় ‘শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের’ জন্য এই আল আমীনের কর্ণধারকে বহুবার সম্মানিত করেছে।
এত বিশাল পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন আল আমীন সরকারী বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নিজস্ব স্কুল খোলে না । আর্থিক লাভ বন্ধ হয়ে যাবে বলে ? আল আমীন এর সব ছাত্র ছাত্রী বিনা পয়সায় পড়ে না । আর্থিক লাভ তো দেশের হাজার হাজার বেসরকারি স্কুল করে কিন্তু তাদের স্কুলগুলোতো বিভিন্ন বোর্ডের অনুমোদিত । নিজেদের স্কুল থেকে ছেলে মেয়ে পরীক্ষা দিলে সেতো আরও গৌরবের হত। তাহলে কি বামফ্রন্ট বা তৃণমূল কোন সরকার এদের অনুমোদন দেয় না ? বি জে পি সরকার আসার অপেক্ষায় আছে এরা ? যে রাজ্যে ঢালাও মাদ্রাসা খোলার অনুমতি দেওয়া হয় সেখানে এই উত্তর হাস্যকর। তাহলে কেন তারা কোন বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে হোস্টেলগুলো বিদ্যালয়ে পরিণত করছেন না ? এর এক এবং একমাত্র কারণ কি তবে – সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির বাইরে থাকার জন্যই তারা স্কুল খুলছেন না? ‘আদর্শ ইসলামিক’ পরিবেশে এইসব হোস্টেলে ছাত্র ছাত্রীরা থাকে । শুধুই মেধার বিকাশ নয় সঙ্গে সঙ্গে ধর্মপথে যাতে মেধাবীরা থাকে সেই প্রক্রিয়াটিও এখানে চলে। যারা এই হস্টেলগুলো চালাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ সাহায্য দেন তারাও এই পূর্বশর্ত রাখেন । সরকারী অনুমোদন নিলে সরকারী সিলেবাস মানতে হবে , সরকারী নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে , সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে । সরকারী পরিদর্শকরা সেখানে যেতে পারবেন । তার থেকে এই ভালো । মধ্য শিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্থানীয় স্তরে কিছু লোককে ছলে , বলে কৌশলে ম্যানেজ করে এক সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া হবে যার মূল লক্ষ্য নিস্পাপ শিশুদের দেশের মুল ধারা থেকে বিছিন্ন রাখা।