কানপুরে মকানপুর গ্রামে গত 18 সেপ্টেম্বর এটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। দিনের বেলায় কয়েক হাজার মুসলিম পরিবার একটি হিন্দু পরিবারের উপর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে আক্রমণ করে। ক্লাস ফোরে পড়ে একটি ছেলে অনলাইন ক্লাস করার সময় অসাবধানতাবশত তার বাবার ফেসবুকে ইসলামবিরোধী কোন কিছু পোস্ট করে কিন্তু এই ঘটনার কথা না বাচ্চাটি বুঝতে পারে না, আর তার পরিবারের কোনো লোকজনও জানতে পারে না। কিন্তু পরের দিন সক বেলা তার বাড়ির ছাদে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মুসলিম বাচ্চাটির পরিবারকেকে আক্রমণ করে। ভেঙ্গে তছনছ করে দেয় তাদের ঘরবাড়ি। পরিবারের সবাইকে আক্রমণ করে, বাড়ির গয়নাগাটি জিনিসপত্র লুট করা হয়। বাচ্চাটির বাবা অলক গুপ্ত অত্যন্ত গুরুতর আহত অবস্থায় হসপিটালে ভর্তি। অলক গুপ্তের বৃদ্ধ মা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসুস্থ বাবা আক্রান্ত হয় বিশাল মুসলিম জনতার হাতে। এই ঘটনার পর 21শে সেপ্টেম্বর বিলহৌর পুলিশ স্টেশনে একটি এফআইআর করা হয়। 58 জন লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। এই ঘটনা নিয়ে বজরং দলের উত্তরপ্রদেশের সেক্রেটারি রামজি তেওয়ারি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে বলেন যে এই অঞ্চলে ধীরে ধীরে হিন্দুদের শান্তিতে বসবাস করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছে। একটা সামান্য ভুলবশত, অসাবধানতাবশত ফেসবুক পোস্টের জন্য একটা পরিবারকে “মার ডালো, কাট ডালো” বলে যেভাবে কাতারে কাতারে আশেপাশের মুসলমানরা হিংসাত্মক ভাবে আক্রমণ করেছে, যেভাবে তারা দাঙ্গা তৈরি করার চেষ্টা করেছে, তা সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝিয়ে দেয় যে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় কারণে ঠিক কতটা উগ্র, বিদ্বেষী হয়ে পারে। এরা যে কোনরকম ভাবে কোন কথাই, না তারা বোঝে না তারা বোঝার চেষ্টা করেছে। তারা সব রকম ভাবে পরিবারটিকে হেনস্থা করেছে সম্পূর্ণ দিনের আলোয়। একটা হিন্দু পরিবারকে কোনরকম কারন ছাড়াই যেভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে, তার প্রধান কারণ হিন্দুরা সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়া। ওর বাড়িতে বাড়ির বাইরে খবরের উদ্দেশ্যে যে হবে হামলা হবার সময় তা সংবাদ মাধ্যমের কাছে তুলে ধরার জন্য স্থানীয় সাংবাদিক কানপুরের লবকুশ কাটিয়ার নৃশংস ভাবে আক্রান্ত হয়, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝিয়ে দেয়। আক্রমণের পরিমাণ এত ভয়ঙ্কর ছিল যে কাটিয়ার এখন কানপুরে একটি হসপিটালের আইসিইউতে ভর্তি। পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই ঘটনা এতটাই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে যে হিন্দুরা সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ায় নিজেদের অত্যন্ত অসুরক্ষিত অনুভব করছে। মকানপুর এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে যে কয়েক ঘর হিন্দু পরিবারের বসতি আছে। 3 ঘন্টায় একটা ঘটনা কিছু পরিবারের উপর যেভাবে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা নতুন কিছু নয়। এমনকি যারাই তাদের সাহায্য করতে এসেছে তাদের মোবাইল ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ পর্যন্ত অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকেছে উন্মত্ত ধর্মোন্মাদ লোকের সামনে। আক্রান্ত পরিবারকে সাহায্য করেনি যতক্ষণ না পর্যন্ত অলক গুপ্তার অবস্থা খুব গুরুতর হয়েছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, ওই বাড়ির যে মন্দির ছিল সেটা ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয় এবং তার সঙ্গে মূর্তিও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যেখানে হিন্দু সংখ্যালঘু সেখানে হিন্দু কখনোই সুরক্ষিত নয়। একটা সাধারণ ভুল বোঝাবুঝি থেকে ইসলাম বাঁচানোর নাম করে যেভাবে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে তাতে গৃহহীন হয়ে যায় অসংখ্য মানুষ আর বাকিরা গৃহহীন হবার ভয়ে ভূমিহীন হবার ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। বাড়ির মেয়েদের ন্যূনতম সুরক্ষা দিতেও প্রশাসন অসহায় বোধ করে, তখন জমি জায়গা ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া ছাড়া তাদের কাছে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প থাকে না। যেখানেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানেই ইসলাম বিপদে আছে এই হুজুগ যেন হিন্দু তাড়ানোর সহজ উপায় হয়ে গেছে। হিন্দুর জমি জায়গা থেকে এই ভাবে বেদখল করে, ব্যবসা ভয় দেখিয়ে কেড়ে নেয়, মারপিট করে লুটপাট করে, মেয়েদের উপর অত্যাচার করে দখল করে নেয় হিন্দুদের বাড়ি, জমি, ব্যবসা সব। হিন্দু শূন্য হয়ে যায় এভাবেই পরিকল্পিত উপায়ে। এর থেকে কি শুধুমাত্র উগ্র মৌলবাদীর সংজ্ঞা নিরূপণ করা উচিত নাকি আসলেই ধর্মের নামে বিস্তার নীতি হিসেবে দেখা উচিত? এক হাজার বছর আগে যে আগ্রাসনের শুরু হয়েছিল, স্বাধীন ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু যে মুহূর্তে সংখ্যালঘু হয়ে যায় তখন তার সুরক্ষা সুরক্ষা দেবার জন্য প্রশাসন থেকে সংবিধান সবাই এত নীরব থাকে কেন?
দেবযানী হালদার (Debyani Haldar)