কোন মৎস বিক্রেতাকে যদি সরকার বলে তুমি দিনে দুই কিলো মাছ বেঁচতে পারবে আর তার দাম কিলোপ্রতি একশো টাকা হবে, বাজারে তার প্রভাব কি হবে?
ভোটাররা মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভীষন খুশি হয়ে তাকে পুনর্নির্বাচিত করার জন্য হয়তো প্রস্তুত হবেন সেদিনের মত l কিন্তু ভোর রাতে উঠে মাছ নিতে কোন মৎস বিক্রেতা যাবে? পাইকারি বাজার থেকে যারা মাছ নিয়ে আসতো, তারা কাজ হারাবে l পাইকারি বাজার নদী, সাগর, আরত থেকে মাছ আনবে না, জেলে মাছ ধরবে না l আর মধ্যবিত্ত ভোটার মাছ কিনবে কালোবাজার থেকে l বুদ্ধিজীবিরা দোষ দেবেন সেই বড়নগর স্টেশনের চাওয়ালাকে, যিনি জীবনে মাছ খাননি l আর রাত আট টায়, ‘ঘন্টা খানেক….. ‘ এ রাজনৈতিক নেতারা ঘোলা জলে মৎস বিক্রেতা, পরিবহন সংস্থা, আরতের কর্মী, জেলেদের বিপদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু ত্যাগ করে নৈশ ভোজে বসবেন l
দুর্ভাগ্যের, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পরিবহন অর্থনীতি ঠিক এই তত্বের উপরে দাঁড়িয়ে l আজকের দিনেও 90% পরিবহন বেসরকারি l কলকাতার বাইরে 1% সরকারি পরিবহন l এই অবস্থায় উনি ঘোষণা করলেন বাসে 20 জন লোক চড়বে, কিন্তু ভাড়া বাড়বে না l ধন্য ধন্য করছে রাজ্যবাসী l
কিন্তু কাল? কে দেবে ব্যাংকের EMI? কে দেবে রোড ট্যাক্স? তেলের খরচ চুকিয়ে ড্রাইভার, কন্ডাকটর, হেল্পারের বেতনের জন্য বাঁচবে কিছু? এই কর্মীরা যদি পরিষেবা বন্ধ করে, রাস্তায় দুধ, সবজি বেঁচতে বসে, লোকজন কাজে যাবে কিভাবে? এর মধ্যেই বহু সংস্থা তাদের কর্মীদের ছাটাই শুরু করেছে l রাজ্যের বৃহত্তম মিডিয়া কোম্পানিগুলিও ছাটাই ও বেতন হ্রাস শুরু করেছেন l খড়দহর সাংবাদিক বি বি দি বাগে যাবে কিভাবে? রাজ্যের শ্রমদপ্তর এখনো কোন পদক্ষেপ নিয়েছে? 10000 বাস যদি ব্যাংকের কাছে তাঁদের চাবি সহ গাড়ি জমা করে আসে, ব্যাংক সেগুলি এই বাজারে বেচে তাদের মূলধন তুলতে পারবে l আপনার এই নির্দেশের পর কে কিনবে ওই বাস? আবার NPA l NPA হলে তো অভিরূপ সরকার মশাই নির্মলাজিকেই দোষ দেবেন l এছাড়াও আছে পেট্রল ডলারদের বাজার, গাড়ি মেইনটেন্যান্স এর গ্যারেজ ও তাদের কর্মীদের রুটি রুজি l
একটা জনমুখী সিদ্ধান্ত l এতগুলো লোকের জীবনে অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে l কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নির্বিকার l রাজ্যে নয় বছরে একটা শিল্পও আসেনি, ওনার 2011 র নির্বাচনী ইস্তেহারের কিছু কথার জন্য l কিন্তু উনি কিছুতেই ওনার নীতির পরিবর্তন করেন নি l ইতিমধ্যে হলুদ ট্যাক্সিকে গিলে খেয়েছে ওলা, উবের l ওলা, উবের যেখানে স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে ভাড়া ঠিক করে, সেখানে হলুদ ট্যাক্সিকে বসে থাকতে হয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের উপর l
এই অবস্থায় রাজ্যের হাতে তিনটি রাস্তা :
- বাসগুলিকে কিনে নিন ও কর্মচারীদের অন্ততঃ অস্থায়ীভাবে চাকরি দিন l
- নতুবা, বাসের লোনের গ্যারান্টি দিন ও তেলের খরচ সরকার দিক l
- মালিকদের ভাড়া ঠিক করতে দিন l দরকারে কোন নিরপেক্ষ Cost Accountant’ নিযুক্ত করুন l
এভাবে, উপর থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে কোভিৎ-উত্তম সময়ে রাজ্যের অর্থনীতির পুনরুত্থানে এটা বড় অন্তরায় হয়ে দাড়াবে l
লেখক : কৌটিল্য (Kautilya)