” গরুকে রুটি খাওয়ানো ” কাস্টোমারের চেয়ে “রুটি দিয়ে গরু খাওয়া” কাস্টোমার বেশী

প্রস্তাবিত “কাউ-হাগ্ ডে” পালন নিয়ে শ্রীযুক্ত চন্দ্রিলবাবু ও বঙ্গমিডিয়ার কটাক্ষ ও ” গোরুকে জড়াতে গেলে তার কন্সেন্ট আছে কিনা ” — ইত্যাদি বলতে থাকেন ৷
সেক্যু মাকুদের সবজান্তারা শুধু জড়িয়ে ধরার কন্সেন্ট নিয়ে বাতেলাবাজীতে বিভোর কিন্তু ‘জবাই’ করার কন্সেন্ট বা অনুমতি নিয়ে কোনো কথা বলার হিম্মৎ নেই ৷
কারন বর্তমানে বাংলাসাহিত্যবাজারে ” গরুকে রুটি খাওয়ানো ” কাস্টোমারের চেয়ে “রুটি দিয়ে গরু খাওয়া” কাস্টোমার বেশী !

তাই না চন্দ্রিলদা & Co. ???

এই বাংলার সেক্যুলার ও কম্যুনিস্ট দের জন্য এই আর্টিকেল —

মারিয়া রোজা, মারিয়া গার্সিয়া ,ক্লারিসা , উব্রে ব্ল্যাঙ্কা! এসব কারা বলুন তো ??

স্প্যানিশ কোন সুন্দরী ফ্ল্যমেঙ্কো ড্যান্সারদের কথা ভাবছেন ?? তা কিন্তু নয় । নামগুলি স্প্যানিশ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রচলিত। কিন্তু এই সুন্দর সুন্দর নামগুলি কিউবার কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো তার প্রিয়তমা গাভীগুলির জন্য রেখেছিলেন।

কিউবা বললেই হভানা চুরুটের নাম প্রায় সমস্ত পোঁয়াপাকা পেটরোগা বাঙালি কমিউনিস্টবাচ্চাই জানে কিন্তু তারা যেটা জানে না সেটা হচ্ছে এই যে তাদের আদর্শ বিপ্লবী নেতাদের একজন মি.ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কোন চুরুট বা বিয়ারের প্রতি আসক্তি ছিল না কিন্তু তীব্র প্যাশন ছিল গাভী এবং গরুর দুধের প্রতি। চিলির একজন কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন লেখক জর্জ এডোয়ার্ড হাভানায় ক্যাস্ত্রোর ফার্ম হাউসে গিয়ে ওনার অদ্ভুত প্যাশনের নমুনা দেখে বেশ অবাকই হয়েছিলেন । কারণ একজন আর্মি ইউনিফর্মে থাকা দাঙ্গাবাজ নেতা ,যার ড্রয়িংরুমের শোকেসে বড় বড় বিয়ারজাগ সাজানো রয়েছে তিনি কিনা আর পাঁচজনের মত জাগগুলি বিয়ারপানের জন্য ব্যবহার করেন না ,করেন দুধপান করার জন্য! এডোয়ার্ড লিখেছেন,যেমন গরুও ছিল অনেক ,তাদের নামও ছিল আলাদা আলাদা।

এডোয়ার্ড তাঁর হাভানাভ্রমণের স্মৃতিতে লিখেছিলেন,- আলাদা আলাদা গাভীর দুধ আলাদা আলাদা বোতলে ভরা ছিল । ফিদেল কেবল একেকটা বোতল থেকে দুধ ঢেলে নিয়ে একটু একটু চুমুক দিয়ে বুঝে যাচ্ছিলেন কোনটা কোন গাভীর !

“Fidel was asking which cow was the milk from – The cows had delicate feminine names like Maria Rosa, Clarisa, Maria Gracia – but he pretended to know the cow just by tasting her milk. ‘Ah, this one,’ He exclaimed: ‘This one tastes like almonds!’ and he passed us the jugs to taste the milk, until there was a total confusion. “

ফিদেলের গোদুগ্ধের প্রতি এহেন প্যাশনের মূলে রয়েছে তাঁর শৈশব। তাঁর পিতার ছিল বিরাট গোশালা । ভুষি,বিচালি ,গোময়,গোমূত্রের এসেন্স এবং পৃথিবীতে স্বর্গের অমৃতের মত সুধাভাণ্ডারের যোগান, ক্যান ভর্তি অফুরান গোদুগ্ধ। যাঁরা এর স্বাদ ও স্বাস্থ্যবৃদ্ধিতে এর গুরুত্ব বোঝেন তাঁরা কখনই এই নিরীহ পরোপকারি গৃহপালিত প্রাণীটিকে অবহেলা করতে পারেন না -নির্যাতন করা তো দূর কি বাত।

ফিদেল কাস্ত্রোও ক্ষমতায় আসার পরে সরকারের যে ডিপার্টমেন্টটাকে আলাদাভাবে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন সেটা হল ডেয়ারি ফার্ম। ফিদেলের পিতা আ্যঞ্জেল ক্যাস্ত্রো আদতে ছিলেন স্পেনের গার্সিয়া প্রদেশের বাসিন্দা ।স্প্যানিশ আমেরিকান যুদ্ধের সময়ে স্প্যানিশ আর্মির অংশ হিসাবে ল্যাতিন আমেরিকায় পদার্পন করেন এবং কিউবায় এক বিরাট পরিমাণ জমিতে কফি ও তামাকের ফার্মিং শুরু করেছিলেন । কিন্তু যে জিনিসটা ত্যাগ করেন নি সেটা হল পশুপালন ও গোচারণের নেশা।তাঁর কাছ থেকে গল্প শুনে শুনেই ফিদেল স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষমতা দখল করতে পারলে সে যেদেশই হোক সেখানে ইউরোপীয় ব্রিডের গাভী নিয়ে এসে দুধের বন্যা বইয়ে দেবেন । এই স্বপ্ন একসময়ে তাকে ক্ষমতাদখলের পরে অনেক খামখেয়ালিপনায় প্রবুদ্ধ করেছিল। হল্যান্ডের বিখ্যাত হলস্টাইন ব্রিডের গাভী নিয়ে গিয়েছিলেন কিউবায় সরকারি খরচে । কিন্তু ঠান্ডার দেশের গরু ট্রপিক্যাল ক্লাইমেট সহন করবে কীভাবে ? তারজন্য কিউবায় বানানো হয় অনেক বাতানুকূলিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গোশালা । কিন্তু তাতেও সুরাহা হচ্ছিল না বলে স্থানীয় দেশী প্রজাতির সঙ্গে হলস্টাইনের সংকরায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্যাস্ত্রো। তাঁর এই খামখেয়ালিপনার কারণে অনেক গাভীকেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল । কিন্তু ফিদেল ক্যাস্ত্রোর গাভীদের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের বাসস্থানে নির্মাণের জন্য যে নিবেদিতপ্রাণ প্রচেষ্টা দেখতে পাওয়া যায় তা নিঃসন্দেহে শিক্ষনীয় ।

ভারতীয় সংস্কৃতির কতটা খবর তিনি রাখতেন তা বলা কঠিন কিন্তু গোমাতাজ্ঞানে পূজো করা আর এঁড়েবাছুর দুধ ছাড়লেই কষাইদের হাতে তাদেরকেই তুলে দিতে অভ্যস্ত ভারতীয়দের ক্যাস্ত্রোর এই দিকটা কাল্টিভেসান করা উচিত ।

তিনি দুধ, চীজ ,পনীর জাতীয় দুগ্ধজাত প্রোডাক্টের প্রতি প্যাশনেট ছিলেন । যখন বুঝেছিলেন স্পেন ,হল্যান্ড বা ফ্রান্সের সঙ্গে এই বিষয়ে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারবেন না ,তখন ফোকাস বাড়িয়েছিলেন আইসক্রিম বানানোয়।কিন্তু তিনি বীফলোভী বিপ্লবী ছিলেন না । গাভীরা মারা গেলে সমাধিস্থ করার নির্দেশ দিতেন ।

হাইট্ অফ দ্য স্টোরি ~ ক্যাস্ত্রোর গোশালায় উব্রে ব্ল্যাঙ্কা নামে এক বিপুলাকায় গাভী ছিল । যৌবনে ব্ল্যাঙ্কা দিনে 109 লি.পর্যন্ত দুধ দিয়েছিল। এই গাভীটি যখন মারা যায় তখন ক্যাস্ত্রোর নির্দেশে পূর্ণ রাস্ট্রীয় মর্যাদায় সামরিক নিয়মকানুন মেনে তাকে সমাধীস্থ করা হয় । রাষ্ট্রীয় শোকে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় । হাভানা প্রদেশের লস ন্যরাঞ্জোসে ব্ল্যাঙ্কার এক সুবিশাল মর্মর মূর্তীও স্থাপন করা হয়।

( পরিবেশকের সংযোজন : ক্যাস্ত্রো বাবু দুধেল গরুদের জন্য এসব করতে পেরেছিলেন , কারন বাঙালী সেক্যুলার ও বাং-আলি কম্যুনিস্টদের মত তাঁকে দুধেল ভোটারদের পরোয়া করতে হয়নি ৷ )

ছবিতে????

  1. কাস্ত্রো তাঁর প্রিয়তমা গাভীর সঙ্গে
  2. কিউবার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গোশালা
    3.কাস্ত্রোর প্রিয়তমার প্রতিমা!
  3. কিউবার ডাক টিকিটে গাভী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.