এই বাংলার মনীষী দের শিক্ষা-ভাবনা কে ভিত্তি করে প্রণীত হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি – ২০২০ রাজ্যের হতাশাগ্রস্ত যুবসমাজ কে আত্মনির্ভরতার পাঠ শেখাবে।

দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসনে জর্জরিত শিক্ষিত বাঙালির কাছে শিক্ষা যখন কেরানি সৃষ্টির নামান্তরে পর্যবসিত হয়েছিল ঠিক সেই সন্ধিক্ষণে স্বামীজীর শিক্ষা-চিন্তন এক নতুন দিশা দেখিয়েছিল। স্বামীজীর মতে যে অনুশীলন দ্বারা ইচ্ছা শক্তির প্রবাহ ও অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রাধীনে আসে এবং ফলপ্রসূ হয় তাকেই বলা হয় শিক্ষা। তিনি বলেন কেউ কাউকে কিছু শেখাতে পারে না। শিক্ষা উপলব্ধি বা জাগরণ ছাড়া আর কিছু নয়। যা করা যায় তা হ’ল উপলব্ধির পথে সহায়তা করা। অর্থাৎ স্বামীজীর মতে বিভিন্ন জাগতিক বিষয়ে জ্ঞান ও কর্ম দক্ষতা অর্জন করে অর্থ উপার্জনের যোগ্যতা লাভ করার সাথে সাথে লোক কল্যাণে ইচ্ছাসমুজ্জ্বল, বজ্রদৃঢ় দেবোপম চরিত্রের অধিকারী হয়ে ওঠা কেই শিক্ষা বলা যেতে পারে।

আবার শিক্ষা নিয়ে কবিগুরুর চিন্তাভাবনার নির্যাসও ঠিক একই দিকে ইঙ্গিত করে। কবিগুরু উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কেরানি তৈরীর বিরোধিতা করে সৃজনশীলতার প্রকাশের মাধ্যমে পূর্ণ মানুষ তৈরীর কথা বলেছেন। আর ঠিক এখানেই নতুন প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি এই দুই মনীষীর শিক্ষা ভাবনার সাথে হুবহু মিলে যায়। স্বাধীনতার পর এই প্রথম কবিগুরুর চিন্তন অনুসরণ করে শিক্ষকদের মর্যাদা কে গুরুত্ব সহকারে সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রথম হস্তশিল্পী, কৃষক, তন্তুবায় সহ চিরাচরিত বিভিন্ন পেশার মানুষকে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে তারা এখন থেকে প্রস্তাবিত ক্লাস্টার স্কুলে ক্লাস নিতে পারবেন। জ্ঞান সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্লাস্টার গঠনের বিষয়টি নিজ গুণেই অনন্য সাধারণ। এই নয়া ব্যবস্থা শিক্ষকদের প্রকৃত যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবে।

এই শিক্ষানীতি স্বামীজীরও স্বপ্ন পূরণ করবে। স্বামীজী প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার মেলবন্ধন নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি স্বামীজীর সেই ভাবনারই সার্থক প্রতিফলন। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু বস্তুমুখী শিক্ষার বিস্তার নয়, বরং তাতে প্রাণেরও সঞ্চার ঘটাবে। নয়া ব্যবস্থায় কোন পাঠক্রমের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত হওয়া বা সেই পাঠক্রম থেকে বেরিয়ে আসার সংস্থান থাকায় তা ঘুরিয়ে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রেও স্বামীজীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি মনে করতেন গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা যদি শিক্ষার কাছে পৌঁছতে না পারে তাহলে শিক্ষাকে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রাক্ প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে বিভাজন করার ফলে যথাযথভাবে শিক্ষাদান সম্ভবপর হবে এবং আর্টস, কমার্স ও সাইন্স শাখার বস্তাপচা দমবন্ধকর ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে একজন শিক্ষার্থীকে তার পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে পড়ার সুযোগ করে দেওয়াটাই এই শিক্ষানীতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রয়াস।

শুধুমাত্র পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে জানা বা উপলব্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় ছাত্র সমাজের সঠিক ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যেই এই নীতি প্রণীত হয়েছে। এই জানা বা উপলব্ধির বিষয়টি পাঠ্যসূচির বাইরেও সামিল রয়েছে, যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন। পদ্ধতির পরিবর্তে আগ্রহ, ব্যবহারিকতা, আত্তীকরণ এবং সম্পাদনের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, ঠিক যেমনটি স্বামী বিবেকানন্দ চেয়েছিলেন। স্বামীজি বলেছিলেন, “Education is not the amount of information that we put into your brain and runs riot there, undigested, all your life. We must have life building, man making, character making assimilation of ideas. If you have assimilated five ideas and made them your life and character, you have more education than any man who has got by heart a whole library.”

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বে দেশের আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েত সাড়ে বারো হাজার স্থানীয় প্রশাসন এবং ৬৭৫ টি জেলা থেকে গৃহীত দুই লক্ষ পরামর্শকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরাকাষ্ঠায় বিচার বিবেচনা করেই এই শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির ছয় শতাংশ শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করবে। বিদেশে মেধা চলে যাওয়ার যে জ্বলন্ত সমস্যায় এ রাজ্য তথা সারাদেশ ভুক্তভোগী, সেই সমস্যা নিরসনে নতুন এই নীতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এদেশে ক্যাম্পাস খোলার পথ প্রশস্ত করবে।

একবিংশ শতাব্দীতে অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল ব্যবস্থার সাথে তাল রেখে ছাত্র-যুব সমাজের ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করা, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নতুন দিশার উন্মেষ ঘটানো, দেশকে সারা বিশ্বের সামনে পুনরায় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা এবং পুনর্জাগরিত ভারতীয় সমাজের সার্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা কে বাস্তবায়িত করার এই ঐকান্তিক প্রয়াস কে সমস্ত রাজনৈতিক বৈরিতার ঊর্ধ্বে উঠে সাগ্রহে আপন করে নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রে এই শিক্ষা নীতির প্রভাব নিশ্চিত ভাবেই সুদুরপ্রসারী এবং ফলদায়ী হবে। কারণ বিগত কয়েক দশক ধরে ক্রমাগত সূক্ষ্ম মগজাঘাতের দ্বারা সংস্কৃতি সচেতনতার নামে বিকৃত ন্যারেটিভ ছাত্র-যুব সমাজ মননে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। সুচারুভাবে বিপ্লবের নামে সমাজকে তোয়াক্কা না করার বেপরোয়া মনোভাব এবং সেই বিপ্লবের আড়াল নিয়েই রাজনৈতিক মদতে অশ্লীলতা ও অসভ্যতার দিকটাকে সহজেই গ্রহণ করে নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। এভাবেই তারা নিজেদেরকে স্বাধীন মনে করছে। ঠিক এ কারণেই কয়েক দশক আগে এরাজ্যে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি হয়ে যান, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া কবি হ’ন আর সেই একই সংস্কৃতি বহন করে আজ এরাজ্যে খোদ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র সংস্কৃতি ধুলিস্যাৎ করে রোদ্দুর রায় সেলিব্রিটি হয়।

স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ-ভাবনাকে প্রতিক্রিয়াশীল সামাজিক শক্তি এবং শ্রেণী সংগ্রামের পথে বাধা বলে মূল্যায়িত করা এদেশের বামপন্থী গুরু মানবেন্দ্রনাথ রায়ের অধুনা শিষ্যরা ভারতীয় মূল্যবোধ এবং বৈশ্বিক মান অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই শিক্ষা নীতির বিরোধিতা যে করবেই তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। অবাক লাগে যখন দেখি জাতীয় কংগ্রেসও বামেদের সাথে হাত মিলিয়ে নয়া শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে। অথচ এরাই ইউপিএ-২ জমানায় চৌত্রিশ বছরের পুরনো শিক্ষানীতির সংস্করণ করতে চেয়েও শুধুমাত্র সঠিক দিশা ও আদর্শের অভাবে করতে পারেননি। ইউপিএ-২ জমানার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শশী থারুরের বক্তব্যেই তা পরিষ্কার ধরা পড়ে। তিনি বলেন, “মানবসম্পদ ও উন্নয়ন মন্ত্রকে আমার সময় থেকেই ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিকে সংশোধন করে একবিংশ শতাব্দীতে আনার পক্ষে তদ্বির করেছিলাম। আমি খুশি যে মোদী সরকার অবশেষে সেই সাহসটা দেখিয়েছে, যতই সেটা করতে ছয় বছর সময় লাগুক না কেন।” এর পরেও আমরা দেখছি জাতীয় কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব বিরোধিতার নামে অদ্ভুত আচরণের মাধ্যমে নিজেদের ক্রমাগত হাস্যাস্পদ করে তুলছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির এরূপ মূল্যবোধ রহিত দিশাহীন রাজনীতি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তার ভিত্তিতেই নড়বড়ে করে তুলছে। এ অতি দুর্ভাগ্যের।

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন স্বাবলম্বন অর্জনের পথে মূল অন্তরায় টি কে। মধ্যযুগীয় গোঁড়ামি আর কুসংস্কারের ব্যাপক প্রভাবে প্রাচীন যুগের উন্নত চিন্তাভাবনার দ্বার ক্রমেই রুদ্ধ হয়েছে। দু’টাকার কেরানিগিরিতেই মেকি বিপ্লবী চক্র শুরু ও শেষ হওয়া অলস কর্মবিমুখ বাঙালী কে কলম পেষার চেয়ে ব্যবসা করে উন্নতির শিখরে পৌছানো ও আত্মনির্ভরতার রাস্তা তিনি দেখিয়ে গেছেন। শিক্ষায় সামান্যরূপে পাশ্চাত্য যোগ থাকলেই যেখানে বস্তুবাদী ইকোসিস্টেমের প্রবক্তারা সনাতনী সংস্কৃতির মূল ভিত্তি সামগ্রিক মানব দর্শন কে অস্বীকার করে আত্মপ্রসাদ লাভের সস্তা ও মেকি প্রচেষ্টায় নিজেকে নিমগ্ন করে তোলেন, সেখানে রসায়নে তাঁর কৃতিত্বের জন্য নাইট উপাধি ও মাস্টার অফ নাইট্রাইট উপাধিতে ভূষিত, পাশ্চাত্য থেকে ডিএসসি প্রাপ্ত, মারকিউরাস নাইট্রাইটের আবিষ্কর্তা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সনাতনী সভ্যতার সুপ্রাচীন গৌরবোজ্জ্বল বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্য কে তুলে ধরলেন A History of Hindu Chemistry এর প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড রচনার মাধ্যমে। ধাতু সঙ্কর তৈরিতে প্রাচীন ভারত যে অগ্রণী ছিল; চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতায় উল্লেখিত অস্ত্রোপচারের সূক্ষ্মাগ্র যন্ত্র যেমন স্ক্যালপোল বা ল্যানসেট ছিল তার প্রমাণ।প্রকৃত ইতিহাস বিমুখ আত্মবিস্মৃত জাতির আপন সুপ্ত গরিমা পুনরুত্থানের এই মহতি প্রচেষ্টা চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মানব জীবনের অপরিহার্য আধ্যাত্মিক প্রবণতা কে ক্ষেত্রবিশেষে (শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে) যারা নিজেদের স্বার্থে অস্বীকার করে চলে, তাদের উদ্দেশ্যে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জীবনের একটি ছোট্ট ঘটনা উল্লেখ করবো। আচার্য আমন্ত্রিত হয়ে, প্রাচীন কালের হিন্দু রসায়ন চর্চার উপর লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সেই হলে একজন বিলেত থেকে সদ্য আসা ইংরেজ অধ্যাপকও ছিলেন। প্রাচীন যুগে মাটির ভান্ড ব্যবহার করে কিভাবে বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করে পাতন ইত্যাদি প্রক্রিয়া দ্বারা রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করা হত, আচার্য রায় বোর্ডে সে-সব যন্ত্রপাতির ছবি এঁকে বর্ণনা করছিলেন। সেই সময় ঐ ইংরেজ অধ্যাপক তাচ্ছিল্যভাব দেখিয়ে হাসাহাসি করছিলেন, এবং এই ঘটনা আচার্যের নজর এড়ায়নি। তিনি বক্তৃতার ঐ অংশটি শেষ করে, কিছুটা মকরধ্বজ হাতে নিয়ে ঐ অর্বাচীন ইংরেজ অধ্যাপকের কাছে গিয়ে মকরধ্বজের গুনগান করলেন। দুহাজার বছর পূর্বে তা কিভাবে প্রস্তুত করা হত এবং কিভাবে সেই একই পদ্ধতিতে তা আজও প্রস্তুত করা হয় এবং কেন অনেক ইউরোপীয় চিকিৎসকই তা ব্যবহার করে থাকেন, তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়ে আচার্য বললেন,”বন্ধুগণ, আজ হতে দু’হাজার বৎসর পূর্বে সেকেলে যন্ত্রপাতির সাহায্যে ভারতবাসীরা এই অপূর্ব ঔষধ প্রস্তুত করে মানবের কল্যাণার্থে ব্যবহার করেছেন, রোগে শান্তি দিয়েছেন– এখনকার উন্নততর যন্ত্রপাতির সাহায্যেও এর চেয়ে বিশুদ্ধ resublimed mercuric sulphide তৈরি হয়নি। হিন্দুরা সামান্য মাটির ভান্ডে এরূপ বিশুদ্ধ রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি করেছিলেন কোন সময়ে- হাজার বছরেরও বেশি পূর্বে, যখন আমার ঐ বন্ধুটির (ইংরেজ অধ্যাপককে দেখিয়ে) পূর্বপুরুষেরা পশুচর্মে লজ্জা নিবারণ করতেন এবং বন্য ফল খেয়ে জীবন ধারণ করতেন।” আচার্য রায়ের এই কথা শোনার পর হলের শ্রোতারা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানালে, ইংরেজ অধ্যাপকটি লজ্জায় হল ছেড়ে পালিয়ে যান। দূর্ভাগ্য সমগ্র জাতির যে বিগত সত্তর বছর ধরে বিকৃত বাম শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের নিজ উন্নত বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কে সুকৌশলে ভুলিয়ে রেখে এক ভ্রান্ত চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার শরিক করে তুলেছে। নতুন শিক্ষানীতি এর অবসান ঘটাবে।

বাঙালি মনীষী দের শিক্ষা দর্শন কে ভিত্তি করে যে শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে, শুধুমাত্র সস্তা রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে এবং সংবিধানের যৌথ তালিকার অনৈতিক সুযোগ নিয়ে এ রাজ্যের বর্তমান শাসকদল যদি নিজেদের মননশীলতার অভাবজনিত কারণে তাকে দেশের সার্বিক শিক্ষানীতি না ভেবে কোন নির্দিষ্ট সরকারের শিক্ষানীতি ভেবে বসে এর বিরোধিতা করে, তবে তা বাংলার ছাত্র-যুবসমাজকে সম্ভাব্য নবজাগরণের পথ থেকে বিচ্যুত করে অনিবার্যভাবে ধ্বংসের পথে, বিকৃতির পথে নিয়ে যাবে। সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রার্থনা করি অবিবেচক বিরোধিতার বিনাশ ঘটুক, শুভবুদ্ধির উদয় হোক; প্রকৃত মানুষ ও আত্মনির্ভর ভারতীয় সমাজ গড়ে উঠুক।

ডঃ তরুণ মজুমদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.