উদ্ধার ব্ল্যাক বক্স, কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনায় উঠে আসছে নানা তথ্য

কেরলের (Kerala) কোঝিকোড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় উঠে আসছে নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য। কোঝিকোড় বিমানবন্দরটি ‘টেবল টপ’-এ হওয়ার জন্য বিমান ওঠানামায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। রানওয়ের দৈর্ঘ্যে ছোট হওয়ায় বোয়িং ৭৭৭ এবং এয়ারবাস এ৩৩০-সহ বহু বড় বিমান এই বিমানবন্দরে ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছিল। রানওয়ের শেষে গভীর খাদ, ফলে বিপদের একটা সমূহ সম্ভাবনা থাকত সব সময়ই! শনিবার সকালেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হয়েছে। ডাইরেক্টেরট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) সূত্রে এমনটাই জানানো হয়েছে। অসামরিক বিমান মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ডিজিটাল ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে এয়ারক্রাফ্ট এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শনিবার সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন। ঘটনাস্থল সরেজমিনে দেখার পর তিনি বলেন, “কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” অন্য দিকে, উদ্ধারকাজের জন্য মালাপ্পুরম এবং ওয়নাড থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর(এনডিআরএফ) দুটি  এবং সিআইএসএফ-এর একটি দল এ দিন সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।

অসুস্থদের দেখতে হাসপাতালে গেলেন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী
শনিবার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে আসেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। পরে কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দেখতে যান রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
দুর্ঘটনাস্থলে বিমানমন্ত্রী, খতিয়ে দেখলেন সামগ্রিক পরিস্থিতি
সামগ্রিক পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে শনিবার বিমান দুর্ঘটনাস্থলে যান বিমান মন্ত্রী। অসামরিক বিমান আধিকারিক-সহ অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

১০ বছর আগের স্মৃতি উস্কে দিল
এই বিমান দুর্ঘটনায় ২০১০ সালের মেঙ্গালুরু বিমান দুর্ঘটনার ছায়া দেখছেন অনেকেই। বিমান মন্ত্রী জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে মেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের মতো দুর্ঘটনা হয়নি, এজন্য আমরা সত্যিই ভাগ্যবান। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২২ মে দুবাই থেকেই মেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে এসে নামার সময়ে পিছলে যায় এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বিমান। পাহাড়ের পাশে পড়ার পরে সেটিতে আগুন ধরে যায়। ১৬০ জন যাত্রী ও ৬ জন পাইলট-বিমানকর্মীর মধ্যে ১৫৮ জন মারা যান।
মৃত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা কেন্দ্রের
বিমান মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে দিয়ে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হবে। গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ এবং সামান্য আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে আর্থিক সাহায্য করা হবে।
শুক্রবার দুপুর ২টোর সময় দুবাই থেকে রওনা দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার আইএক্স১৩৪৪ বিমানটি। কোঝিকোড়ের কারিপুর বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল সন্ধে ৭টা বেজে ২৭ মিনিটে। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমানটির অবতরণে সমস্যা হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ জানাচ্ছে, দু’বার নামতে গিয়েও ব্যর্থ হয় বিমানটি। ফলে আকাশে বেশ কিছু ক্ষণ চক্কর কাটে সেটি। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল তখন। পাইলট তৃতীয় বার নামার চেষ্টা করতেই বিমানটি পিছলে যায়। ৩৫ ফুট গভীর খাদে গিয়ে পড়ে দু’টুকরো হয়ে যায়। শুক্রবার রাত ৭.৪০ মিনিটের ওই দুর্ঘটনায় পাইলট ও কো-পাইলট-সহ এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৭৩ জন যাত্রী। কোঝিকোড় এবং মালাপ্পুরমের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৪৯ জন যাত্রীর চিকিত্সা চলছে। ২২ জনের অবস্থা গুরুতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.