ভারতের গির্জাগুলি ও বাম দলগুলি উভয়ই যেন ছদ্মবেশ ধরে আছে।উভয়ই ভারতীয় ঐতিহ্যের পরিপন্থী।তাদের কার্যাবলি ও কার্যপ্রণালির মধ্যেও যথেষ্ট সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।সূক্ষাতিসূক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করলে উভয়েরই ভিতরকার চেহারাটা প্রকাশ্যে আসে।
সাম্প্রতিক কালে,মহারাষ্ট্রের পালঘর অঞ্চলের নিরীহ সাধুদের হত্যার ঘটনা বিশ্বের সকল হিন্দুকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে।হৃদয়ের তন্ত্রীতে আঘাত করেছে।
কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু’টি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে,”মুসলমানরা নাকি করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে” এবং ” একটি সক্রিয় কিডনি পাচার চক্র শিশুদের চুরি করছে”!এই ব্যাপারে অনেক সামাজিক গণমাধ্যমকে দোষারোপ করা হয়।কিডনি কি ফুলের মতো যে চাইলেই যে-কেউ টুক করে ছিঁড়ে নিল !এই গল্প বা গুজবের উৎস কি ? এর সত্যতাও-বা কতটুকু ?
“দ্য প্রিন্ট” (The Print) ও অন্যান্য কয়েকটি “মিডিয়া হাউজেস” গুজব বা গল্পের উৎসের খোঁজে অনুসন্ধান চালায়।তারা “আদিবাসী একতা পরিষদ” (Adivasi Ekta Parishad) নামক একটি সংস্থার হদিশ পায়।”মিডিয়া হাউজ”-গুলির অভিযোগ ওই সংস্থার জনৈক রাজু পানধরা (Raju Pandhara)-ই নাকি গুজব ছড়িয়েছিল।হাউজগুলি আরও জানায় যে “আদিবাসী একতা পরিষদ ” পশ্চিম ভারতের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সমাজের গভীর শিকড়ে গিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা”।সংস্থার কার্যাবলি সঠিক কী তা যথাযথ তদন্ত শেষ হলে জানা যাবে।এখন প্রশ্ন হল এই আদিবাসী একতা পরিষদের পিছনে কোন্ রাঘব বোয়ালরা আছে ?
আদিবাসী একতা পরিষদের দুই মুখ
পরিষদের নিজস্ব ওয়েব সাইটে পরিষদের কার্যাবলি সম্পর্কে দাবি করা হয়েছে যে, “সম্পূর্ণ ভাবে মানবতা ও প্রকৃতি রক্ষার জন্য সক্রিয় ভাবে কাজ করা”।
গত জানুয়ারিতে এই পরিষদ পালঘরে একটি বড় মাপের “সাংস্কৃতিক“(Cultural) সমাবেশ করে।যাতে উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল অনুসুয়া উইকে (Anusuya Uike),স্থানীয় সাংসদ রাজেন্দ্র গভিট (Rajendra Gavit) ও অন্যান্য নেতারা।পরিষদ দাবি করে যে,তারা প্রতি বছর এই ধরণের সমাবেশ করে এবং প্রায় দু’লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়।২০১৯ সাল থেকে পালঘর ও পার্শ্ববর্তী দাদরা নগর হাভেলি পরিষদের তীক্ষ্ণ নজরে রয়েছে।হাভেলির সিলভাসাতে তারা ২০১৯-এর সমাবেশটির আয়োজন করেছিল।
পর্দার আড়ালে কে ?
যে-সময়ে পরিষদ তাদের কার্যাবলি “সম্পূর্ণ ভাবে মানবতা ও প্রকৃতি রক্ষা” বলে দাবি করছে,সেই একই সময়ে একটি খ্রিস্টান ওয়েব সাইটে অন্য তথ্য জানাচ্ছে।ওই ওয়েব সাইটটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের।নাম ক্যাথলিক বিশপস্ অফ ইন্ডিয়া (C.B.C.I.)।এই ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে,২০১৯ সালের সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন ফাদার নিকোলাস বার্লা (Fr.Nicholas Barla)।তিনি আবার CBCI-এর আদিবাসী স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়ের সেক্রেটারিও বটেন!বার্লা সাহেব আদিবাসী একতা পরিষদের সদস্য বলেও ক্যাথলিক ওয়েব সাইটে দাবি করা হয়েছে।অন্য আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন,সিস্টার ললিতা রোশনি লাকরা (Lalita Roshni Lakra)।লাকরা CBCI-এর আদিবাসী সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্ত।তাঁরা সকলেই ওই সমাবেশে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন বলে ওয়েব সাইট দাবি করেছে।আদিবাসী সংক্রান্ত বিষয়ে ইউনাইটেড নেশন অর্গানাইজেশনের( UNO) মঞ্চেও তারা উল্লেখ করেছেন বলে ওয়েব সাইটের দাবি।
ইটালির “রোমান ক্যাথলিক পন্টিফিক্যাল ইনস্টিটিউট ফর ফরেন মিশনস“( PIME)-এর সূত্র উদ্ধৃত করে “দ্য এশিয়ান নিউজ” জানাচ্ছে যে,”১৩-১৫ জানুয়ারি পালঘরে যে সমাবেশ হয়েছিল তা ক্যাথলিক বিশপস্-এর ব্যাবস্থাপনাতে হয়।এটা ছিল গির্জারই অন্যতম কর্মসূচি ও যিশুর বানী প্রচারের জন্য মূল্যবান”।
পরবর্তী সময়ে ফাদার বার্লা বলেন,”আমরা খুবই সুখি।কারণ ইউনাইটেড নেশনস্ পার্মানেন্ট ফোরামের সহ-সভাপতি ফুলমান চৌধুরি (Phoolman Chaudhary) আমাদের সাথে যুক্ত থেকে দেশীয় বিষয়গুলি উল্লেখ করেছিলেন।”
এই অবকাশে দেখে নেওয়া যাক কি এই “ইউনাইটেড নেশনস্ ফোরাম”।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ১৬ সদস্যযুক্ত একটি “পরামর্শক সমিতি” (Advisory Body) হল এই ফোরাম।যার ৮ সদস্যকে বিভিন্ন দেশের সরকার মনোনীত করে।বাকি ৮ সদস্য স্থানীয় জনসংগঠনগুলি মনোনীত করে।ফুলমান চৌধুরী নেপালের স্থানীয় সংস্থা দ্বারা মনোনীত সদস্য।আদিবাসী একতা পরিষদ যদি এরকমই একটি স্থানীয় জনসংগঠন হয়,তবে অবাক হবার কিছু নেই যে–এর অন্যপিঠে আছে গির্জা!স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হবে এই সমিতি বুঝি জাতিপুঞ্জের নিরপেক্ষতার মুখ! তাই “বিশ্বের দরিদ্র মানুষের কল্যাণ“-এর বিলাসিতা করে!
আদিবাসী একতা পরিষদ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের পরিচয়ে সারা বিশ্বে ভ্রমণ করে এবং নিজের মতামত তুলে ধরে।এবং অনিবার্য ভাবে ফাদার নিকোলাস বার্লাকে সর্বত্রই দেখা যায়।যদিও,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে তিনি ফাদার হিসেবে উল্লেখিত হন না।শুধুই নিকোলাস বার্লা নামে পরিচিত হন!
কয়েকজন লেখক স্বাধীন ভাবে “আদিবাসী একতা পরিষদ”-এর ব্যাপারে তদন্ত করেছেন।তাঁরা প্রত্যেকেই পরিষদের বিষয়ে একটি কৌতূহলজনক ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন।
যেমন Harry Goulbourne তাঁর ” Race And Ithnicity” বইয়ে উল্লেখ করেছেন,পরিষদ “আদিবাসীদের হিন্দুদের নিষ্ঠুরতা বিষয়ে সচেতন ও হিন্দুদের থেকে মুক্ত করে”।
সবকিছু সরিয়ে রেখেও,”পালঘর গুজব” ছিল পরিকল্পিত ঘটনা।আদিবাসীদের “মগজ ধোলাই” করা হয়েছিল যে বাইরের কেউ যাতে পালঘর আদিবাসী এলাকায় ঢুকতে না-পারে।ধর্মান্তকরণের কর্মসূচি হিসেবে “পাতালগাড়ি মুভমেন্ট” নামে যে আন্দোলন চলেছে এই ঘটনা ছিল তারই অঙ্গ।
এখন কয়েকটি প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই এসে পড়ে।সেগুলির ব্যাখ্যা কি আদিবাসী একতা পরিষদ দেবে ?
- প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ জন সমাগমে তাদের বার্ষিক সমাবেশ কি গির্জার অনুদানে হয় ?
** CBCI-এর ফাদার নিকোলাস বার্লা কি পরিষদের পরিচালন সমিতিতে আছেন?
- পরিষদ কি হিন্দু-বিরোধি কার্যকলাপে উৎসাহ যোগায়?তাদের কর্মসূচির মধ্যে হিন্দু-বিরোধিতা আছে?যা অনেক গ্রন্থেই বলা হয়েছে।
** সাধু হত্যাকান্ড নিয়ে পরিষদ তড়িঘড়ি করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়ানো গুজবের কথা বলতে গেল কেন ?
গির্জা কি জানাবে–
- আদিবাসী একতা পরিষদের সাথে গির্জার সম্পর্কটা ঠিক কী ধরণের ?
** পালঘর, দাদর নগর হাভেলি এলাকার আদিবাসীরাই কি তাদের লক্ষ্য?আদিবাসীদের প্রভাবিত করে ধর্মান্তরিত করার কর্মসূচি কি চালাচ্ছে গির্জা?
সুজিত চক্রবর্তী (Sujit Chakraborty)