রূপকথালোককথাও_মাইগ্রেশন

পর্ব_৪

সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিল-আকাশে এক তিল ফাঁক ছিল না;
পৃথিবীর সমস্ত ধূরসপ্রিয় মৃতদের মুখও সেই নক্ষত্রের ভিতর দেখেছি আমি;
অন্ধকার রাতে অশ্বত্থের চূড়ায় প্রেমিক চিলপুরুষের শিশির-ভেজা চোখের মতো
ঝলমল করছিল সমস্ত নক্ষত্রেরা;
জোছনারাতে বেবিলনের রানির ঘাড়ের ওপর চিতার উজ্জ্বল চামড়ার
শালের মতো জ্বলজ্বল করছিল বিশাল আকাশ!
কাল এমন আশ্চর্য রাত ছিল।

বহু শতাব্দীর পায়ে চলা অগণিত সুঁড়িপথ হারিয়েছে দূর্গম পাহাড় পর্বতে। মরুবালি ,সমুদ্র গ্রাস করেছে। উন্নয়নেও খেয়েছে বেশ কিছু । বর্তমানে ইতিহাস ও ইতিহাসবিদদের কাছে কোন স্থান অধিকার করে থাকে না এই গর্বিত প্রাচীন ইতিহাস। ভারতের যে কত গরিমা ,কত মহিমা তা হারিয়ে গেছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকারী ঐতিহাসিকদের গভীর পাঁকে।

কিছু নৃবিজ্ঞানী যে মনে করেন আঞ্চলিক ভাবে নানা লোককথা ,রূপকথার সৃষ্টি হয়েছে তাও ভুল কিছু নয়। এই যেমন আমাদের ভারতের গ্রামে গ্রামে প্রচলিত কত শত ব্রতকথা , মঙ্গলকাব্য । এগুলো তো আমাদের নিজস্ব। সেখানে কেবল আছে দৈনন্দিন জীবনে মানুষের লড়াই, আকুতি , বাঁচার জন্য নতুন করে পথ খোঁজা। যেমন আফ্রিকার নানা লোককথা ,সেগুলো তাঁদের নিজস্ব । সেসব মিথ কোন সে কাল হতে চলেছে সে এক প্রথম পুরুষই জানেন।

তেমনই একটি মিথ হল #নিষিদ্ধ_ফল।

পশ্চিম আফ্রিকার য়োরুবা দেশের ইফে আদিবাসী গোষ্ঠীর সৃষ্টি বিষয়ক মিথ বা লোকপুরান হল নিষিদ্ধ ফল। এই লোককথা বহু বহু প্রাচীন। নৃবিজ্ঞানী এবং লোক গবেষকরা মনে করেন সেই সময়ে সারা পৃথিবীতে সনাতনী ধর্ম বা সনাতনী প্রথার প্রচলন ছিল । তাই এমন বহু মানুষের নিজস্ব সমাজের লোক কথা যা হয়তো পরবর্তীকালে তৈরি বিভিন্ন ধর্ম গুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে ।

কেনই বা আমি এমন কথা বললাম? চলুন দেখি সেই নিষিদ্ধ ফল কেমন লোককথা ছিল?

সে অনেক অনেক কাল আগের কথা। তখন পৃথিবীতে কিছু ছিল না ।তারপর কিছু কিছু প্রাণীর উৎপত্তি হলো ।কিন্তু মানুষ ছিল না। তারপরে দেবতা মানুষ সৃষ্টি করলেন। তিনি চন্দ্র থেকে অংশ নিয়ে আদি মানব নির্মাণ করলেন । তার নাম রাখলেন বা- আত্সি ।

আঙুল দিয়ে আস্তে আস্তে টিপে টিপে দেবতা মানুষের দেহ গড়ে তুললেন । তারপর মসৃণ কালো চামড়া দিয়ে দেহ ঢেকে দিলেন। সুন্দর দেহ তৈরি হওয়ার পরে দেবতা দেহের মধ্যে রক্ত ঢুকিয়ে দিলেন ।মানুষ প্রাণ পেল। সেই আদি মানব বা-আত্সি আফ্রিকার সুপ্রাচীন উপকথায় মানুষের প্রথম পিতা।

দেবতা বা- আত্সিকে ডেকে কানে কানে বললেন – তুমি প্রাণ পেয়েছো। তুমি আমার নতুন সৃষ্টি। এবার থেকে তোমার ছেলে মেয়ে হবে। সেই ছেলে মেয়ে পৃথিবী ছেয়ে ফেলবে। কিন্তু তুমি তাদের একটা ব্যাপারে সাবধান করে দেবে ।এই নিষেধ যেন তারা মেনে চলে ।না হলে সর্বনাশ….

কি সেই নিষেধ?

আমার বাগিচায় আমার অরণ্যের যত ফল আছে সব ফল তারা খাবে। শুধুমাত্র তাহু গাছের ফল ছাড়া। একথা ছেলেমেয়েদের জানিয়ে দেবে ।

অল্প দিনের মধ্যে বা- আত্সির ছেলে মেয়ে হল। তার ছেলেমেয়েরা বড় হতে লাগল। দেবতা নিষেধের কথা জানতে পারল । নিষেধ মেনে চলত । বয়স হলে বা- আত্সি দেবতার কাছে চলে গেল। প্রসঙ্গত আফ্রিকান লোককথা অনুসারে দেবতার নিকট যাওয়া মানে কিন্তু মৃত্যু নয়।

তার ছেলেমেয়ে পৃথিবীতে রয়ে গেল। প্রথম প্রথম সবাই নিষেধ মেনে চলত ।আর তাই সবাই খুব সুখে থাকত।

একদিন এক মেয়ের খুব ইচ্ছে হলো তাহু ফল খাবে। সে তখন পোয়াতি ।মা হতে চলেছে ।কিছুতেই লোভ সামলাতে পারল না ।স্বামীকে বলল খুব ইচ্ছা করছে আমি ওই ফল খাব । স্বামী অবাক হলো । আদি পিতার নিষেধের কথা বলল। বউ বারবার বলাতে স্বামী ভাবল লুকিয়ে ফল খেলে কেউ জানতে পারবে না। বনের গভীরে গিয়ে সে বউকে তাহু গাছের ফল দিল ।বউ ফল খেয়ে ফলের বীজগুলো পাতায় জড়িয়ে রাখলো।

আকাশ থেকে চন্দ্র দেখে দেবতাকে সব বলে দিলেন। দেবতা ভীষণ রেগে গেলেন। মানুষ তাঁর নিষেধের কথা অমান্য করেছে। আর এই নিষেধ না মানার জন্য দেবতা শাস্তি দিলেন মানুষকে । তিনি মানুষের মধ্যে মৃত্যুকে পাঠিয়ে দিলেন। আর দিলেন পাপ।

এই সূত্রেই মনে পড়ে যায় না ওল্ড টেস্টামেন্টের কথা ? সেমেটিক প্রতিটি ধর্মে লিখিত আদম ইভের গল্প । মাইগ্রেশন কিভাবে হয়েছে সামান্যতম তার সূত্র পাওয়া যাবে সেসব গল্প পড়লেই। নানান লোককথা হতেই ওল্ড টেস্টামেন্ট তথা নতুন সেমেটিক ধর্মগুলিতে বহু কাহিনী গ্রহণ করা হয়েছিল, এ কথা কোন রকম ভাবে অস্বীকার করা যায় না …অস্বীকার করা যাবে না।

পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির কথা সাঁওতালি #জমসিম_বিন্তি তে সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে ।

সারিধরম (সত্য ধর্ম) হলো সাঁওতাল কাল্ট। আর #জমসিমবিন্তি হলো বচন যা পরবর্তী কালে বই এর আকার পেয়েছে। এতে আছে সমাজ সংস্কৃতি, ধর্ম কর্ম, জন্ম, নামকরন, বিবাহ ও মৃত্যুতে পালনীয় রীতি নীতি ….আছে #বঙ্গাবুরু অর্থাৎ #ঠাকুরদেবতার উৎপত্তির কথা। আছে জীবন সৃষ্টির কথা, প্রথম মানব মানবী (#পিলচুহাড়াম , #পিলচুবুড়ি) সৃষ্টির কথা, বংশ বিস্তার, ১২ টি পারসি বা গোত্র বিভাগের কথা।

তবে কিনা সুপ্রাচীন সনাতন বৈদিক ধর্মতে ঈশ্বর প্রথম পর্যায়েই জ্ঞানীগুনী মানুষের সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের স্বর্গ থেকে আগুনকে চুরি করতে হয় নি অথবা তাঁদের জন্য কোনো ফল নিষিদ্ধ ছিল না।

অথবা ওল্ড টেস্টামেন্টের অংশে আছেন লিলিথ। তিনি পৃথিবীর প্রথম স্ত্রী। তিনি ছিলেন জ্ঞানী। তাই জন্যই তাকে হারিয়ে যেতে হয়েছিল । জ্ঞান এবং স্বাধীনভাবে বাঁচার আকাঙ্ক্ষাই তাঁকে কিন্তু আদমকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। তার পরে এসেছিল ইভ।

যাক গে , সেসব অনেক কথা…

আসলে কিনা আদিম অধিবাসীদের লোককথা গুলি , তাদের সমাজ সহজ সরল। তাদের জীবনে জটিলতা নেই । তাই তাদের লোককথা হয় সাদামাঠা।

অনেক অনেক অনেক পরে তৈরি হওয়া সেমেটিক ধর্মীয় গ্রন্থগুলির রচয়িতারা আদিবাসী সমাজ থেকে নেওয়া বা তার পূর্বে বিভিন্ন সনাতন সমাজ গুলি থেকে নেওয়া নানা গ্রন্থ কাহিনী গুলিকে গ্রহণ করেছে । পরে সেগুলিতে জটিলতা সৃষ্টি করে পেশ করা হয়েছে ।এইজন্যই তো কাহিনী গুলোর মধ্যে এত মিল । সদৃশ চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে । তাই এই লোককথাগুলো একইসঙ্গে আঞ্চলিক এবং বিশ্বজনীন । তবে একই সঙ্গে বলতে হয় যে এমন বহু লোক কথা আছে যা কেউ কাউকে প্রভাবিত করেনি এবং এক অঞ্চলের লৌকিক গাঁথা অন্য অঞ্চলে গিয়ে ছড়ায়নি । নিরপেক্ষভাবেই সামাজিক, আর্থিক পরিস্থিতিতে সে সব সাদৃশ্য গড়ে উঠেছে।

আজকের ইউরোপ বা আমেরিকা বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের লিওয়ার্ড, বারবাডোস, ভার্জিন, টোবাগো, জ্যামাইকা প্রভৃতি দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দা এককালে এসেছিল আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ভারতবর্ষের নানা স্থান থেকে আর ছিল রেড ইন্ডিয়ানরা। ক্ষেতের ফসলের ক্ষেতে বাগিচায় কুলি কামিনের কাজ করতে নিয়ে আসা হত তাঁদের।

উক্ত আমেরিকা, ইউরোপ বা ওয়েস্ট ইন্ডিজে লক্ষ লক্ষ ক্রীতদাস আমদানি করা হয়েছিল ভারত বর্ষ, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন স্থান থেকে। সাধারণত ভারতের দক্ষিণভাগ, দক্ষিণাত্য অঞ্চল বা পশ্চিমাঞ্চল, পূর্বভাগ , আফ্রিকার এবং দক্ষিণ আমেরিকার সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল থেকে ক্রীতদাস সংগ্রহ করা হত। অতলান্তিক সমুদ্র ও গিনি উপসাগর এর কাছাকাছি অঞ্চল লাইবেরিয়া ,আইভরি কোস্ট , য়োরুবা, ক্যামেরুন ,গ্যাবন, কঙ্গো, এংগোলা, দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকা প্রভৃতি বিভিন্ন দেশ, ভারতবর্ষের সমুদ্র সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন এলাকা থেকেই এই আদি বাসিন্দারা সুদূর দেশগুলিতে চালান হয়ে গিয়েছিল । আর যেত কোথায় ? যেত ব্রিটিশ অধিকৃত বার্মা ,মলয়ের দ্বীপ গুলিতে ।কেননা জাহাজ ভিড়ত এই সমস্ত এলাকায় ।

কাল থেকে কালান্তরে তাঁরা নতুন ভূমিতে ধীরে ধীরে মাতৃভাষা ভুলে গিয়েছেন ,উপনিবেশবাদীদের ভাষা গ্রহণ করেছেন । আদিবাসী সনাতনী ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে জোর করেই হয়তো খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে জোর-করে-কিভাবে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছিল। মাতৃভূমির জীবনাচরণ নতুন পরিবেশে কিছু কিছু বদল হয়ে গেলেও , নিজ খাদ্যাভ্যাস , পোশাক পাল্টে গেলেও তাঁদের প্রাচীনত্ব কিন্তু তাঁদের মধ্যে জীবিত থেকে গেছে। তার সব থেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে আমাদের আদিবাসী সমাজ । খাদ্য, অর্থ ,মদের লোভ দেখিয়ে কোথাও অত্যাচার করে তাদেরকে জোর করে ধর্মান্তর করা হচ্ছে। কিন্তু হায় , তাঁরা তাঁদের ঠাকুর দেওতা , মারাংবুরু , সিংবঙ্গা, জাহের এরা বা বোঙ্গাবুরুকে যা বিশ্বাস করেন তা যীশুকে করেন না। তার সঙ্গে তাঁদের অসীম বিশ্বাস থাকে তাঁদের লোককথার উপর । তাঁরা যতটা বনদুর্গা বা মাকাল বা বাঘুৎ বা তিস্তা বুড়িকে বিশ্বাস করেন ততটা গাজী বা যীশুকে করেন না। সে সব তাঁদের নিজস্ব। তাঁদের ভাষা, গান, নাচ, বাদ্যযন্ত্র, হাঁড়িয়া, মহুয়া , পলাশ, শাল, লোককথা তাঁদের নিজস্ব।

উনিশ শতকের শেষভাগে এবং বিশ শতকের গোড়ায় এসব উদ্বাস্তু আদিবাসীদের লৌকিক সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা শুরু হয় । সেই গবেষণায় অত্যন্ত পরিশ্রমী ক্ষেত্র সমীক্ষা করা হয়। ।

সে সব গবেষণায় দেখা যায় যে ভারত, আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকার যেসব ক্রীতদাসরা লৌকিক কাহিনী গুলো বলছেন তার মধ্যে কিয়দংশ ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও সেখানে মাতৃভূমির লোককথা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মিশে রয়েছে। বহু বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। হয়ত তাঁদের উত্তর প্রজন্ম কোনোদিন তাঁদের প্রকৃত মাতৃভূমিকে দেখেন নি – তবু ঐতিহ্যে মিশে রয়েছে স্বদেশভূমির আদি চিন্তা-চেতনা।

ভারত, আফ্রো- আমেরিকান লোককথা বিশ্লেষণ করে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন , ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার নানা লোককথা তাঁদের লোককথার ভান্ডারকে পুষ্ট করেছে। তাছাড়াও বহু বহু বছর ধরে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ গুলি ভারতের অংশ থাকায় এবং বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সুসম্পর্ক থাকায় লোককথা গুলি যেমন সিংহল , ব্রহ্মদেশ , মলয়, শ্যাম ,যবদ্বীপ ,জাপান পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছিল তেমনি অদ্ভুত ভাবে তার চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে ছিল।

রূপ কথার গল্প তো পড়েছেন। দুখু সুখু বা সিনড্রারেলা ইত্যাদি?

আমি আগেও বলেছি সব দেশে সব ভাষায় অনেক ক্ষেত্রেই একই রূপকথা ঘুরে ফিরে আসে। এই একই রূপকথা ব্রহ্মদেশ, ভিয়েতনামে, শ্রীলঙ্কা , কম্বডিয়া এই দেশ গুলিতেও আছে। স্থান ,কাল, পাত্র ভেদে একটু অন্য রকম হয়ে যায় তাদের এই রূপকথা বা উপকথায়।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলিতে কিন্তু সিন্ডারেলা বা দুখু পরে পরে মার খায় নি। সে প্রতিবাদী ও পরে প্রতিশোধ পরায়না হয়ে উঠেছিল। তার উপর করা সব অত্যাচার সে কিন্তু গুনে গুনে হিসেব বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল তার সৎমা কে।

পৃথিবীর উপকথায় দেখানো হয়েছে একটি সরল সুন্দর নরম প্রকৃতির মেয়ে দিনের পর দিন অত্যাচারিতা হচ্ছে নৃশংশ ভাবে। কিন্তু সে প্রতিবাদ করছে না ।সে কেবল তার শত্রুদের আরো আরো সুযোগ করে দিচ্ছে যাতে তাকে অত্যাচার করা হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলির সিন্ডারেলা বা দুখু যেদিন রাজকুমার কে ভালোবাসল সেদিন থেকে নিজের অধিকার বুঝে নিতে শিখল। বিয়ের সময় তার সঙ্গে তার বোনদেরও জোর করে পাঠায় শশুড় বাড়ি।

সুযোগ পেয়ে যায় সিন্ডারেলা। সে উপলব্ধি করে যে সে ভালো বলে যে হিংস্রতা তার উপর দেখানো হয়ে ছিল তার থেকেও অনেক বেশি হিংস্র আঘাত হানতে হবে শত্রু পক্ষের উপর। সে তার ভালোবাসা, অধিকার, রাজকুমারকে আর হারাবে না। তাকে তুলতুলে কাদা নয় নরম গলন্ত ধাতু হতে হবে।

একদিন সে দুধের পাত্রেমধ্যে বসে দাসীদের হুকুম করে দুধের পাত্র উনুনে চাপাতে। সঙ্গে তার দুই বোন ছিল। তারা জিজ্ঞাসা করে এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে কি হবে? সিন্ডারেলা বা দুখু জানায় সে এতে আরও আরও সুন্দরী হবে।

তার দুই বোন লোভ সামলাতে পারে না। তারা ভাবে তারাই হবে সুন্দরী। তারপর বিয়ে করবে রাজকুমার কে। তাড়াতাড়ি তারা বলে তারা বলে তারাই বসবে পাত্রে। সিন্ডারেলা বা দুখু রাজি হয়ে যায়।

তারপর কি হল….???

দুধের পাত্র চড়ল বড় উনুনে। টগবগ করে ফুটতে থাকল দুধ। সঙ্গে ফুটতে থাকল তার শত্রুদের মাংস ,যারা এত দিন তাকে দিয়েছিল একটা মানবেতর জীবন। শত্রু চিৎকার তার অট্টহাসিতে ঢেকে গেল।

তারপরে কি হল….?

সেই দুধে ফোটা মাংস সুন্দর করে খাবার পাত্রে প্যাকিং করল সিন্ডারেলা বা দুখু। সঙ্গে উপরে একটি চিঠি আর নীচে একটি চিঠি।।পাঠাল তার সৎ মার বাড়ি।

রাজবাড়ি থেকে সোনার পাত্রে খাবার এসেছে। তারউপর আছে সিন্ডারেলার চিঠি সোনার মোরকে মোড়ানো। লেখা আছে ” প্রিয় মা, তোমাকে সুস্বাদু মাংস পাঠালাম , খেয়ে খুব তৃপ্তি পাবে।”

লোভী সৎ মা গোগ্রাসে খেল মাংস। কিন্তু একি একি? পত্রের নিচে যে আরো একটা লাল কালি দিয়ে লেখা চিঠি। খুললে পড়ল কুটিল সৎ মা।

” কি মা ? নিজের মেয়েদের মাংস কেমন খেলে? একদম খাঁটি দুধে রান্না করেছিলাম। আশা করি ভালো লাগল….”

মরাল অফ দ্য স্টোরি কি?

আপনাদের নিশ্চয় বলে দিতে হবে না..

এরম ভাবেই লোককথা গুলি ব্যাপক প্রভাব যুক্ত হয়ে পড়েছে।

ক্রমশঃ

দুর্গেশনন্দিনী

তথ্যঃ লোককথার লিখিত ঐতিহ্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.