ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলার ১৫০ বছর পূর্তি হয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। ডাব্লুবিটিসি ও সিটিসি-র সহযোগিতায় ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স এসোসিয়েশন এবার ট্রামযাত্রা ২০২৩ উৎসবও পালন করছে। এই উপলক্ষে শহরে উপস্থিত হয়েছিলেন মেলবোর্ন শহরের অন্যতম ট্রাম কন্ডাক্টর রবার্তো ডি’আন্দ্রিয়া। ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স এসোসিয়েশন সংস্থার তরফে সাগ্নিক গুপ্ত বলছেন, “মানুষের আবারও ভাবার সময় এসেছে ট্রাম নিয়ে। যেখানে জার্মানি, রাশিয়ার মত দেশে ট্রাম চলছে, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতে যেখানে ট্রাম নতুনভাবে চালানো হচ্ছে, সেখানে কলকাতার ট্রাম ১৫০ বছরে এসে থেমে যাবে?”
সাগ্নিকবাবু এখানে যে প্রশ্নটি তুলেছেন, সেই একই প্রশ্ন নিয়ে মহানগরের বিশিষ্টদের বড়ো অংশ মনে করছেন, ট্রামের সঠিক মূল্যায়নই হয়নি এবং এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। মানিকতলা ও খিদিরপুরের ট্রামলাইনে পিচ ঢালার পরই সরব হয়েছেন তাঁরা। কতদিনে ট্রাম তুলে ফেলা যাবে—এই ধারণা নিয়েই ট্রামের ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা করা হচ্ছে, এই অবস্থা বদলে শহরের রাস্তায় ট্রাম চালানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্যে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, নতুন করে ট্রাম নিয়ে পর্যালোচনা শেষ হওয়ার আগে ট্রামলাইন পিচ দিয়ে ঢেকে ফেলার কাজ বন্ধ থাকুক।
শহরের কম আয়ের বাসিন্দা, পড়ুয়া, বয়স্ক মানুষ, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্যেও ট্রামের বেঁচে থাকা জরুরি। ফলে ট্রামকে আরও যাত্রীবান্ধব করে গতি বাড়িয়ে ফিরিয়ে আনা হোক।
ট্রাম কলকাতার ঐতিহ্য। এখনও ট্র্যাক-সহ প্রায় ৩০ টি রুট রয়েছে। যার মধ্যে চলমান মাত্র দুটি রুট। সেগুলি হল রুট নম্বর ২৫ (গড়িয়াহাট-এসপ্ল্যানেড) এবং ২৪/২৯ (টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ)। শোনা যাচ্ছে, এসপ্ল্যানেডে একটি ঐহিত্যবাহী ট্রাম লাইন তৈরি হবে, যা ময়দান পর্যন্ত চক্কর কাটবে। এছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রামে বিনামূল্যে ওয়াইফাই চালু করা হয়েছে, যাতে অল্পবয়সী নাগরিকরাও ট্রামকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করে। কিন্তু, বিশিষ্টজনদের বক্তব্য ট্রামকে এভাবে বিশেষ ভাবে বাঁচিয়ে না রেখে, তা আবার নিত্যদিনের যানবাহনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করা হোক। ট্রাম লাইনগুলি শহরের রাস্তা থেকে চিরতরে মুছে ফেলার আগে ভালো ভাবে ভেবে দেখুক সরকার।
যে কয়েক জন চিঠি পাঠিয়েছেন, তাঁদের বক্তব্য, যে সব যুক্তি দিয়ে ট্রাম তুলে ফেলার ব্যবস্থা হচ্ছে, তা পুনর্বিবেচনা করা হোক। তাঁরা মনে করছেন, বর্তমান সময়ে কলকাতার মতো দূষণের কবলে থাকা শহরে ট্রামের মতো পরিবেশবান্ধব যানই আরও বেশি করে দরকারি।
বৈদুত্যিক বাসের ব্যবহার তা আরও বেশি করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। শহরের কম আয়ের বাসিন্দা, পড়ুয়া, বয়স্ক মানুষ, ছোটো ব্যবসায়ীদের জন্যেও ট্রামের বেঁচে থাকা জরুরি। ফলে ট্রামকে আরও যাত্রীবান্ধব করে গতি বাড়িয়ে ফিরিয়ে আনা হোক। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নতুন করে মূল্যায়ন করা হোক। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই আবেদন রেখেছেন তাঁরা।