ইতিহাসের শেষ যোগসূত্র পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেলেন। অসীম কুমার মিত্র। প্রবীণ সাংবাদিক। গৌরকিশোর ঘোষ, বরুণ সেনগুপ্ত এবং অসীম কুমার মিত্র। অন্ধকারময় জরুরি অবস্থায় কারারুদ্ধ তিন সাংবাদিক। আমরা আর ইতিহাস জানতে পারব না, শুনতে পারব না। শুধু রয়ে গেল অসীমদার চটি বইটা, যেটা আর পাওয়া যায় না, “রুদ্ধকারার অন্তরালে”।
অসীম কুমার মিত্র একেবারে অন্যধারার সাংবাদিকতার সাধনা করে গেলেন অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে। দক্ষিণপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী থেকে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করাটা পশ্চিমবঙ্গে এক ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অসীম কুমার মিত্র প্রথম এই অপরাধ জগতে পা রেখেছিলেন সেই ছয়ের দশকে। পরবর্তী পাঁচ দশক তবুও সমাদৃত থেকেছেন এবং একই সঙ্গে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে লড়াই করে গেছেন দরিদ্রতার সঙ্গে। একজন সৎ সাংবাদিকের যা নিশ্চিত পরিণতি। যাঁরা পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকতার পরিবেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন যে একই সঙ্গে পেশাদার সাংবাদিক এবং আরএসএস-এর একনিষ্ঠ সেবক- এই দুইয়ের মাঝে কী বিস্তর সংঘাত এবং সংকট। এই আতঙ্কে অনেকেই তাঁদের পরিচয় গোপন করে টিঁকে থাকার চেষ্টা করেন। অসীমদার ক্ষেত্রে এমনটির বালাই ছিল না। যুগান্তর বা আজকাল- অসীমদা ছিলেন চরম আরএসএস কিন্তু চরম পেশাদার সাংবাদিক। তাই গৌরকিশোর ঘোষ বা অশোক দাশগুপ্ত, সম্পাদকদের কাছে শ্রদ্ধার-ই পাত্র ছিলেন অসীম কুমার মিত্র। ছিলেন আস্থাভাজনও।
একই সঙ্গে আরএসএস-এর স্বয়ংসেবক, যোগ্য সাংবাদিক, সফল সংগঠক, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং আপাদমস্তক সততার প্রতীক। এতগুলো পরিচয় নিয়ে শুধুই সেবা করে গেলেন অসীমদা। ব্যক্তিগত স্তরে অনেক ঘটনার উল্লেখ করা যায় অসীমদার স্মৃতিচারণায়। কিন্ত একটা দুটো ঘটনা নয়, অসীম কুমার মিত্র পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকতায় একটা সংগ্রাম। বিরুদ্ধ পরিবেশের মাঝে মাথা উঁচু করে টিঁকে থাকার সংগ্রাম। অর্থের অভাবের মধ্যেও সততার সঙ্গে আপোস না করার সংগ্রাম। অনেক উচ্চ পদে আসীন হওয়া সত্ত্বেও পদের অপব্যবহার না করার সংগ্রাম। আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে পেশাদার থাকার সংগ্রাম। এবং একা, একদম একা এই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া দশকের পর দশক।
ইতিহাস মনে রাখবে কীনা জানি না। কিন্তু অসীম কুমার মিত্র বহু মানুষের হৃদয়ে থেকে যাবেন একজন আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে।
প্রসেনজিৎ বকসী