সেনাবাহিনীতে মহিলাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত| সোমবার যুগান্তকারী রায়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট| শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ‘মহিলাদের সম্পর্কে পুরনো ধারণা এবার বদলান|’ সেনাবাহিনীর শীর্ষে মহিলাদের নিয়োগকে ছাড়পত্র দিতে গিয়ে এই মন্তব্যই করেছে সুপ্রিম কোর্ট| মান্যতা দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্টের রায়কেও| শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মহিলাদের শারীর বৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে তাঁদের অধিকারের কোনও সম্পর্ক নেই| এক মাত্র কমব্যাট উইং ছাড়া সেনাবাহিনীর সমস্ত স্তরে আগামী ৩ মাসের মধ্যেই এই নিয়ম চালু করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রকে| শুধু তাই নয়, শর্ট সার্ভিস কমিশনের আওতায় যে সমস্ত মহিলা ১৪ বছরের বেশি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, তাঁদের স্থায়ী কমিশনে শামিল করতেও কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত| বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি অজয় রাস্তোগির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সেনাবাহিনীতে মহিলাদের নিযুক্তি নিয়ে কোনওরকম বৈষম্য চলবে না|এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে শীর্ষ আদালতে জানানো হয়েছিল, সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন কোনও মহিলা, সেই মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি ভারতীয় সেনার মধ্যে| বলা হয়, এখনও এদেশে যুদ্ধক্ষেত্রে মহিলাদের নেতৃত্বের বিষয়টা উপযুক্ত নয়| রণক্ষেত্রে মহিলাদের কম্যান্ডিং অফিসার হিসেবে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে জওয়ানরাও প্রস্তুত নন| তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে শুরু করে নানা অসুবিধা রয়েছে মহিলাদের| সোমবার শুনানিতে এই সমস্ত তত্ত্বের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর শর্ট সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) ১৪ বছর চাকরি করা মহিলাদের স্থায়ী কমিশনের বিকল্প দেওয়া হবে কি না, সেই প্রসঙ্গও তোলা হয় আদালতে| এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এসএসসি-তে ১৪ বছরের চাকরির সময়কালে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, সকল মহিলা অফিসারকে স্থায়ী কমিশন দিতে হবে|ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চিকিত্সা পরিষেবা ছাড়া, অন্য ভূমিকায় মহিলাদের নিযুক্তি শুরু হয় ১৯৯২ সালে| কিন্তু, এখনও পর্যন্ত স্থায়ী কমিশনড অফিসার পদে কাজ করার সুযোগ পাননি মহিলারা| এ নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করে সশস্ত্র বাহিনীতে যুদ্ধ করার এবং কম্যান্ডিং অফিসার পদে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার আদায় করেছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর ৫৭ জন মহিলা| কিন্তু, দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার| ২০১০ সাল থেকে সেই আবেদন বিচারাধীন ছিল| সুপ্রিম কোর্ট এদিন জানিয়েছে, হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ না দেওয়া সত্ত্বেও কেন হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি| সম্প্রতি তা নিয়ে নতুন করে শুনানি শুরু হলে, আদালতে কেন্দ্র জানায়, দেহগঠন সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে মহিলারা যুদ্ধ করার উপযুক্ত নয়| তাছাড়া মাতৃত্ব, শিশু পরিচর্যা, যুদ্ধক্ষেত্রে ধরা পড়ে যাওয়ার মতো বিপদও তুলে ধরা হয়| তা নিয়ে কেন্দ্রকে ভর্ত্সনাও করেছেন শীর্ষ আদালত| সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রের যুক্তি পুরনো ধারণাপ্রসূত| মহিলা সেনা অফিসাররাও দেশের সম্মান বৃদ্ধি করছেন| শীর্ষ আদালতের এই রায়ে খুশি প্রকাশ করেছেন মহিলা সেনা অফিসাররা| ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সীমা সিং জানিয়েছেন, ‘প্রগতিশীল এবং ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট| মহিলাদেরও সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া উচিত|’
2020-02-18