করোনার অতিমারীর মধ্যেই বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এলো কেরলের বাম-মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজিয়ন (Pinarayi Vijayan) ও তাঁর কন্যার নামে।অভিযোগ যে,করোনা রোগীদের অনেক তথ্যই হাতিয়ে নিয়েছে বিজয়নের কন্যা টি.ভিনার আইটি কোম্পানি (T.Vinar IT Company)।অথচ এ-ব্যাপারে রোগীর নিকট থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
করোনার মতো অতি স্পর্শ কাতর বিষয়ের তথ্য চুরির অভিযোগ সামনে আসতে দেশজুড়ে আতঙ্ক ও শোরগোল ছড়িয়ে পড়েছে।
সে-রাজ্যের বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে কমিউনিস্ট (Communist) নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন।তাঁরা ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করেছেন।ভারতের একমাত্র কেরলেই ভারতীয় কমিউনিস্টদের ‘শিবের সলতে“-টি নিভু নিভু করে জ্বলে আছে! যা নিয়ে বামেদের আত্মশ্লাঘার শেষ নেই।সেই রাজ্যেরই মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নামে অভিযোগ উঠতেই বামনেতারা মুখ লুকাচ্ছেন মাস্কের আড়ালে!
উল্লেখ্য যে, “স্প্রিনকলর্” একটি আমেরিকা-ভিত্তিক কোম্পানি।নানা অনৈতিক কাজের জন্য কোম্পানিটি নানা দেশেই কালো তালিকাভুক্ত।এরাই কেরলের কোয়ারাইন্টিনে থাকা করোনা রোগীদের তথ্য চুরি করেছে।অথচ রোগী বা তাঁর পরিবারের নিকট থেকে কোনোরূপ অনুমতি নেওয়া হয়নি।
এই কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে বিজয়নের কন্যা টি.ভিনার কোম্পানি “এক্স্যালোজিক স্যোলুসন প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড” (Exalogic Solutions Private Company Limited) -এর নামও।
এক্স্যালোজিক একটি বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক আইটি কোম্পানি।যার একক মালিক বিজয়নকন্যা ভিনা।রাজ্যের কংগ্রেসের বিধায়ক পি.টি.থমাস অভিযোগ তুলে জানিয়েছেন,” তথ্য হাতানোর বিষয়টি সামনে আসতেই এক্স্যালোজিকের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক ইন্টারনেট থেকে হারিয়ে গিয়েছে।যা সন্দেহজনক।এই দুই কোম্পানির মধ্যে কোনো আতাঁত থাকার কারণেই এটা হয়েছে।আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছি।
বেঙ্গালুরু-কেন্দ্রীক এবং বিজয়ন কন্যার একক মালিকাধীন কোম্পানি এক্স্যালোজিক স্যোলুসন প্রাইভেট লিমিটেড মূলত সফ্টওয়ার ব্যবসাই করে।সফ্টওয়ার পাব্লিস,কনসালট্যান্সি,সাপ্লাই ইত্যাদি।তৈরি,সরবরাহ ও নন কাস্টমাইজড সফ্টওয়ারের ডকুমেন্টেসনই তাদের বিজনেস।এর মধ্যে রয়েছে অপারেটিং সিস্টেম সফ্টওয়ার,বিজনেস ও অন্যান্য সফ্টওয়ার।বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গিয়েছে অনেক শিল্পপতিরাই কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী-কন্যার একক-মালিকাধীন কোম্পানিটিকে অর্থ যোগান দেন।
রাজ্যের জনৈক বিরোধি নেতা বলেছেন,” এই রকম স্পর্শ কাতর বিষয়ের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে তুলে দেওয়া সম্পূর্ণত মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা।যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।”প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে,”স্প্রিনকলর্” (Sprinkle) হাতে প্রায় দু’লক্ষ করোনা রোগীর তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে!অন্য আরেকটি গবেষণা থেকে সামনে এসেছে তথ্য-পিছু দশ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে!
কেরল রাজ্যের বিজেপি (BJP) সভাপতি কে. সুরেন্দ্রন দাবি করেছেন,”স্প্রিনকলর্” কেলেঙ্কারি বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উচিৎ সত্যটা সামনে আনা।যা জানার অধিকার সকল দেশবাসীর আছে।তথ্য পাচারের মতো মারাত্মক ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া কিছুতেই হতে পারে না বলেও সুরেন্দ্রন জানিয়েছেন।তিনি বলেন,রাজ্যের তথ্য প্রযুক্তি সচীবকেই জানাতে হবে আসল বিষয়টি কী।তিনি আরও বলেন,” মুখ্যমন্ত্রী কি রাজি আছেন সত্যটা জনগণকে জানাতে ? তিনি বলুন “স্প্রিনকলর্” আর তাঁর কন্যার চুক্তির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কী ভূমিকা ছিল ? প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর,মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সদস্যদের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারে।যেমনটা উমেন চান্ডীর সময়ে হয়েছিল।”
স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রীকে আড়াল করতে,সে-রাজ্যের মেরুদন্ডহীন তথ্যপ্রযুক্তি সচীব এম.শিবশঙ্কর বেনজির ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,”আমি-ই ওই সংস্থাকে কোভিড-১৯ রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণের জন্য সমীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিলাম।”যদিও ব্যবসায়িক বিধিতে এরকম কোন অধিকার তথ্যপ্রযুক্তি সচীবের নেই।বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এটা সম্পূর্ণ ভাবেই অবৈধ এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভাঙার সামিল।
এমনিতেই সারাদেশে কমিউনিস্টরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।যুগোপযুগি কোনো আদর্শ তাদের নেই।অস্তিত্বের জানান দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে বৃদ্ধ নেতৃত্বগণ কালেভদ্রে বাইরে বেরোন।
তদুপরি এই কেলেঙ্কারি সামনে আসাতে বিজয়ন-সহ অন্য বামনেতারা পড়েছেন মহাফাঁপড়ে!কালো তালিকাভুক্ত একটি ফার্মের হাতে সরকারি তথ্য চলে গেল,আর কেউ কিছু জানল না,এটা দেশবাসী বিশ্বাস করতে চাইছেন না।তাঁরা ব্যক্তি-পরিবারের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
এমনিতেই ভারতীয় বামেরা কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে গলা ফাটান ব্যক্তিগত তথ্য হাতানোর অভিযোগ তুলে।কেন্দ্র সরকার নাকি আধার নম্বরের মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য নজরদারি চালায় !
এখন বামশাসিত রাজ্য থেকেই,সরকারের বদান্যতায় তথ্য চুরির অভিযোগ উঠেছে!ভারতীয় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ইতিমধ্যেই বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য একটি গ্রুপ তৈরি করেছে।
এ তো গেল কেরলের (Kerala) করোনা সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের ঘটনা।কিন্তু তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) বিষয়টি কেরলের উল্টো!এখানের অভিযোগ মমতা পরিচালিত সরকারি-ই করোনা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে।আক্রান্ত,মৃত,চিকিৎসাধীন,সুস্থ হয়ে ওঠা,কোয়ারিন্টনে থাকা ইত্যাদি পরিসংখ্যান সরকার সামনে আনছে বলে বিরোধীরা বারবার সরব হয়েছে।এমন কি রাজ্যে টেস্ট করার জন্য যা পরিকাঠারো আছে,সেটাও কাজে লাগানো হচ্ছে না।ক্ষমতার থেকে অনেক কম নমুনা পাঠানো হচ্ছে বলে কয়েকদিন আগেই জানিয়েছিলেন নাইসেডের অধিকর্তা ডঃ শান্তা দত্ত।রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ অভিযোগ তুলেছেন,কেন্দ্র সরকার যে-বিপুল পরিমাণ অর্থ করোনা প্রতিরোধের জন্য পাঠিয়েছে তা গেল কোথায়! ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিজেই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলিকে মান্য দিয়ে ফেলেছেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন ! কেন না,রাজ্যে চিকিৎসাধীন কেউ মারা গেলে,সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ বলতে পারবেন না!বলবেন কে ? না,মমতার দ্বারা নির্বাচিত কমিটি! যাঁরা হয়ত চিকিৎসকই নন! মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই সে কমিটি গড়ে দিয়েছেন বলে খবর।
করোনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞগণ রাজ্য সরকারের তথ্য গোপনের বিষয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।তাঁরা বলছেন,অভিযোগ সত্য হলে,তা হবে খুবই মারাত্মক!
লকডাইনের বিধি নিষেধও পশ্চিমবঙ্গ মানা হচ্ছে না বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর ইতিমধ্যেই দুবার সতর্ক করে চিঠি পাঠিয়েছে।তারপরও পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্র সরকার একটি প্রতিনিধি দল গতকালই রাজ্যে পাঠিয়েছে।প্রথমদিকে রাজ্য সরকার প্রতিনিধি দলকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেও,পরে স্বরাষ্ট্র সচীব রাজীব সিংহ সাহায্য করার কথা স্বীকার করেছেন।
সুজিত চক্রবর্তী