শত চেষ্টা করেও রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার ফেলতে পারবে না বিজেপি (BJP)। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করলেন এআইসিসির (AICC) সাধারণ সম্পাদক তথা ছত্রিশগড়ের পর্যবেক্ষক পিএল পুনিয়া (PL Punia)। গত রবিবার থেকে রাজস্থানের রাজনীতিতে ঘটনার ঘনঘটা। আচমকাই ওইদিন নিজের অনুগামী বিধায়কদের নিয়ে দিল্লি চলে আসেন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলট। জল্পনা শুরু হয় তাঁর বিজেপিতে যোগদানের। সোমবার ঘনিষ্ঠ মহলে শচীন জানিয়ে দেন, বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। এদিন পিএল পুনিয়া বলেছেন, “দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে বিজেপি রাজস্থানে কংগ্রেস পরিচালিত সরকার ফেলে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা বলে দিতে চাই এক্ষেত্রে তাদের চক্রান্ত সফল হবে না। অশোক গেহলোট সরকার নিজের কার্যকালের মেয়াদ সম্পূর্ণ করবে।”
রাজস্থানের বিদ্রোহী উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটকে বোঝাতে প্রিয়াঙ্কা গাঁধী বঢরা (Priyanka Gandhi Vadra) তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর ক্ষোভ কমাতে যাবতীয় অভিযোগ প্রিয়াঙ্কা মন দিয়ে শুনেছেন। রাহুল গাঁধী এ নিয়ে মুখ না-খুললেও কংগ্রেস সূত্রের খবর, তিনিও দূতের মাধ্যমে সচিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। শচীনের ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা হলেও, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অশোক গেহলোটকে সরিয়ে শচীনকে গদিতে বসানোর সম্ভাবনা কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রথমেই খারিজ করে দিচ্ছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী-উপমুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একটা রফাসূত্র বার করার চেষ্টা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে, গতকাল রাজস্থান উড়ে গিয়েছেন এআইসিসি শীর্ষনেতা রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা, অজয় মাকেন, কেসি ভেনুগোপাল প্রমূখ। দফায় দফায় বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমর্থন আদায় করেছেন বলেই সূত্রের খবর। অশোক গেহলোট (Ashok Gehelot) এআইসিসির সমর্থন পাওয়ার কারণ, রাজস্থান বিধানসভা ম্যাজিক ফিগার রয়েছেন তাঁর পক্ষেই।
তবে শচীন পাইলটের (Sachin Pilot) অভিযোগ যে অমূলক নয়, তাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে রাহুল- প্রিয়াঙ্কা। শচীনের অভিযোগ, অশোক গেহলোট তাঁর সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়েও রাজনীতি করছেন। সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন থেকে তাঁর নাম বাদ যাচ্ছে। দলকে ক্ষমতায় ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও, তাঁকে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে পদে-পদে অপমান করা হচ্ছে। অর্থ বা স্বরাষ্ট্র দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে নিজের হাতে রেখেছেন গেহলোট। এখন তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকেও হটানোর চেষ্টা হচ্ছে অশোক গেহলোট শিবিরের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে কংগ্রেসের দল ভাঙানোর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে রাজস্থান পুলিশের পাঠানো নোটিস নিয়েও শচীন পাইলট ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। একই নোটিস মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের মুখ্য সচেতকের কাছে গেলেও শচীনের অভিযোগ, দেশদ্রোহের আইনে এফআইআর করে শুরু করা তদন্তে তাঁকেই নিশানা করা হচ্ছে। তাঁর ফোনে সিআইডি আড়ি পাতছে।
এখন এই সমস্ত বিষয়গুলি সামাল দিয়ে রফাসূত্র বের করার চেষ্টা হচ্ছে। অশোক গেহলোট দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে ১০৭ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। ফলে ২০০ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় তাঁর সরকার পতনের আশঙ্কা নেই। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ওই বৈঠকে শচীন ও রাজ্যের দুজন মন্ত্রী গরহাজির ছিলেন। কংগ্রেস, নির্দল ও বাইরে থেকে সমর্থনকারী দলের মোট ১৮ জন বিধায়ক ছিলেন না। তা সত্ত্বেও অশোক গেহলোটের দাবি, বিজেপি বা শচীন, কারও চক্রান্ত সফল হবে না। মরুঝড় রুখে জয়পুরের মসনদে থাকছেন তিনিই।