CAA : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাঙ্গালী হিন্দুর রক্ষাকবচ #IndiasupportsCAA

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের মাধ্যমে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করেছিল। মুসলিম লীগ দ্বি-জাতি তত্ত্ব তুলে ধরেছিল -এই তত্ত্ব অনুযায়ী হিন্দু ও মুসলিম দুটি পৃথক জাতি এবং তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কখনো সম্ভব নয়। অধিকাংশ মুসলিমের দাবীর ভিত্তিতে ১৯৪৭-এর ১৪ই অগাস্ট মুসলিমদের জন্য পৃথক দেশ পাকিস্তান গঠিত হয়। বাবাসাহেব আম্বেদকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বল্লভভাই প্যাটেল প্রমুখ দাবী তোলেন যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পূর্ণ জনবিনিময় করা হোক। অর্থাৎ সমস্ত মুসলিম পাকিস্তানে চলে যাক এবং হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ প্রভৃতি যারা পাকিস্তানে রয়েছে তারা ভারতে চলে আসুক। এই বাস্তববোধসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতারা বুঝেছিলেন যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুর নিরাপদে বসবাস করা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু পন্ডিত জওহরলাল নেহরু এতে বাধা দেন। ফলে স্বাধীনতার আগে যে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ২২ % ছিল অমুসলিম (হিন্দু, শিখ প্রভৃতি), বর্তমানে তা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩%। একটি হিসাব অনুযায়ী আর ত্রিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অন্যদিকে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ৯ % থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ %। আর পশ্চিমবঙ্গেও ২০১১-এর জনগণনা অনুযায়ী মুসলিম জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭%। যা ১৯৪৭-এর আগে ছিল মাত্র ১৯%। বর্তমানে ২০১৯ এর শেষে মুসলিম সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ % এরও বেশি। মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর – এই তিন জেলায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, বীরভূম, নদীয়া প্রভৃতি জেলার বহু ব্লকে হিন্দুরা সংখ্যালঘু কিন্তু পূর্ববঙ্গ থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে প্রায় দেড় কোটি হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করা সত্ত্বেও কিভাবে পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ মুসলিম সংখ্যাগুরু একটি রাজ্যে পরিণত হতে চলেছে? – এর উত্তর হল বাংলাদেশ শরণার্থী’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’র পার্থক্য কি? রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু বিষয়ক দপ্তর ইউনাইটেড নেশনস্ হাই কমিশন অফ রিফিউজিস’ (UNHCR) ১৯৪১ সালের জেনেভা কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের উরুগুয়ে প্রটোকল অনুসারে উদ্বাস্তু বা শিরণার্থীর সংজ্ঞাঃ
“যদি কোন দেশের কোন মানুষ জাতি, ধর্ম, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয়তা, সামাজিক বা রাজনৈতিক কোন বিশেষ দলের সদস্য হওয়ার জন্য নিজের দেশে অত্যাচারিত হন এবং গভীর ভয়ের জন্য নিজের দেশে ফিরতে না চান, তবে ঐ মানুষটি দ্বিতীয় বা আশ্রয়দাতা দেশে শরণার্থীহিসাবে গণ্য হবেন।”
ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই যে সমস্ত হিন্দু শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে অত্যাচারিত হওয়ার ফলে ভারতবর্ষে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা শরণার্থী। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত মুসলিম বিভিন্ন কারণে ভারতবর্ষে এসেছে তারা অনুপ্রবেশকারী’। এই বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে জনসংখ্যার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করার সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মে লিপ্ত হয়। কিছুদিন আগে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের কাজ। এছাড়াও এরা আফিম চাষ, জাল নোটের কারবার, চোরাচালান, নারী পাচার, ডাকাতি, ধর্ষণ প্রভৃতি বিভিন্ন রকম অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা Citizenship Amendment Act (CAA) fo ও তা কেন প্রয়োজন?
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুসারে, ১৯৭১ এর ২৪-এ মার্চের পর আর কোন হিন্দু ভারতবর্ষে আসবে না- যদি আসে তবে সেটা বেআইনী অনুপ্রবেশ হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে পূর্ব পাকিস্থান ও বাংলাদেশ থেকে আগত বংশধরসহ প্রায় দু’কোটি মানুষ বর্তমানে ভারতবর্ষে (মূলত পশ্চিমবঙ্গে, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে) বাস করছেন। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতবর্ষে এসেছেন ১৯৭১-এর ২৪এ মার্চের পর। যদিও তারা ভোটার কার্ড, আধার কার্ড করেছেন কিন্তু আইন অনুযায়ী তারা ভারতবর্ষের অবৈধ নাগরিক। এঁদের আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যাপারে এতদিন কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেসসহ কোন রাজনৈতিক দল কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ২০১৮র ৭ই সেপ্টেম্বর পুরনো পাসপোর্ট আইন ও ‘বিদেশী আইন সংশোধন করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে দর্মীয় কারণে উদ্বাস্তু হয়ে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব লাভের পথটি প্রশস্ত হয়েছে। এরপর এই উদ্বাস্তু মানুষরা যাতে আইনত ভারতবর্ষের বৈধ নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে তাই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ২০১৬ সালের ১৯-এ জুলাই ভারতীয় সংসদে ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ বা Citizenship Amendment Bill (CAB) পেশ করে। এই বিল অনুযায়ী- “২০১৪র ৩১-এ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে বা ধর্মীয় অত্যাচারের ভয়ে যে সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রীস্টান ও পার্সী সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছেন তারা সকলেই ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব পাবেন। এর জন্য শুধু সেই মানুষটিকে টানা ৬ বছর ভারতবর্ষে থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী দলগুলির বাধাদানের ফলে বিলটি ‘জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি’ JPCতে পাঠান হয়। এরপর পুনরায় কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯-এর প্রথমদিকে বিলটিকে সংসদে পেশ করে। লোকসভায় নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে বিজেপি বিলটিকে পাশও করিয়ে নেয়। কিন্তু রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, কংগ্রেস প্রভৃতি দলের বিরোধিতার ফলে রাজ্যসভায় বিলটি আটকে যায়। ফলে এই বিল আর আইনে পরিণত হতে পারেনি। এই বিলটি পাশ হলে সব থেকে লাভবান হত পূর্ববঙ্গ থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে সব খুইয়ে ভারতবর্ষে আসা হিন্দু বাঙ্গালী। কিন্তু নিজেদের উদ্বাস্তু দরদী বলে দাবী করা তৃণমূল, সিপি এম ও কংগ্রেসের বাধায় পূর্ববঙ্গ থেকে আসা হিন্দুরা নাগরিকত্ব লাভ থেকে বঞ্চিত হন।
এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আগে পাশ হলে অসমে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে হওয়া NRC তালিকা থেকে বাদ পড়া বাঙ্গালী হিন্দুরাও এদেশের আইনত নাগরিক হয়ে যেতেন, ফলে তাঁদের আর কোন সমস্যায় পড়তে হত না। কিন্তু অসমে যারা বাঙ্গালী হিন্দুর দুর্দশার জন্য কুমীরের কান্না কাঁদছে তারাই আবার রাজ্যসভায় বিজেপিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করতে না দিয়ে উদ্বাস্তু বাঙ্গালী হিন্দুদের পিঠে ছুরি মারছে। তাই এই ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ বা (CAB ক্যাব)-এর বিরোধিতা যে রাজনৈতিক দল করবে বুঝতে হবে সে উদ্বাস্তু বাঙ্গালী হিন্দুর সবচেয়ে বড় শত্রু-এমনকি সে সমগ্রবাঙ্গালী সমাজের ও হিন্দু জাতিরও শত্রু।
অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.