মাও-সে-তুং বলেছিলেন যে,”বিপ্লব রাতের ভোজসভা নয়”! অথচ বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় মাওপন্থী কমিউনিস্টরা সাধারণ মানুষদের সকল রকমের প্রলোভন দেখিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী করে চলেছে।শুধু সাধারণ মানুষই নয়,সমাজের চাটুকার-বুদ্ধিজীবী সেই রঙিন মাদকতায় মত্ত।যাঁদেরকে “শহুরে মাওবাদী” বা “শহুরে নকসাল”-ও বলা হয়।
নকসাল ও মাওবাদীদের সহজ শিকার হল অরণ্যবাসী মানুষরা। স্বাধীনতার এত বছর পরে পৌঁছেও কংগ্রেস-চালিত কেন্দ্র সরকার ২০১৪ সাল পর্যন্ত অরণ্যবাসীদের জীবন ধারণের ন্যূনতম সুবিধাটুকুও করে দিতে পারেনি।যদি পশ্চিমবঙ্গের কথা বলা হয় তো তাতে মাওবাদী,নকসালপন্থীরাও লজ্জা পাবেন।এরাজ্যে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ধরে বাম-শাসন তারপর তৃণুদের শাসন চলেছে।সত্তরের দশকে যে নকসালী গণহত্যা চলেছিল তাতে কত নিরীহ মানুষের যে প্রাণ গিয়েছে,তার সঠিক সংখ্যা বুঝি আজও সামনে আসেনি।
রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিটি কুঠরিতে দুর্নীতি গেঁড়ে বসেছিল।২০১৪ সালে বিজেপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলো।তারপরেই শুরু হয়েছে দুর্নীতিকে শিকড় সুদ্ধ নির্মূল করার প্রক্রিয়া।কংগ্রেসের অনেক নেতামন্ত্রীরা বেনামে একাধিক এনজিও খুলে,সমাজসেবার মুখোশ পরে বিদেশী ডলারে নিজেদের পুষ্ট করেছেন!সেবার ক্ষেত্রে লবডঙ্কা!সরকারের কল্যাণকর প্রকল্পগুলি গরীব মানুষের ভাঙা কুঠিরের দরজা পর্যন্ত পৌঁছয় নি।রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে,”কেন্দ্র সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র পনের শতাংশ উপভোক্তার কাছে গিয়ে পৌঁছয়”!তিনি সত্যটাকে সততার সাথে স্বীকার করার সৎসাহস দেখিয়েছিলেন।কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে,দুর্নীতি শিকড় উপড়ে দেওয়ার সময় দেশবিরোধীরা তাঁকে দেয় নি।বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই কাজটাই শুরু করেছেন।আর তাতেই ভারত-শত্রুদের হৃদকম্প শুরু হয়েছে।ইতিমধ্যেই তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আবার বামেরা গরীবদের স্বপ্ন দেখিয়েছিল যে,তাঁদের সবদিক দিয়েই রাষ্ট্র বঞ্চিত করে রেখেছে।রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানুষদের ক্ষেপিয়ে তুলেছে।তাঁদের বুঝিয়েছে ‘তোমরাই কলকারখানার প্রকৃত মালিক’! আশ্চর্যের বিষয় হল পশ্চিমবঙ্গে বাম-শাসনের দীর্ঘকালে একজন শ্রমিককেও কারখানার মালিক বানাতে পারেনি।সর্বহারার গণতন্ত্রের নামে সাধারণ মানুষদের জীবন কেড়েছে।সম্ভ্রম লুটেছে।উল্টোদিকে,ভারতীয় বাম-নেতাদের অর্থের ভুড়ি ক্রমশই মোটা হয়েছে!মাওবাদী,নকসালীরা নিজেদের সহ-“কমরেড”-দেরও জীবন কেড়েছে।নারী কমরেডের শরম মাটিতে মিশিয়েছে!অরণ্যবাসী দুঃখি মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করেছে।অথচ তাঁরা জানেনও-না কী মাওবাদ বা নকসালবাদ।কিছু হিংস্র বন্দুকধারীরা এসে উঠোনে “কাস্তে-হাতুড়ি-তারা” আঁকা একটা লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে।তাতেই যেন সকল অভাব,ক্ষুধা মিটে গিয়েছে!তাঁরা সবাই বড় বড় কারখানার মালিক হয়ে গিয়েছেন!
বিবেক অগ্নিহোত্রী একজন ভিন্নধারার চলচিত্র পরিচালক।প্রথাগত সিনেমা ব্যবসায়ী তিনি নন।মাওবাদী-নকসালবাদীদের দেশদ্রোহীতা,হিংস্রতা,কাপুরুষতা এবং তাঁদের ন্যক্কারজনক কাজকর্ম নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ২০১৬ সালে।সেটির নাম,”বুদ্ধ ইন আ ট্রাফিক জ্যাম”।মধ্যপ্রদেশের বস্তার জেলার অরণ্যবাসীদের দেখা যায় সিনেমার শুরুতেই।যিশুখ্রিস্টের জন্মের দু’হাজার বছর আগে থেকে খ্রিস্টাব্দ ২০১৪ পর্যন্ত সময়কালের,বনবাসীদের জীবনচিত্র মাত্র দুটি দৃশ্যের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন।চার হাজার বছর যাবত তাঁদের জীবনযাপনের কোনো মানোন্নয়ন হয় নি। অর্ধাহারে থেকেও,তাঁদের সংসারে প্রেম ছিল।ছাগীদুগ্ধ দিয়ে তাঁরা তৃষ্ণা ও ক্ষুধা নিবারণ করত।তাঁদের সেই অভাবী অথচ শান্তির জীবনে অশান্তি বয়ে আনে নকসালরা।অকারণে তাঁদের নিদারুণ প্রহার করে,জবরদস্তি ভাবে বাড়িতে পুঁতে দিয়ে যায় কাস্তে হাতুড়ি তারা অঙ্কিত লালঝান্ডা।অথচ সেই খেতে না-পাওয়া,দুঃখী মানুষগুলো জানেনও-না,কেন তাঁরা নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করা হল।ওই ঝান্ডার অর্থই-বা কী!
বিবেকবাবু পাঠ্য বইয়ের মতো তাঁর সিনেমাটিকে কতকগুলি অধ্যায়ে সাজিয়েছেন।এবং প্রতিটি অধ্যায়ের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণও করেছেন।মোট নয়টি অধ্যায় বা চ্যাপ্টারে চলচ্চিত্রটি শেষ হয়েছে।আপাতদৃষ্টিতে অধ্যায়গুলির মধ্যে যোগসূত্র পাওয়া দুষ্কর।দেখতে গিয়ে মনে হবে সম্পর্কহীন কতক দৃশ্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে।একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে দৃশ্যগুলির মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
সিনেমায় নকসালবাদীদের কার্যকলাপ খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।নকসালীদের বর্বরতা,জঘন্যতা,হিংস্রতা,অমানবিকতা,রাষ্ট্রদ্রোহীতা খুব বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।মানুষের চোখে,পরিজনের চোখে,আইনের বিচারে তাঁরা যে ঘোরতর অপরাধী সিনেমাটা দেখা শেষে এগুলিই মনে জেগে থাকে।জেগে থাকে তাঁদের প্রতি একরাশ ধিক্কার!
“বুদ্ধ ইন আ ট্রাফিক জ্যাম” সিনেমাটি ২০১৬ সালের ৬ মে তারিখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌজন্যমূলক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।এর আগেই সিনেমার কিছু কিছু অংশ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।প্রদর্শনীর দিনে আচমকাই সবকটি বাম ঘরানার পড়ুয়া সংগঠন প্রদর্শন গৃহে আক্রমণ করে।পর্দা ছিঁড়ে,আয়োজক,অতিথি সবাই হেনস্তা-শারীরিক আঘাত করে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়।পরে জানা যায় যে,এই নিন্দাজনক হামলার নির্দেশ এসেছিল অনেক উঁচু স্তর থেকে।
এটা বাম ঘরানার রাজনীতির শিক্ষা!সত্যের সামনে সৎসাহস নিয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তাদের।তারা সেই নৈতিক শিক্ষা পায় না।সে-শিক্ষা দেওয়া হয়ও-না তাদের।সেদিন আক্রমণকারীদের মুখে ছিল রাষ্ট্রবিরোধী উল্লাসধ্বনী।বিজেপি-রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার।অথচ বিশ্ববাসী সকলেই জানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আর.এস.এস.পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একটি অরাজনৈতিক-দেশপ্রেমী সেবাসংগঠন।দেশভক্তি,দেশের অখণ্ডতা ফিরিয়ে আনা,যে-কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেবাকাজ করা–এসকলই হল আর.এস.এর.শিক্ষা।
কংগ্রেসের জন্ম ব্রিটিশ-ভারতে।১৮৮৫ সালে।ব্রিটিশ সিভিলিয়ান অ্যালান অক্টাভিয়াম হিউম ইংরেজের স্বার্থরক্ষা ও স্বার্থসিদ্ধির করার জন্যই ভারতীয় অর্থবান-শিক্ষিত ও প্রভাবশালীদের নিয়েই কংগ্রেস গড়ে তোলা হয়।নেতাজীর মতো কয়েকজন দেশপ্রেমিক দুর্ভাগ্যক্রমে কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হয়ে দেশ স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু স্বার্থান্বেষী কংগ্রেসীদের চক্রান্তে তাঁরা সরে আসতে বাধ্য হন।শুরু থেকেই কংগ্রেস নেতাদের দুর্বলতা বিদেশের প্রতি।ভারতের প্রতি তাঁদের মমত্ববোধ নেই।অন্যদিকে,ভারতীয় কমিউনিস্ট যারা তাদেরও বিশ্বাস-ভরসা-প্রেম হয় চীন নাহয় তো রাশিয়ার প্রতি।একজন বলেন,”হিন্দি চিনি ভাই ভাই” তো আরেক্পক্ষ গলা ফাটায়,”চিনের চেয়ারম্যান,আমাদের চেয়ারম্যান”!ভাবুন একবাক কী দেশপ্রেমের বন্যা এদের!!এই দুই পক্ষই ভারতকে ভোগ্যভূমি মনে করে।মূলত ব্রিটিশদের সাথে এদের মানসিকতার খুব মিল!উভয়ই ভারতকে দোহন করে নিজেদের বিত্ত বাড়াতে পটু!
কিন্তু বিজেপি বা আর এস এস ভারতকে মাতৃভূমি রূপে পূজা করে।দেবভূমি মেনে প্রণতি জানায়।ভারত তাদের কাছে মোক্ষভূমি।
বিবেক অগ্নিহোত্রী তাঁর সিনেমায় মুখোশধারী চিহ্নিত করে দিয়েছেন।তাই মুখোশধারীরা আক্রমণ চালায় প্রদর্শনী যাতে না হয়।
এই দেশ-শত্রুদের ভারতবাসী দেখেছে দিল্লির হিংসায়।দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ২০১১ সাল থেকে হিন্দুদের উপর ঘটে যাওয়া নানা আক্রমণে।
দ্বিতীয় পর্ব
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে শিক্ষা ক্ষেত্রে এক গভীর ঐতিহ্য ও পরম্পরা বজায় ছিল।আশ্রমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক-ছাত্র বা গুরু-শিষ্য সম্পর্কের মধ্যে পিতা-পুত্রের অধিকার ছিল।আর্থিক লেনদেন সেখানে ছিল অপ্রাসঙ্গিক।গুরুগৃহ বা আশ্রমই ছিল সনাতনী শিক্ষার মূল ভিত্তি।গণিত হোক,মহাকাশ বিজ্ঞান হোক,পুরাণ সাহিত্যই হোক–সব শিক্ষার ভিত গড়ে উঠত আশ্রম থেকেই।প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে সে-শিক্ষা হত স্বয়ংসম্পূর্ণ।যা রবীন্দ্রনাথকেও আকৃষ্ট করেছিল।
আশ্রম ছাড়াও রাজা-মহারাজাদের বদান্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে উঠেছিল।সামগ্রিক ভাবেই সেগুলি ছিল বিশ্ব-বিদ্যা শিক্ষার মহান আলয়।কিন্তু যবে থেকে ভারতে বহিরাগত মুসলমানের অনুপ্রবেশ-আক্রমণ ঘটেছে,তবে থেকেই শিক্ষালয়গুলির ধ্বংস হওয়া শুরু হয়েছে।কেন না,শিক্ষাব্যবস্থার মূলচ্ছেদ করা গেলেই যে-কোনো জাতির মেরুদন্ড অতি সহজেই ভেঙে দেওয়া যায়!এটা মুসলিম শাসকরা ভালমতোই জানতেন।নালন্দা-তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবেই শত্রুদের হাতে ধ্বংস হয়।মূল্যবান পুঁথিগুলি অগ্নিসংযোগ বা অন্যান্য ভাবে নষ্ট করা হয়!
অন্ধকারের জীব জ্ঞানের আলোকে ভয় পায়।জ্ঞান মনোজগতে যে চেতনা আনে তাকে ভয় পায় ধর্মান্ধরা।তাই তো দেখা যায় যে,মোগল ও অন্যান্য মুসলমান শাসন আমলে বড় বড় হর্ম্যগৃহ,প্রমোদগৃহোদ্যান তৈরি হলেও একটাও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয় নি।
অতি প্রাচীন ভারতে শিক্ষা ছিল বিচ্ছিন্ন ভাবে আশ্রম-কেন্দ্রীক।গুরুর জ্ঞান-তপস্যার উপরেই ছাত্রদের পারদর্শীতা নির্ভর করত।পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা এল।
মুসলমানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েও কিছু কিছু পাঠশালা,টোল টিকে ছিল।কিন্তু ইংরেজ আমলে এসে সেগুলিও গেল।দেশীয় শিক্ষানুরাগীদের প্রচেষ্টায় দেশীয় শিক্ষা পুনরায় প্রচলনের জন্য দেশীয় বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠল।ইংরেজও কিছু শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করে।কিন্তু তা ছিল ভারতীয়দের কেরানি বানানোর উদ্দেশ্যে।
দেশ স্বাধীন হবার পর,বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার করুণদশা দেখা দিল।স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম কয়েক বছর কংগ্রেসী শাসনে এরাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থা ঢিমে তালে চলেছিল।কিন্তু বাম শাসনে এসে শিক্ষালয়গুলি রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হল।শুরু হল ‘অনিলায়তন’-এর নামে শিক্ষাব্যবস্থার বুকে জগদ্দল পাথরের মতো এক ‘অচলায়তন’ চেপে বসল!বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ পেতে গেলেও রাজনৈতিক নেতাদের তল্পিবাহক হতে হত!পাঠক্রম থেকে দেশপ্রেম-স্বাভীমান-প্রাচীন ঐতিহ্যের কাহিনিগুলো তুলে দেওয়া হল।ভাড়ায় খাটা স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে ইসলাম ঘরানার ইতিহাস লেখানো হল।পড়ুয়ারা সেটাই গলাধঃকরণ করতে বাধ্য হল।ছাত্র-শিক্ষক বা গুরু-শিষ্যের পিতাপুত্রসুলভ আন্তরিক সম্পর্ক হারিয়ে গেল।পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাস্নেহ থাকল না।অতি আধুনিকতার নামে এলো বেলেল্লাপনা!
নকসাল হোক বা মাওবাদীরাই হোক শিক্ষার প্রতি তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।তাদের কাজই হল নিরীহ মানুষদের মনে লোভ-ক্ষোভ-ভয় ঢুকিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী করে তোলা।তাঁরা রাজি না-হলে তাঁদের হত্যা করতে দুবার ভাবে না নকসাল-মাওরা।
বিবেক অগ্নিহোত্রী তাঁর সিনেমা “বুদ্ধ ইন আ ট্রাফিক জ্যাম”-এ দেখিয়েছেন এই নকসালীদের শিক্ষার প্রতি,শিক্ষকের প্রতি অবজ্ঞা,সন্দেহ,জিঘাংসা মনোবৃত্তি।সনাতনী শিক্ষায় ছাত্র-শিক্ষকের মধুর সম্পর্ককে নকসালী মাওরা কোথায় নামিয়েছিল বিবেকবাবু তা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করেছেন।ছাত্র-শিক্ষকরা একসাথে বসে মদ্যপান,ধূমপান করছে–এটা ভারতের শিক্ষা নয়।এটা বিদেশী ভাবধারায় বিশ্বাসীদের ভারতের শিক্ষা-ঐতিহ্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন ছাড়া আর কিছু নয়!
শিক্ষক বা গুরুদেবের প্রতি পড়ুয়াদের স্বাভাবিক ভাবেই শ্রদ্ধা-সম্মান-বিশ্বাস গড়ে ওঠে তাঁদের আচার-আচরণ,কথন,দৈনন্দিন জীবন যাপন দেখে।এমন-কি অনেক ছাত্রছাত্রী প্রিয় শিক্ষককে জীবনের আদর্শরূপেও গ্রহণ করে।সিনেমাটির কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্র বিক্রম তাঁর শিক্ষকের প্রতি বিশ্বাসী ছিল।শিক্ষকের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রান্তীক অরণ্যবাসীদের সাহায্যর জন্য এগিয়েছিল।কিন্তু তাতে শিক্ষকের স্বার্থ ব্যাহত হবার সম্ভাবনা ছিল।তার শিক্ষক রঞ্জনবাবু (অভিনেতা অনুপম খের) আসলে একজন শহুরে নকসাল নেতা।ভালমানুষি মুখোশের আড়ালে একজন সুবিধাবাদী কসাই।তাঁরই নির্দেশে ছাত্রকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়।যদিও শিক্ষকের স্ত্রীর সহযোগিতায় বিক্রম বেঁচে যায়।
বাম বা ডান দুই শাসন আমলেই পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র-ক্ষেপানো রাজনীতি খুব রমরমা ভাবে চালানো হয়েছে।হচ্ছেও।তাদের নৈতিক শিক্ষা,দেশের ঐতিহ্যের শিক্ষা,মহাপুরুষদের জীবনী শিক্ষা কিছুই তাদের দেওয়া হয় না।দেশের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস তারা জানে না।তাই মহাপুরুষদের মূর্তি ভেঙে পৈশাচিক উল্লাসে মাতে।বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যকে পদদলিত করে অবলীলায়।স্বাধীনতার পর যতজন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন,তার নব্বই ভাগই ছিলেন মুসলমান।ফলতঃ জাতীয় শিক্ষানীতিতে দেশবাদী-ঐতিহ্যবাহী কোনো শিক্ষানীতি গৃহীত হয় নি।বাস্তবমুখি তো নয়ই।২০২০ সালে এসে জাতীয়বাদী কেন্দ্র সরকার প্রকৃত জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছে।
সাধারণত শিক্ষকদের সমাজ সম্মানের চোখে দেখে।বামফ্রন্ট সরকার সমাজের এই দুর্বলস্থলকেই রাজনীতির অন্যতম মূলধন করে।সরকারি কর্মচারি হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকদের সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়।অথচ অন্যান্য দপ্তরের কর্মিদের সেই অধিকার নেই।কেন না,শিক্ষকদের দিয়েই সমাজের মগজধোলাই সহজে করা যায়।শিক্ষকরাও রাজনীতির পতাকাবাহি হয়ে তাঁদের মূল পেশাকে গেল ভুলে।পড়ুয়াদেরও সামগ্রিক ক্ষতি সাধিত হল।কেউ কেউ-বা মহা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলো।এলো ঠিকই।কিন্তু কী শিক্ষা নিয়ে এলো,কী নিয়েই-বা বেরবে!মনিষীদের অপমান করা।মূর্তি ভাঙা।বিশ্বভারতীকে কলুষিত করা।সত্যকথা বলা চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা।মুক্ত চিন্তনের মুক্তপ্রবাহকে রুদ্ধ করা।আর ঝান্ডা হাতে গলাবাজি করা!
সুজিত চক্রবর্তী (Sujit Chakraborty)