মহারাষ্ট্রে ফের ক্ষমতায় বিজেপি-শিবসেনা জোট | সোমবার গৃহিত ভোটের ফলাফলে এই রাজ্যে ১৬১টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি-শিবসেনা জোট | অন্যদিকে এনসিপি-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে যেতে চলেছে ৯৮টি আসন | এবারের নির্বাচনে বেশকিছুটা আসন সংখ্যা কমেছে শাসক জোটের | তবে রাজ্যের এই ফলাফলকে অভূতপূর্ব বলে বর্ণনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এবং বিজেপি সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এদিকে, ফল প্রকাশের পরে সাংবাদিক বৈঠকে জোট সঙ্গীর দিকে ইঙ্গিত করে দলের গুরুত্ব বৃদ্ধির দাবি করেছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। অন্যদিকে নিজেদের আসন বাড়ায় খুশি এনসিপি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব | এই নির্বাচনের ফলে অনেকটাই চাঙ্গা তারা | সদ্য শেষ হওয়া মহারাষ্ট্রে ২৮৮টি আসনের মধ্যে ১৬১টি আসন পেতে চলেছে বিজেপি-শিবসেনা জোট। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এই রাজ্যে ১০৫ টি আসন পেতে চলেছে বিজেপি | জোট সঙ্গী শিবসেনা পাচ্ছে ৫৬ টি আসন | অন্যদিকে এনসিপি-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে যেতে চলেছে ৯৮টি আসন | এরমধ্যে এনসিপি পেতে চলেছে ৫৪টি আসন | আর কংগ্রেস পাচ্ছে ৪৪টি | উল্লেখ্য এবারের নির্বাচনে প্রচারে ঝড় তুললেও এবার মাত্র একটি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনাকে | অন্যান্যদের ঝুলিতে গেছে ২৯টি আসন। মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনার মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেসের জোট শরিক এনসিপি সভাপতি শারদ পাওয়ার বলেছেন, এনসিপি-কংগ্রেস ও অন্য শরিকরা একসঙ্গে আলোচনায় বসে ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা স্থির করবে। শিবসেনার সঙ্গে যাচ্ছি না আমরা। শরদ আরও বলেন, বিরোধীরা খেটেছে, কঠোর পরিশ্রম করেছে। কংগ্রেস-এনসিপি ও শরিকরা তাদের সেরাটা দিয়েছে। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। ক্ষমতা আসে, আবার চলেও যায়। কিন্তু একটা লক্ষ্য, উদ্দেশ্যের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা জরুরি। আমরা মানুষকেও আমাদের ভালবাসা দেওয়ায় ধন্যবাদ জানাই। তাঁকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা বলেছে, একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, যারা আমাদের ত্যাগ করেছে, তাদের মানুষ গ্রহণ করেছি। যারা চলে গিয়েছে, তাদের দলত্যাগে লাভ হয়নি। এদিকে, মহারাষ্ট্রে ফের ক্ষমতায় বসতে চললেও, বিজেপির ফল আশানুরপ না হওয়ায়, মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে শরিক শিবসেনা।সাংবাদিক সম্মেলন করে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বলেন, সঙ্গে এদিন উদ্ধব বলেন, ‘সেইসময় আমরা ৫০-৫০ ফর্মুলায় একমত হয়েছিলাম। এবার সময় এসেছে সেটা প্রয়োগ করার।’ এদিন তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, ‘শিব সেনাকে কম আসন দেওয়া হয়েছিল। সবসময় আমরা জায়গা ছাড়তে পারব না। কে বড় ভাই আর কে ছোট সেটা বড় কথা নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক।’ সূত্রের খবর, ছেলে আদিত্য ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য বিজেপিকে চাপ দিতে চলেছেন উদ্ধব। আসন সংখ্যা কমলেও বিজেপির দাবি, তাদের স্ট্রাইক রেট গতবারের চেয়েও ভাল। সেইসঙ্গে ফের শিবসেনাকে পাশে নিয়েই চলার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী | এদিন জনতাকে ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠান থেকে রাজ্যের ফলাফলকে অভূতপূর্ব বলে বর্ণনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এবং বিজেপি সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজনাথ সিং, নীতীন গড়করির মতো নেতারা। প্রধানমন্ত্রী বলেনন, “মহারাষ্ট্রে একইভাবে ২০১৪ সালের আগে বিজেপি সবসময় জুনিয়র পার্টনার ছিল। আমরা শিবসেনার সঙ্গে ছিলাম। সরকার গড়লেও আমরা শিবসেনার নেতৃত্বেই গড়েছি। কিন্তু, গত পঞ্চাশ বছরে একজন মুখ্যমন্ত্রীও টানা পাঁচ বছর মহারাষ্ট্রের সেবা করতে পারেননি। পাঁচ বছর টানা মুখ্যমন্ত্রী থাকা কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। পঞ্চাশ বছর পর প্রথমবার ফড়ণবিশ এই সুযোগ পেলেন। ৫০ বছর পর্যন্ত দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও কোনও মুখ্যমন্ত্রী গোটা পাঁচ বছর কুর্সিতে থাকতে পারেননি। আগেরবার আমরা আলাদা লড়েছিলাম। কিন্তু, মানুষ ঠিক করে দিয়েছে বিজেপি-শিব সেনা আলাদা লড়তেই পারে না। এই জোট পাঁচ বছর স্থায়ী সরকার চালিয়েছে। এবারও আমরা বড়সড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি। আমাদের টিম নতুন ছিল। অভিজ্ঞতা ছিল না। এসব সত্ত্বেও পাঁচ বছর পর আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে মানুষ। আমি মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই, আপনাদের সেবায় আমরা আগেরবারের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করব। ত্যাগ বা তপস্যায় কোনও ঘাটতি থাকবে না।” উল্লেখ্য, ২০১৪-র মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে পৃথ্বীরাজ চৌহ্বানের সরকারের পতন ঘটে। দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের নেতৃত্বে মসনদে বসে বিজেপি-শিবসেনা জোট। ২০১৪-তে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১২২ ও শিবসেনা ৬৩ অর্থাৎ মোট ১৮৫টি আসনে জয়ী হয়।
উল্টোদিকে ২০১৪-তে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৪২ ও এনসিপি ৪১টি বিধানসভা আসনে জয়ী হয়। দুই দল মিলিয়ে মোট ৮৩টি আসন দখল করে।
2019-10-25