করোনায় ভুগছে দেশ, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তাদের সচিব পদে নিয়োগে সায় কেন্দ্রের

দেশজোড়া করোনা আবহের মধ্যেই সেনাবাহিনীতে তৈরি হতে চলেছে নতুন ইতিহাস। সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হল। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার। এর আগে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলালেও আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ অতীতে কখনও হয়নি।এবার আনুষ্ঠানিকভাবেই সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের প্রতিরক্ষামন্ত্রকে যুগ্ম ও অতিরিক্ত সচিব হিসাবে নিয়োগ করা হবে।

এতদিন তিন সামরিক বাহিনীর অনেক অফিসারই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে, বিশেষত মিলেটারি বিষয়ক দফতরে অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম – সচিবের কাজ সামলাতেন। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিয়ে তৈরি মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি সেনাবাহিনীর লেফটেনান্ট জেনারেল অনিল পুরীকে মিলিটারি বিষয়ক দফতরের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এছাড়াও সেনার মেজর জেনারেল কে নারায়ণন, রিয়ার অ্যাডমিরাল কপিল মোহন ধীর, এয়ার ভাইস মার্শাল হরদীপ বৈঁসকে মিলিটারি বিষয়ক দফতরের যুগ্ম-সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এঁরা প্রত্যেকে এতদিন অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিবের দায়িত্বই সামলাচ্ছিলেন। ২০২০ সাল থেকে তাঁরা এই পদগুলির দায়িত্ব সামলালেও আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ করা হয়নি।

সামরিকবাহীনির সংস্কারের পথে হেঁটে গতবছরই মিলিটারি বিষয়ক দফতর বা ‘ডিপার্টমেন্ট অব মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স ‘ তৈরি হয়েছিল। চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতই প্রথম ওই দফতরের সচিবের মর্যাদাপ্রাপ্ত অফিসার।

সামরিক কর্তারা মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক মাইলফলক বলে আক্ষায়িত করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মিলিটারি বিষয়ক দফতর বহু দিন ধরেই চাইছিল, অফিসারদের অতিরিক্ত বা যুগ্মসচিব পদে নিয়োগ করা হোক। এতদিন পর্যন্ত আইএএস ছাড়া অন্য কাউকে এই সব পদে নিয়োগ করা হতো না।

উল্লেখ্য, দেশজুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ। অদৃশ্য এই মারণ ব্যাধির থাবায় বিপর্যস্ত জনজীবন। ক্রমশ জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এই অবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোতভাবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।

করোনা মোকাবিলায় আপৎকালীন তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহারের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হল বাহিনীর তিন শাখাকেই। গত শুক্রবার একটি সরকারি বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে কাজ করতে হবে সশস্ত্র বাহিনীদের।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাহিনীকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন রাজ্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ, কোভিড হাসপাতাল নির্মাণ, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি সহ প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জামের সরবরাহের সহায়তা করবে। শুধু তাই নয়, এই বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এঔ সহায়তা করতে বলা হয়েছে।

মাত্র তিন মাসের জন্য অর্থাৎ ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন সশস্ত্র বাহিনীর অফিসাররা। গত সপ্তাহে সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল অফিসারদেরও এই বিশেষ ক্ষমতা স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

এছাড়াও কমান্ডার এলাকা এবং সাব কমান্ডার এলাকা ভিত্তিক আর্থিক ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কমান্ডার এলাকায় হাসপাতাল, অক্সিজেন প্ল্যান্ট, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহের জন্য দেওয়া হবে ৫০ লাখ টাকা এবং সাব কমান্ডার এলাকায় দেওয়া হবে ২০ লাখ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.