পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) ও পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের রাজনীতিতে দুইটি ঘটনা বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণকারী। ঘটনা দুইটি নিম্নরূপ:
১. গত সপ্তাহে বাংলাদেশের এক আইনজীবী শ্রী অশোক ঘোষ বাংলাদেশ পুনরায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হোক্ এই মর্মে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণের একাংশ তাঁর ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নামে। তাদের বক্তব্য ছিল রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের অপসারণের দাবী তুলে অশোক ঘোষ নাকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উস্কানি দিয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়ার দাবীতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি কিভাবে থাকতে পারে, তা সাধারণ যুক্তির অগোচর। এমত প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রী অশোক ঘোষকে অবশ্য তাঁর আইনি নোটিশ উইথড্র করে নিতে হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারও জানিয়ে দিয়েছে যে এ নিয়ে আপীল করার অধিকার সে দেশের হিন্দুদের নেই। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন হতাশা প্রকাশ করে টুইট করেছেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলবাদী মুসলিমদের মুখপাত্র ভিন্ন আর কিছুই নন। এমত আপীল করার কারণে শ্রী অশোক ঘোষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলে বাংলাদেশ সূত্রে খবর।
২. বাংলাপক্ষের কর্ণধার গর্গ চ্যাটার্জীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গিয়েছে আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে, আসামের মানুষের কাছে সনির্বন্ধ ক্ষমাপ্রার্থনা করতে। অনতিপূর্বে, গত জুন মাসে অহম ডাইন্যাস্টির প্রতিষ্ঠাতা চাওলাং সুকফাকে “চৈনিক আক্রমণকারী” আখ্যা দিয়ে তাঁর সম্বন্ধে অপমানজনক মন্তব্য করেছিলেন গর্গ। তার প্রতিক্রিয়ায় ১৯শে জুন আসামের ডিব্রুগড় থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় FIR. আসাম পুলিশ চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির 153A এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের 67 নম্বর ধারা অনুযায়ী। আসাম পুলিশ গর্গকে গ্রেফতার করতে পশ্চিমবঙ্গে আসে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের নির্দেশে। কিন্তু শাসক দল অনুগত গর্গকে গ্রেফতার করতে আসাম পুলিশ ব্যর্থ হয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অসহযোগিতায়। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের হয়ে গর্গকে রক্ষা করে। তারপর গত ২২শে আগস্ট আসামবাসীর কাছে এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে গর্গ চ্যাটার্জী।
এই দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাপক্ষ ও তার কর্ণধার গর্গ চ্যাটার্জী সম্বন্ধে কিছু তথ্য ঝালিয়ে নেওয়া এবং তার পর আপাত-পৃথক দুই ঘটনার পারস্পরিক সম্পর্ক কি সে সম্বন্ধে খানিক আলোকপাত অপ্রাসঙ্গিক হবে না। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বাংলাপক্ষ নামক অর্গানাইজেশনটির ভূমিকা নিয়ে সাধারণ নাগরিক সচেতনতা কতখানি, এবং পশ্চিমবঙ্গের মত একটি সীমান্তবর্তী রাজ্যে এমত একটি সংগঠনের রাজনৈতিক তাৎপর্য আদতে কি, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে সে সম্পর্কে আলোচনা বরং যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।
কিছুকাল আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি-সচেতন সমাজের অনেকে মনে করতেন যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বাংলাপক্ষ বা গর্গ চ্যাটার্জীরা আদতে নন-ইস্যু। তাদের সম্বন্ধে বেশি কথা বললেই বরং তাদের অযথা প্রচার পাইয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ইদানীং মানুষের মতামতের পরিবর্তন হয়েছে। বস্তুতঃ, গর্গ চ্যাটার্জী এবং বাংলাপক্ষের অন্যান্য সদস্যরা যেভাবে সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বাংলাভাষী এবং নন-বেঙ্গলি স্পীকিং মানুষের মধ্যে উগ্র বিভাজনমূলক মন্তব্য নিয়মিত করে গিয়েছে, তাতে রাজ্যের মানুষের এক বড় অংশের মধ্যে তাদের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের মানুষের ওপর বাংলাপক্ষের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রভাব যেমনই হোক্ তাদেরকে পূর্ণতঃ অগ্রাহ্য করা যে রাজ্যের স্বার্থে অনুচিত, সে সম্বন্ধে বৃহত্তর জনমত তৈরি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের সামনে বাংলাপক্ষের নানা বক্তব্য রাজ্যের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছে, যা করতে চাওয়াই এদের অন্যতম লক্ষ্য বলে সন্দেহ হয়। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী সম্বন্ধে বাকি ভারতবর্ষের মনে বিকর্ষণের জন্ম দিতে পারলে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভেদ বুনতে সুবিধা হয়, কারণ তাতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকেও বোঝানোর সুযোগ থাকে যে অন্যান্য প্রদেশের মানুষ যখন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীকে পছন্দ করে না, তখন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীই বা পশ্চিমবঙ্গের বুকে অন্যান্য প্রদেশের মানুষকে সহ্য করবে কেন? বিচ্ছিন্নতার বুননটি এই আদলে করার চেষ্টা অনবরত চালিয়ে গিয়েছে বাংলাপক্ষ। এদের বক্তব্য থাকে মূলতঃ এইপ্রকার যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি বাংলাভাষীদের জন্য সৃষ্ট, অতএব হিন্দিভাষী বিহারী, মাড়োয়ারী, গুজরাটী ইত্যাদিদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় দেওয়া হোক, কারণ এরা পশ্চিমবঙ্গের বুকে হিন্দি আগ্রাসন ঘটাচ্ছে, খাদ্য, ভাষা, পরিধেয় ও সাংস্কৃতিকভাবে বাংলা ও বাঙালীকে কোণঠাসা করছে এবং ব্যবসাবাণিজ্যের নানা ক্ষেত্রে এদের উপস্থিতি নাকি নিজেদের রাজ্যে জাতিগতভাবে বাঙালীর সমৃদ্ধির সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। বাস্তবে যত অসত্যই হোক, এমত নেতিবাচক বক্তব্য কিছু মানুষকে চেতনাভ্রষ্ট করতে সক্ষম কারণ রাজনীতি ক্ষেত্রে নেতিবাচকতার তাৎক্ষণিক ক্ষমতা ইতিবাচকতার চেয়ে বেশি। উপরন্তু, এদের বক্তব্য রাখার ধরন উগ্র বিদ্বেষমূলক হলেও তার নেতিবাচক বিনোদন মূল্য আছে। ফলে কিছু লোক এদের বক্তব্যের এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালুর জন্য এদের বক্তব্য শোনেন এবং তার ফলেও তারা কিছু অতিরিক্ত প্রচার পায়।
বাংলা ও বাঙালী নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে অবসেসড্ এ হেন বাংলাপক্ষ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির ঐতিহাসিক সৃষ্টিলগ্নের প্রকৃত সত্য সম্বন্ধে বলে না। পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল হিন্দু বাঙালীর জন্য। ভাষা নয়, ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছিল বিভাজন। সেই জন্য পশ্চিমবঙ্গ আদতে সকল বাংলাভাষীর রাজ্য নয়, বরং হিন্দু বাঙালীর রাজ্য। কথাটি শুনতে সাম্প্রদায়িক বিভেদমূলক হলেও আদতে বিভেদমূলক নয়, বরং একটি সত্য যার নির্মোহ উপস্থাপন প্রয়োজন। নির্মোহ উপস্থাপন প্রয়োজন কারণ ধর্মভিত্তিক দেশভাগের ফলে ইসলামিক নির্যাতনের শিকার হয়ে পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হওয়া মানুষের পক্ষে সে বিষয়ে প্রকৃতই নির্মোহ থাকা বাস্তবে সম্ভব নয়। কিন্তু নৃশংস সত্যের আবেগতাড়িত উপস্থাপন অন্তরে পুঞ্জীভূত অপমানবোধ ও ক্ষোভের প্রশমণ ঘটাতে পারে। অপরপক্ষে, নির্মোহ উপস্থাপন সে প্রদাহকে নির্বাপিত হতে দেয় না। এই প্রদাহই জাতিগতভাবে হিন্দু বাঙালীর প্রতিবাদ-স্ফূরণের চালিকাশক্তি। অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশে হিন্দুর ওপর হওয়া অত্যাচারের বিষয়ে হিন্দুর সামগ্রিক প্রতিবাদী স্বরক্ষেপন কালের নিয়মেই অমোঘ। প্রচার ও সংগঠিত প্রয়াসের দ্বারা তাকে বিলম্বিত করা সম্ভব, কিন্তু চির-প্রতিহত করা অসম্ভব।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের এক বড় অংশ অবশ্য মনে করেন যে কোনো এককালে মুসলমান তাঁদের পূর্ব পুরুষের ওপর চড়াও হয়েছিল বলে আজ তার ‘পাল্টা দিতে’ তাঁরা পারবেন না কারণ তাঁদের গ্রুমিং ও শিক্ষা তেমন নয়। তাঁরা যুক্তি সাজান যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে হলেও তাঁদের অভিভাবকরা তাঁদেরকে অসাম্প্রদায়িক বিশ্বমানবতার শিক্ষাই দিয়েছেন। এই শ্রেণীর হিন্দু বাঙালী যে আদতে অবচেতনে ভয়ার্ত, সেই মনস্তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যে বিশদে না গিয়েও বলা যায় যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের অন্তরে পুঞ্জীভূত ভয়ও উপলব্ধির ভিসুভিয়াস হয়ে বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে বিলীন হয়ে আছে। তাঁরা সচেতনভাবে না চাইলেও সে ভিসুভিয়াস কোনো না কোনো এক দিন তার সমস্ত চিন্তন ও উপলব্ধির লাভা উদ্গীরণ করবেই। তাকে রোখার সাধ্য যে কোনো মানুষের নেই, তা তাঁরা জানেন না। এই শ্রেণীর এক বিশিষ্ট বাঙালী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক অতীতে একদা তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন যে তাঁর আদত দেশ তবে কোথায়। একবার দেশ ছাড়তে হয়েছে, আবারও যদি ছাড়তে হয় তবে তিনি যাবেন কোথায়? শীর্ষেন্দুবাবুর সে প্রশ্নের ছত্রে ছত্রে ছিল অকৃত্রিম ‘ভয়’। তিনি জানেন কেন তাঁকে ছেড়ে আসতে হয়েছিল ময়মনসিংহ। তাঁর শ্রেণীর মানুষ হয়ত আপাতভাবে উপলব্ধি করেন না যে মানুষের অস্তিত্বের লড়াই তার চিরন্তন লড়াই, সে লড়াইয়ের কোনো শেষ নেই। অথবা, হয়ত উপলব্ধি করেন এবং তাতে এতই ট্রমাটাইজড্ হন যে জোর করে সে চিন্তা মন থেকে সরিয়ে দিতে চান। এই শ্রেণীর মানুষ কি বোঝেন যে কাউকে তোষণ করে অস্তিত্বের অমোঘ লড়াইকে থামানো যায় না? অপরকে অযথা আক্রমণ না করে আত্মরক্ষার সে লড়াই যথাযথভাবে লড়তে পারা পরম মানবধর্ম, তা কি এঁরা অনুভব করতে পারেন? সুকুমার রায় তাঁর ‘জীবনের হিসাব’ কবিতায় সে উদাহরণ অতি সহজভাবে দিয়েছেন।
দেশভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের ইসলামিক দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বাস করতে হবে এবং ইসলামিক দেশে মাইনরিটি সম্প্রদায়কে যে চরম রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ভোগ করতে হয়, সেই দুর্ভোগ যাতে হিন্দু বাঙালীকে পোহাতে না হয়, তার জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশের দ্বিখণ্ডকরণের প্রস্তাব রেখেছিলেন এবং তাকে কার্যকর করতে সমর্থ হয়েছিলেন নিজস্ব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দক্ষতার কারণে। দেশভাগ যদি অনিবার্য হয়, বঙ্গবিভাজনও সেক্ষেত্রে অনিবার্য—এই ছিল শ্যামাপ্রসাদের অবস্থান এবং পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল হিন্দু বাঙালীর হোমল্যান্ড হিসেবে। বাংলাপক্ষের গর্গ চ্যাটার্জীরা এ বিষয়টিকে সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে বাঙালীর রাজ্য বলে চিহ্নিত করতে চায়। তাদের মতে বাংলাভাষী মাত্রেই বাঙালী এবং বাঙালীর কোনো হিন্দু-মুসলমান হয় না। কিন্তু এমত সংজ্ঞা অনুযায়ী উভয় সম্প্রদায়ই বাঙালী হওয়া সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে বাংলাভাষী মুসলমান কেন নিত্য আঘাত হানছে সে দেশের সংখ্যালঘু বাঙালী হিন্দুর জীবন, জীবিকা ও মানসম্মানের ওপরে, সে প্রশ্নকে এড়িয়ে যেতে চায় গর্গরা। এড়াতে একান্ত না পারলে এই বলে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যে সেই সমস্যাগুলি বাংলাদেশের, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ এক নয়। বাংলাদেশে ইসলামী সংকীর্ণতা থাকতে পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ উদারপন্থী, প্রগতিবাদী, সেক্যুলার বাঙালীর রাজ্য। সেখানে হিন্দু মুসলমান সব সমান, সবাই সেক্যুলার। চাপের মুখে বাংলাপক্ষের সদস্যরা প্রায়শঃ বলে ফেলে যে এ দেশ চালনার মাপকাঠি বাংলাদেশ হতে পারে না। কিন্তু মনের অগোচর কিছু নেই। ভাষায় তার প্রকাশ থাক আর না থাক্, অন্তরের উপলব্ধি যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে। “The supreme truths are neither rigid conclusions of logical reasoning nor affirmation of creedal statement but fruits of soul’s inner experience.”— Sri Aurobindo. অস্তিত্বরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাপক্ষের এমত ন্যারেটিভ ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এক সুবৃহৎ অংশ এদের এমত মিথ্যাভাষণে ক্ষুব্ধ। গর্গরা যে এ রাজ্যে রাডিকাল ইসলামি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিভূ, তা তাঁরা জানেন ও বোঝেন।
দেশবিভাগের সময় প্রস্তাব উঠেছিল মূলতঃ তিনটি। ১. মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্পূর্ণ অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই দাবী ছিল মুসলিম লীগের। ২. অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশ একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। প্রস্তাব রেখেছিলেন শ্রী শরৎ বোস এবং ৩. মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে বঙ্গপ্রদেশকে যদি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতেই হয়, তবে বঙ্গপ্রদেশের বিভাজনও অনিবার্য। ভারত বিভাজন যদি করতেই হয়, সেক্ষেত্রে ভাগ না করে বঙ্গপ্রদেশকেও ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা চলবে না। এই দাবী ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। উক্ত তিন দাবীর মধ্যে প্রথম দুইটি দাবীই ছিল দ্বর্থ্যহীনভাবে ভারত-বিভাজনের সপক্ষে। শ্যামাপ্রসাদই একমাত্র যিনি ভারত-বিভাজনের বিপক্ষে এবং অবিভক্ত বাংলাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু মুসলিম লীগের ধর্মভিত্তিক দেশভাগের দাবীর প্রেক্ষিতে এমন কেউই তৎকালে ছিলেন না যিনি বা যাঁরা অবিভক্ত গোটা বঙ্গপ্রদেশ মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও গোটা বঙ্গপ্রদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের অন্তর্ভুক্তই রাখতে চেয়েছিলেন। গত তিয়াত্তর বছরে বহু মানুষ বহু বার বাংলা বিভাজনের সপক্ষে ও বিপক্ষে বহু বক্তব্য রেখেছেন। বহু জল বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী, পদ্মা দিয়ে। ইসলামিক পাকিস্তানের কবল থেকে পূর্ব বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে এসে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গঠন করা গেলেও তাকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখা যায় নি। কিন্তু কেউ কোনোদিন অবিভক্ত বা পুনর্সংযুক্ত বঙ্গপ্রদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের অংশ হিসেবে দাবী করেছেন বলে কোথাও দেখি নি। বাংলা ও বাঙালীর কথা বলা বাংলাপক্ষকেও এই দাবীটি তুলতে কখনওই দেখা যায় নি যেন তা একেবারেই অসম্ভব, অবাস্তব এক দাবী। কিন্তু সম্ভব হোক্, অসম্ভব হোক্, বাস্তব হোক্, অবাস্তব হোক্, আজ, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে সেই দাবীটি তুলতে চাই। বর্তমান বাংলাদেশও পুনরায় ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত হোক। বাঙালীর ধর্মনিরপেক্ষ জাতিসত্তা পূর্ণ বিকশিত হোক। এপারের হিন্দু বাঙালী সেক্ষেত্রে তার ওপারের ভিটেমাটি ফিরে পাওয়ার আশার তরীখানি অন্ততঃ বাইতে পারবে।
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের পর গঠিত হওয়া বাংলাদেশ ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। অথচ সেই ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু’ মুজিবর রহমানও ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রমনা কালীবাড়ির পুনর্নির্মাণ করান নি। যে রমনা কালীবাড়ি ধ্বংস হয়েছিল পাকিস্তানী খানসেনাদের হাতে, বাঙালী মুসলমান মুজিবর রহমানের হাতে শাসনক্ষমতা আসার পরেও তার পুনর্নির্মাণ হল না কেন? বরং মুজিবর রহমান রমনা কালীবাড়ির জমি দান করে দিয়েছিলেন ঢাকা ক্লাবকে। (এ প্রসঙ্গে পাঠকের হয়ত মনে পড়বে যে অযোধ্যায় রামমন্দিরের জমিতেও হাসপাতাল গড়বার দাবী তুলেছিলেন এক শ্রেণীর মানুষ।) বাঙালী মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও বাঙালী হিন্দুর সেন্টিমেন্ট রক্ষা করার দায় মুজিব নেন নি। বাঙালীর যদি হিন্দু-মুসলমান না-ই থাকে, তবে মুজিবর রহমানের এ হেন আচরণকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?
কালক্রমে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ নামেও আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকে নি। ১৯৮৬ সালে এসে তা হয়ে গিয়েছে ইসলামিক এবং রমনা কালীবাড়ির পুনর্নির্মাণ আজও বাংলাদেশে হয় নি। এর সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের আচরণও সাযুজ্যপূর্ণ। মুজিবর রহমানের রমনা কালীবাড়ি পুনর্নির্মাণ না করানো আর শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষণা যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম অপসারণের দাবী জানানোর অধিকার সে দেশের হিন্দুদের নেই, দুই-ই তাদের ভাষাগত ‘বাঙালী’ পরিচয়ের নয়, বরং ধর্মগত ‘ইসলামিক’ পরিচয়ের সাক্ষ্যই বহন করে। এমতাবস্থায় “বাঙালীর হিন্দু-মুসলমান হয় না”—ন্যারেটিভের ঠিক বিপরীতধর্মী একটি বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এক বিরাট অংশের কাছে বর্তমানে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেছে। সেইটি হল, ‘মুসলমানেরই বরং কোনো বাঙালী-অবাঙালী হয় না’। এই প্রতিক্রিয়াশীলতা হিন্দু বাঙালীর এক বৃহৎ অংশের মধ্যে বাসা বাঁধছে বাংলাপক্ষের মত তথাকথিত অরাজনৈতিক সংগঠনগুলির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসত্য প্রচারের ঢক্কানিনাদের তাণ্ডবে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে হিন্দু বাঙালীর অন্তর্নিহিত হিন্দু জাতীয়তাবাদের আগুনকে পুনঃ প্রজ্জ্বলিত করতে পরোক্ষে সাহায্যও করছে বাংলাপক্ষের মত সংগঠন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সপক্ষে উস্কানিমূলক সব পোস্ট।
মুসলমানের ধর্মের মধ্যে এমন নিয়মবিধি নিশ্চিতভাবেই রয়েছে যাতে কোনো স্থান মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেই জায়গাটি ইসলামিক প্রকৃতি ধারণ করে এবং ক্রমে জায়গাটির সেক্যুলার চরিত্র ও বৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে তা একমাত্রিক হয়ে ওঠে। আমাদের দেশভাগের ইতিহাস এবং গোটা পৃথিবীর ইতিহাস সেই বেদনাদায়ক নিষ্ঠুর সত্যের সাক্ষ্য বহন করে। তাতে সাম্প্রতিকতম সংযোজন লেবানন। একটি মুক্তমনের সেক্যুলার দেশ কেবলমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে কিভাবে একমাত্রিক ইসলামিক ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে, তার দুই হপ্তা পুরোনো উদাহরণ লেবানন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের চরিত্রও এক নয়। বর্তমান বাংলাদেশে এমনকি সরকারি কোভিড ত্রাণসামগ্রীও সে দেশের হিন্দুদের মধ্যে বিতরণ করা হয় নি এমন ভিডিও-ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। হিন্দু ত্রাণপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করা হয়েছে যে হিন্দুরা যেন ত্রান গ্রহনের লাইনে না দাঁড়ান কারণ ত্রাণ-তালিকায় হিন্দুদের নাম নেই। কেবলমাত্র পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অন্যান্য ইসলামিক দেশগুলিতেও বিশ্বাস ও জীবনদর্শনের বৈচিত্র্য উদযাপনের স্বাধীনতা নেই। এমত সত্যের প্রেক্ষিতে “বাঙালীর হিন্দু-মুসলমান হয় না”—জাতীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ন্যারেটিভ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালীর এক বৃহৎ অংশের ক্ষোভের কারণ হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এক বড় অংশ আন্দাজ করতে পারে যে বাংলাভাষী মাত্রেই বাঙালী, একথা প্রচার করার মাধ্যমে বাংলাপক্ষের গর্গ চ্যাটার্জী তথা তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক দলটি পশ্চিমবঙ্গের দুয়ার বাংলাদেশের বাংলাভাষী মুসলমানের জন্য অবাধে খুলে দিতে চায় যাতে হিন্দু ও মুসলমান মিলিয়ে বাংলাভাষীর শতকরা উপস্থিতি এ রাজ্যে দ্রুততর গতিতে বাড়তে পারে এবং সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় মুসলমানের শতকরা উপস্থিতিও। আর মুসলমানের শতকরা উপস্থিতি বাড়লেই পশ্চিমবঙ্গের পরিণতি কাশ্মীরের মত হবে বলে আশঙ্কা করার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের যত্র তত্র সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে আশঙ্কা অযৌক্তিক নয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে কিছুকাল পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশীই নাকি ভারতের নাগরিক। এমত হঠকারী ও অসত্য বিবৃতির আদত উদ্দেশ্য প্ররোচনামূলক ছাড়া আর কি হতে পারে?
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এক বিশেষ শ্রেণীর মতে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার আদত কারণ অবশ্য অন্য। তাঁদের মতে তার কারণ হল এ রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির শক্তি বৃদ্ধি। যে রাজ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামীর মত অসংখ্য বিদগ্ধ কবি, সাহিত্যিক রাজ্যে ইসলামি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পায়ের চাপ অনুভব করেও তা না জানার ভাণ করেন কেবলমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার প্রত্যাশায়, সে রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আর কতটাই বা আশা করা যায়? তাই, সেই রাজ্যের সাধারণ মানুষের একটা তাৎপর্যপূর্ণ অংশও যখন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার পিছনে মৌলবাদী ইসলামিক শক্তিকে দায়ী না করে বরং যে রাজনৈতিক দলটি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে তাদেরকেই দায়ী করে, তখন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই সব মানুষেরা মনে করেন মৌলবাদী ইসলামি শক্তি যদি থেকেও থাকে, তবে তাদেরকে না ঘাঁটালেই বুঝি রাজ্যে শান্তির পরিবেশ চির-অক্ষুন্ন থাকবে। ভারতীয় জনতা পার্টি তাদেরকে ঘাঁটাতে যাচ্ছে বলেই রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বালিতে মুখ গুঁজে মরুভূমিতে আঁধির অস্তিত্ব অস্বীকার করে বাঁচতে চায় যে উটপাখি, এই সব পশ্চিমবঙ্গবাসী সেই উটপাখির মনুষ্যাবতার। এঁদের স্মরণ করানো প্রয়োজন যে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতীয় জনতা পার্টির উপস্থিতি ও প্রভাব এ রাজ্যে ছিল না। কিন্তু সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল তার বহু আগে থেকেই। ২০১০ এ উত্তর চব্বিশ পরগনার দেগঙ্গায় মৌলবাদী ইসলামি শক্তি এলাকার হিন্দুদের ওপর যে আক্রমণ শানিয়েছিল সেপ্টেম্বর মাসে, তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে সেনা মোতায়েন করতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারকে। ‘দ্য হিন্দু’র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০১৪’র মধ্যে বছরে গড়ে ২০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা রিপোর্টেড হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০১২ সালে নদীয়ার তেহট্টে এবং ২০১৩য় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিংএর দাঙ্গা। অতএব পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক হিংসার পিছনে ভারতীয় জনতা পার্টিরই ভূমিকা, এটি একটি উটপাখি-প্রকল্প ভিন্ন নয়। বাস্তব হল, ভারতীয় জনতা পার্টির ক্রমবর্ধমান শক্তি এ রাজ্যের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাগুলিকে চাপা দিয়ে দিতে দিচ্ছে না। সেগুলি রিপোর্টেড হয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এ রাজ্যের সংবাদমাধ্যম সে সব বিষয়ে চুপ করে থাকলেও, রাজ্যের ভুক্তভোগী মানুষ আর চুপ করে থাকছেন না। গত ৮ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল।
২০১২—তেহট্ট(নদীয়া)
২০১৩—ক্যানিং (দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা)
২০১৫—উস্থি (দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা)
২০১৫—মল্লিকপুর, ফলতা (দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা)
২০১৫—কালিগঞ্জ (নদীয়া)
২০১৫—সমুদ্রগড় (বর্ধমান)
২০১৬—কালিয়াচক (মালদা)
২০১৬—ধূলাগড় (হাওড়া)
২০১৭—তেহট্ট (হাওড়া)
২০১৭—বাদুড়িয়া-বসিরহাট (উত্তর চব্বিশ পরগনা)
২০১৭—হাজীনগর (উত্তর চব্বিশ পরগনা)
২০১৮—আসানসোল (পশ্চিম বর্ধমান)
২০১৯—ডায়মণ্ডহারবার (দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা)
২০১৯—সন্দেশখালি (উত্তর চব্বিশ পরগনা)
২০১৯—মেটেবুরুজ (কলকাতা)
২০১৯—উত্তরপাড়া (হাওড়া, CAA)
২০১৯-২০২০—বেলডাঙ্গা (মুর্শিদাবাদ, CAA)
২০২০—দত্তপুকুর (উত্তর চব্বিশ পরগনা)
২০২০—তেলিনিপাড়া(হুগলী)
২০২০—চণ্ডীপুর (মালদা)
এছাড়াও গত ৫ই আগস্ট রামমন্দির ভূমি পূজনের দিন কলকাতার রাজাবাজারে নিজের দোকানের ওপর গেরুয়া পতাকা সাজিয়েছিলেন ঐ অঞ্চলের এক ব্যবসায়ী। সেই গেরুয়া পতাকা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজাবাজার। একদল লোক দাবী করেছিল যে ঐ অঞ্চলে কোনো গেরুয়া পতাকা থাকতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমগুলি এই সংবাদ পরিবেশন করে নি।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে রাখা প্রয়োজন যে এ রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল হিন্দু হোমল্যান্ড হিসেবে। অতএব যতদিন পর্যন্ত না অবিভক্ত ভারতবর্ষের পুনঃ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ততদিন পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব অ্যাবসলিউট হিন্দু মেজরিটি রাজ্য হিসেবেই থাকা বাঞ্ছনীয়। এ কথার আদত অর্থ হল, অবিভক্ত ভারতবর্ষের পুনঃ প্রতিষ্ঠা যদি কোনদিনই না হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গকেও অ্যাবসলিউট হিন্দু মেজরিটি রাজ্য হিসেবেই চিরকাল রাখতে হবে। তা না হলে পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায় এবং মৌলবাদী ইসলামিক শক্তির হাতে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে দিয়ে কাশ্মীরী হিন্দুদের পরিণতির দিকে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের ঠেলে দিতে হয়। ইসলামি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিভূ হিসেবে এ কাজকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে বাংলাপক্ষের মত সংগঠন ও গর্গ চ্যাটার্জীর মত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। বাংলা ভাষার আবেগ উসকিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মধ্যে বাঙালী-অবাঙালী বিভাজন সৃষ্টি করতে চেয়ে হিন্দু বাঙালীর হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গকে ইসলামী শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার পরোক্ষ প্রয়াস বহুদিন যাবৎ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আসামকে অপমান করায় আসামের মুখ্যমন্ত্রীর পুরুষকার গর্গকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছে। অতঃপর আসাম গর্গকে ক্ষমা করবে কি না সে সিদ্ধান্ত যেমন আসামবাসী নেবেন, তেমনই, এতদিন যাবৎ নানা কুৎসিত, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দেশদ্রোহমূলক মন্তব্য করে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালীর আবেগকে ধ্বস্ত করার কারণে এবং তাঁদেরকে অপরিসীম বিরক্ত করার কারণে পশ্চিমবঙ্গবাসী গর্গকে ক্ষমা করবেন কি না সে সিদ্ধান্তও পশ্চিমবঙ্গবাসীকেই নিতে হবে।
দেবযানী ভট্টাচার্য্য (Debjani Bhattacharyya)