যাদবপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে নিগ্রহের ঘটনার পরদিন অতি বামেদের প্রচ্ছন্ন মদতদাতা একটি দৈনিক সংবাদপত্র গোষ্ঠীর বাংলা পত্রিকায় ভেতরের পাতায়। ছোট্ট এক টুকরো সংবাদটি অনেকেরই নজর এড়িয়ে গিয়েছে। শ্রীনগর থেকে জনৈক কাশ্মীরি সাংবাদিক রিপোর্ট করেছেন। যে, সেখানে যারা এতদিন সেনাবাহিনীর ওপর পাথর ছুঁড়ে এসেছে, তারাই এখন নিরাপত্তাবাহিনীকে চা খাওয়াচ্ছে। এতে নাকি গোয়েন্দারা বিশাল ভাবনায় পড়েছে। ইত্যাদি। আসলে ভাবনাটা গোয়েন্দাদের নয়। ভাবনাটা জইশ-ই-মহম্মদ আর ভারতে তার এজেন্টদের, যে এজেন্টদের নকশাল’, ‘মাওবাদী’, নিদেন কমিউনিস্ট’বলা চলে। এই এজেন্টদের মদতদাতা ওই পত্রিকা গোষ্ঠীর ইংরেজি সংবাদপত্রের খোদ সম্পাদক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওপর হামলায় দোষ খুঁজে পান না, অবমাননাকর মন্তব্য করেন। আর বাংলা সংবাদপত্র গোষ্ঠীর তো কথাই নেই।‘খোদা’খ্যাত কবি-কন্যা যাকে ‘ডিফ্যান্টো এডিটর’ বলা চলে, নকশালি ‘এডিটর’অন্তত খাতায়-কলমে আর পুরো এডিটোরিয়াল বাহিনী কাগজে আর ফেসবুকে মাঠে নেমে পড়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওপর হামলার সমর্থনে।
কোনও সভ্য দেশে এই জিনিস ভাবা যায় না। দিনের পর দিন এই সংবাদমাধ্যম কাশ্মীরের মানুষদের ওপর সেনাবাহিনীর অত্যাচারের গল্প শুনিয়েছে ৩৭০ বিলোপকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয়ের ওপর হামলার ঘটনার পরদিন সংবাদ কভারেজে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে উঠেছে। সুখী কাশ্মীরের ছবি উঠে এসেছে, কিছুটা অজান্তেই। তাহলে এই মিথ্যাচারের বিচার কবে হবে? গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের এই কদাকার যে ভূমিকা দেখা গেল, তারপরও গণতন্ত্র নিয়ে বড়াই করা সাজে । এই প্রসঙ্গে দু-চার কথা বলতেই হবে। আমার এক কমিউনিস্ট বন্ধু চীন ঘুরে এসে আমায় বলেছিলেন, আশ্চর্য ব্যাপার! গোটা চীন ঘুরে কোথাও তো লেনিন, স্ট্যালিন, এমনকী মার্কস, এঙ্গেলস-এর ছবি চোখে পড়ল না কোথাও ! আসলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও প্রবলভাবে ন্যাশনালিস্ট। বিশেষভাবেইম্পেয়ারিলিস্ট, অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী।
আর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা ঠিক উল্টো। চীনের দালালি করা জন্য যে কমিউনিস্ট অংশটির জন্ম হয়েছিল ‘৬৪-তে, তার কয়েক বছরের মধ্যে আবার এর ভাঙনের মধ্যে দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি অংশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় ঘুণ ধরাবার চেষ্টা করেছে, অপরদিকে আরেকটি অংশ ‘বিপ্লবের নামে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে ভারতবর্ষীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে। এগুলি সাতের দশকের কথা। পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে ভারতীয় গণতন্ত্রে নানান ওলট-পালট হয়েছে। ভারতবর্ষের মানুষ কমিউনিস্টদের বিষবৎ বর্জন করেছেন, আজ স্বদেশপ্রেমী নাগরিকদের কাছে এরা ঘৃণার যোগ্য।
ফলে টিকে থাকতে, বিদেশি রাষ্ট্রের দালালি করতে কমিউনিস্টদের নানাফিকির পন্থা খুঁজে নিতে হয়েছে। ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর পক্ষে বিপজ্জনক একটা শ্রেণী সুযোগ বুঝে তৃণমূলে আশ্রয় নিয়েছিল। বিগত নির্বাচনে সেই জাহাজেও জল ঢুকছে বুঝে এবার তারা নিরাশ্রয়, ফলে আরও বেশি মরিয়া। গত নির্বাচনে প্রচারের ক্যাম্পেনে ওই সংবাদপত্রটির ডি-ফ্যাক্টো এডিটর তো প্রকাশ্যে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার সওয়াল করেছিলেন। আজ ফিনিক্স পাখির মতো অবলুপ্ত কমিউনিস্টদের অক্সিজেন যোগানোর কাজ এই গোষ্ঠীটি করে চলেছে, কখনও কাশ্মীর জুজু, কখনও এনআরসি জুজু, আবার কখনও জেএনইউ, যাদবপুরে উস্কানি দিয়ে। এদের সম্পাদকীয়তে জইশের গুণগান করা হয়, প্রথম পাতার হেডলাইনে ‘অভিনন্দন পাকিস্তান’ লেখা হয়। স্বাধীনতা পূর্ব ও উত্তর আমলে কমিউনিস্ট -জেহাদি-মুসলিম লিগ জোটবন্ধন, এখন চীন-পাকিস্তান সখ্যের দিকে তাকালে বুঝবেন ওই পত্রিকাগোষ্ঠী সেই ধারাকেই বহন করে নিয়ে চলেছে, যা ‘সমৃদ্ধ ভারত — সমর্থ ভারত’ চিন্তা-চেতনার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
দেশের মানুষ যেমন কুলোর হাওয়া দিয়ে দেশদ্রোহীদের বিদায় করেছেন, দেরিতে হলেও জে এন ইউ-যাদবপুরেও একদিন সূর্যের ভোর আসবেই। যাদবপুরে এবিভিপির শক্তি বাড়তেই তাই আক্রান্ত হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ভারতীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর অভ্যন্তরস্থ ঘুণপোকা, ও ‘বিপ্লবী ঘুণপোকাদের যৌথ আক্রমণে। যাদের তাত্ত্বিক সমর্থন ওই সংবাদগোষ্ঠীর এডিটোরিয়াল গোষ্ঠী ও এদের পেটোয়া বুদ্ধিজীবীরা করছেন। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, এই ফ্যাসিবাদ’, ‘অসহিষ্ণুতার যে গল্প জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে চালানো হয়, সেই ‘ফ্যাসিবাদ, ‘ইনটলারেন্স’ ছাড়া কমিউনিজম টিকবেনা, বিশ্বের ইতিহাস সেই শিক্ষাই দিয়েছে। এদের উপরে দেশের মানুষ ফেলেছেন, ছাত্র-ছাত্রীরাও তার ব্যতিক্রম হবেন না। শুধু গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের মুখোশ পরে থাকা জঙ্গি-সমর্থক তথাকথিত ‘সংবাদমাধ্যমটির প্রকৃত মুখটা সবার দেখা উচিত, নইলে বিশ্ব-মানবতা লাঞ্ছিত হতে দেরি হবে না।
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-09-27