ছোটবেলায় যখন বিদ্যালয়ে 14 ই নভেম্বর শিশু দিবস পালন হতো তখন বেশ ছুটির মেজাজেই দিন কাটত।মধ্য বয়সে এসে নিজের কন্যার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এই লেখা। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী আমার কন্যা প্রশ্ন করে বসল- “বাবা ,নেহেরুর জন্মদিনেই কেন শিশু দিবস পালিত হয়?” ব্যক্তিগতভাবে কোনরূপ কোনো দিবস বা ডে এর আমি একদমই সমর্থক নই। কোন একটি নির্দিষ্ট দিনেই কোন বিষয়ের স্মরণ করলেই যে প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হয় কিনা তা অবশ্যই বিচার্য্য বিষয়। সনাতন ধর্মে এই ধরনের ডে বা দিবস এর কোনো উদাহরণ আছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। পূর্ণিমা, অমাবস্যা, রাশি,নক্ষত্র, তিথি ,পক্ষ দেখে নির্দিষ্ট পূজা পদ্ধতির দিনক্ষণ প্রতি বছর নির্ধারিত হতো আগে থেকেই। ডে পালন হলো পাশ্চাত্য রীতি। যা বর্তমানে ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের অধিকার শক্তি সহকারে প্রবেশ করাতে সমর্থ হয়েছে। শুরু শুরু তে কম হলেও এখন ডে এর ছড়াছড়ি।রোজ ডে, কোকোনাট ডে,হাগ ডে, ভ্যালেন্টাইনস ডে, ফাদারস ডে,মাদারস ডে, চিলড্রেনস ডে আরো কত কি!!! বেশ মনে আছে দিবস বা ডে এর জন্য আলাদা একখান খাতাও করেছিলাম চাকুরীর পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়।প্রতি মাসে গড়ে আট থেকে দশটি ডে তো ছিলই। যেহেতু 14 ই নভেম্বর জহরলাল নেহেরুর জন্মদিন এবং উক্ত দিনেই আবার জাতীয় শিশু দিবস বা চিলড্রেনস ডে তাই প্রশ্ন জাগলো নেহেরুজীর সাথে চিল্ড্রেন ডে এর সম্পর্কটি আসলে কি? নাকি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তব্য!! অন্তত আমার এক সহকর্মীর মত তাই ই ছিল। যাইহোক এক্ষেত্রে আমার সৌভাগ্য যে এই বিষয়টি নিয়ে পূর্ব পরিচিত এক কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা কে প্রশ্ন করে বসলাম- আচ্ছা নেহেরুর জন্মদিনেই কেন শিশু দিবস পালিত হয়? নেহেরু কি শিশুদের জন্য আলাদা কিছু করেছিলেন? কি কারনে ঠিক তাঁর জন্মদিনই বাছা হলো? নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল এর পেছনে? ইত্যাদি ইত্যাদি। ভদ্রলোক গম্ভীর হয়ে বললেন -“নেহেরু কে জানতে হলে আপনাকে ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ বইটি অবশ্যই পড়তে হবে”। অগত্যা তাই করলাম। 602 পৃষ্ঠার বই।’ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া‘ (Discovery of India) ,লেখক -শ্রী জহরলাল নেহেরু। বইটিতে চোখ বুলিয়ে যা বুঝলাম, নেহেরুজী বইটিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত ও কিছু মনগড়া কাহিনী বর্ণনা করেছেন।তিনি লিখেছেন তাঁর মার্কসবাদের প্রতি আকর্ষণ, ধর্ম, নিজস্ব জীবন,জাতীয়তাবাদ, সাধারণ নির্বাচন ,ভারতের দূর্বলতা,সংস্কৃতি, আর্য আগমন তত্ত্ব, বস্তুবাদ, বিভিন্ন ধর্ম পদ্ধতি, শিল্প ,ব্যবসা-বাণিজ্য ,মোগল, আরব সহ আরও নানান বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মতামত। কিন্তু শিশুদের জীবন বা শিশু প্রীতিমূলক কিছুই পেলাম না।ভাগ্যক্রমে কয়েকদিন পরেই ওই কংগ্রেস ভক্তের সঙ্গে দেখা হতেই কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম।আপনি যে বললেন ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ বইটি পড়তে, তা পড়লাম ।কই শিশু দিবস নিয়ে তো কিছুই পেলাম না? ভদ্রলোক 360 ডিগ্রি ঘুরে বললেন -“ও-ও-ও আপনি পড়ে ফেলেছেন? আসলে আমারই তো পড়া হয়নি। আজ আসি, পরে কথা হবে।” বলে চলতে শুরু করলেন। স্তম্ভিত হলাম।কিছু বলার ছিল না আমার। এরপর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে যা জানলাম এবং অন্য এক শিশু দিবস নিয়েই আজ বলবো। প্রসঙ্গক্রমে বলা ভালো আমার এক বন্ধু প্রতিম ব্যক্তি আমায় বলেছিলেন- “আচ্ছা যদি বছরের কোন নির্দিষ্ট দিনে কোনো ‘ডে’ পালন করা হয় তাতে সমস্যা কোথায়? ওই নির্দিষ্ট দিনটিতে আমরা যদি নিজের পিতা-মাতা বা শিশুদের বা অন্য কোন মহান ব্যক্তি কে মনে করি, একটু গ্রুমিং করি তাতে তো সকলেরই একটা ‘ফিল গুড’ হয়, তাই নয়কি?” হয়তো হয়। কিন্তু তারপর বাকি 364 দিন? এ তর্ক থামবে না,চলতেই থাকবে। তবে যে দিবস বা যাকে উদ্দেশ্য করে কোন দিবস পালন করা হচ্ছে তা যেন অবশ্যই বিশেষ হয়। কোন ব্যক্তি হলে, অবশ্যই সেই ব্যক্তি যেন শৌর্য বীর্য আর সাহস এর প্রতীক বা তাঁর জ্ঞান বিজ্ঞান সাধনা সমগ্র জাতিকে সমৃদ্ধ করেছে এইটুকু আশা করাই যায়। শিশু দিবস বা চিলড্রেনস ডে ও যেন এমন বিষয়কে নিয়ে হওয়া উচিত যাতে শিশুরা শৌর্য,বীর্য, সাহস,নীতি,জ্ঞান,বিজ্ঞান ও ধর্মের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হতে পারে।
“বিশ্ব শিশু দিবস বা ওয়ার্ল্ড চিলড্রেনস ডে“
প্রতিটি দেশে নিজস্ব আলাদা আলাদা জাতীয় শিশু দিবস রয়েছে।যেমন USA তে প্রতিবছর জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার তাদের ‘ন্যাশনাল চিলড্রেনস ডে’ বা জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়। বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্ব শিশু দিবস বা ‘ওয়ার্ল্ড চিলড্রেনস ডে’ পালন করা হয় 20 শে নভেম্বর। 1857 সালের জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার USA তে ‘প্রথম চিলড্রেনস ডে’ শুরু করেন Reverend Dr. Charles Leonard। তিনি চার্চ এর Baptize(খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা)Children দের জন্য এটি চালু করেন। এবং প্রথমে এর নাম ছিল ‘রোজ ডে’। প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ডে’ স্বীকৃত হয় কোন 1925 সালে জেনেভাতে ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার’এ। এবং ওই সময় ঠিক হয় প্রতিবছর 4ঠা নভেম্বর এটি পালিত হবে।Moscow 1st জুন শিশু দিবস শুরু করে। এবং 1950 সালের পর হতে অনেক কমিউনিস্ট দেশ ও 1st জুন শিশু দিবস পালন করা শুরু করে ,ভোটের লালসায়। পরবর্তীকালে 1959 সালে ইউনাইটেড নেশন জেনারেল এ্যাসেম্বলিতে (UNGA)
ঠিক হয় যে প্রতিবছর 20 শে নভেম্বর ‘ওয়াল্ড চিলড্রেনস ডে’ পালিত হবে। সেই মতো আজ পর্যন্ত ঐ 20 শে নভেম্বর ই ‘ওয়াল্ড চিলড্রেনস ডে’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ভারতে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ 14ই নভেম্বর কেন?
1964 সালের পূর্ব পর্যন্ত ভারতের আলাদা কোন জাতীয় শিশু দিবস বা ন্যাশনাল চিলড্রেনস ডে ছিল না।সারা পৃথিবীর সাথে 20 শে নভেম্বর ই শিশু দিবস পালন করা হতো। কিন্তু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর তাঁর জন্মদিন অর্থাৎ 14 ই নভেম্বর কে স্মরণ রাখার জন্য তাঁর শিষ্যরা ঐ দিনটিকে তড়িঘড়ি করে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এই মর্মে পার্লামেন্টে একটি রেজুলেশান ও পাস করায় কংগ্রেস সরকার। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন যে নেহেরু শিশুদের খুব ভালোবাসতেন এবং নেহেরুকে ও শিশুরা ‘চাচাজী‘ বলতো!!! তাই নেহেরুর জন্মদিন আসল অর্থে জাতীয় শিশু দিবস হওয়া উচিত বলে ও তাঁরা দাবি করেন।তবে নেহেরু কে ‘চাচাজি’ কে বা কারা বলতো সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা বা প্রমাণ নেই। Business Standard পত্রিকার মতে-“There is no documented reason for Nehru being called ‘Chachaji‘.However, it is said that his love for Children was a major reason behind the coinage of this term.Another popular version is that Nehru was very close Mahatma Gandhi, whom he considered his elder brother. While Gandhi was known as ‘Bapu‘,Nehru came to be known as ‘Chachaji‘.”
Times of India 2019 এর Children’s Day speech এ বলছে-“In India ,we celebrate Children’s Day on November 14 as a tribute to Pandit Jawaharlal Nehru. Nehru the first prime minister of India,was born on November 14,1889– thus,we commemorate his birth anniversary as Children’s Day in India………….He shared a lovely bond with Children and was very affectionate towards them. Children also loved and fondly called him,’Chacha Nehru’ “.কেবলমাত্র এইটুকু কারনেই কি একটি দিবস পালিত হতে পারে? শিশু দের সামনে আদর্শ কোথায়?Times now news পত্রিকা 14/11/2018 তারিখে লিখছে-“Nehuru was very fond of Children and he strongly believed that Children are the future of the nation.He once said ‘The Children of today will make the India of tomorrow. The way we bring them up will determine the future of the country’.” অন্যান্য পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও বইতেও ঘুরেফিরে ওই দুই লাইন ই পাওয়া যাচ্ছে। যে নেহেরু শিশুদের খুব ভালবাসতেন ও শিশুরা তাঁকে চাচা বলতো। আর এই কারনেই নেহেরুর জন্মদিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। পরিষ্কার বোঝা যায় যে, কিভাবে শিশু দিবসের মতো একটি বিষয়কে জনগণের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে নেহেরু জন্মদিন কে স্মরণ করার জন্য। আলাদা করে 14 ই নভেম্বর কংগ্রেসের শিষ্যরা স্মরণ করতেই পারতেন। কিন্তু শিশু দিবসের মতো বিষয় তার সাথে যুক্ত করার পেছনের অভিসন্ধি হলো নেহেরুজী কে কোমল হৃদয়ের দেখানো, যা তিনি আদৌ ছিলেন না।George Mathew (বিখ্যাত blogger)বলছেন-“Who does not like Children?.He used the opportunity with the kids to take photos and get his ‘Chacha‘ image.All prime ministers can get such photos easily…….Where are the photos of Nehru with the poor Children?…….another kept lie of Nehru, his chamchas and the wicked British?Nehru had to work the king of England……did he really care for future Children of India than spent some time with them for photo opportunities?” কেবলমাত্র ছোট ছোট শিশুদের সাথে কিছু ছবি তুললে বা কেউ কাউকে চাচা বললেই কি তিনি শিশু প্রেমিক হিসেবে তাঁর নাম খোদিত করতে পারেন? কোন মতেই নয়।আমি পূর্বেই বলেছি আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন দিবস পালনের পক্ষপাতী নই।কারণ এটি সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য রীতি।কিন্তু যদি সত্যই শিশু দিবস পালন করতে হয় তা হওয়া উচিত 26 শে ডিসেম্বর।এই দিনটি শিশুদের শৌর্য, বীর্য,শক্তি,সাহস ,ধর্মরক্ষা, নির্ভীকতা ও বলিদানের প্রতীক।
26 শে ডিসেম্বর
সপ্তদশ শতকে (Seventeenth Century) দশম শিখ গুরু শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং এর নেতৃত্বে আনন্দপুর সাহিব এলাকা শিখ ভাতৃত্ববোধের পীঠস্থান হয়ে ওঠে। জাতি-বর্ণ ভেদে মানুষজন সুখে শান্তিতে জীবন নির্বাহ করতে থাকে।গুরু গোবিন্দ সিং এর চার পুত্র ছিল।বাবা অজিত সিং, বাবা জুঝার সিং,বাবা জোরোয়ার সিং ও বাবা ফতেহ সিং। এঁরা প্রত্যেকেই পিতা শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং এর সুযোগ্য ও বীর সন্তান ছিলেন।এই উন্নতি সহ্য হলো না মুঘল শাসকদের।সেই সময় মুসলিম শাসকদের অত্যাচার তীব্র আকার ধারণ করে। মুসলমানদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে গুরু গোবিন্দ সিং শিখদের নিয়ে এক বাহিনী গঠন করেন। যার নাম দেন ‘খালসা বাহিনী’। বীরত্বই ছিল এই বাহিনীর শেষ কথা। উত্তর ভারতের শিখদের এই শক্তিবৃদ্ধি ঔরঙ্গজেবের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। 1695 সালের শীতকালে মুসলিমরা আনন্দপুর সাহিব আক্রমণ করলো কোন কারন ছাড়াই। গুরু গোবিন্দ সিং তাঁর 17 বছরের প্রথম পুত্র অজিত সিং কে কেশগড় (Keshgarh) অঞ্চল রক্ষা করতে বললেন। এবং অন্য বাহিনীকে বাকি স্থানগুলিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নির্দেশ দিলেন। সাহসী শিখরা শহরটিকে রক্ষা করে। এবং মোঘলদের কে পরাজিত করতে সমর্থ হয়।কিন্তু 1700 হতে 1704 এই সময়ের মধ্যে যে যুদ্ধ হয় তা ছিল ভয়ানক ।শহরটিকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রাস্তা কেটে দেয় মুসলিমরা।দীর্ঘদিন এইভাবে থাকতে থাকতে আনন্দপুর শহরবাসীর খাদ্যের সংকট দেখা দেয়।তীব্র খাদ্যের সংকটের ফলে, অনেকে খাদ্যাভাবে মারাও যায়। অনেকে গাছের ছাল ও দেওয়ালের গায়ে জন্মে ওঠা লতাপাতা, গুল্ম এইসব খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে থাকে। শিখদের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপতর হতে থাকে।এমন সময় সুযোগ বুঝে ঔরঙ্গজেব চালাকি করে কোরানের পাতার উপর সই করে একটি খবর পাঠায়।যে যদি গুরু গোবিন্দ সিং ও তাঁর বাহিনী আনন্দপুর দূর্গ ছেড়ে চলে যায়, তাহলে মোগলরা তাদের কোনো ক্ষতি করবে না।এই প্রতিশ্রুতি যে আসলে ছিল ছলনা তা গুরু গোবিন্দ সিংহ বুঝতে পারেন। কিন্তু আত্মীয় ,পরিবার ও সেনাদের কথায় তিনি দূর্গ ছেড়ে যেতে রাজি হয়ে যান।1704 সালের 20শে ডিসেম্বর এক ঝড়- জলের রাতে গুরু গোবিন্দ সিং শিখদের ও পরিবার নিয়ে আনন্দপুর দূর্গ ছেড়ে চলে যান। এবং সিরসা নদীর তীরে এসে উপস্থিত হন।তাঁরা নদী পার হতে শুরু করলে মাঝনদীতে মোঘলরা বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং পেছন থেকে কাপুরুষের মতো হামলা করে। মাঝনদীতে রাতের অন্ধকারে অতর্কিত আক্রমণে কয়েকশো শিখ শহীদ হয়।পবিত্র গ্রন্থ ‘আদি গ্রন্থের’ পান্ডুলিপি সহ সমস্ত জিনিস চিরতরে সিরসা নদীর জলে তলিয়ে যায়।যুদ্ধের সময় পরিবারের সকলে আলাদা হয়ে যান। গুরু গোবিন্দ সিং এর মাতা গুজরি ও গুরু গোবিন্দ সিং এর দুই ছোট পুত্র এঁরা তিনজনে একদিকে আলাদা হয়ে পড়েন। এদিকে কয়েক লক্ষ মোঘল সৈন্য বাহিনীর কাছে বীর পরাক্রমে যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেন গুরু গোবিন্দ সিং এর বড় পুত্র অজিত সিং(17) ও জুঝার সিং(14)। ঔরঙ্গজেবের অন্যতম সৈনিক দুষ্টু উজির খানের নির্দেশে মাতা গুজরি, সাহেবজাদা জোরোয়ার সিং (9)ও ফতেহ সিং (7) কে বন্দী বানানো হয়। এবং উজির খানের দরবার সারহিন্দে(Sarhind)এ নিয়ে আসা হয়। ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডা তে তিনজনকে একটি খোলা টাওয়ারের উপর পশুর মতো রাখা হয়। খাদ্য ,বস্ত্র ,বিছানা কোন কিছু ছাড়াই।পরদিন সকালে উজির খান এর দরবারে দুই ভাইকে উপস্থিত করানো হয়। উজির খান বলেন -“তোমরা যদি ইসলাম কবুল করো, তবে তোমরা রক্ষা পাবে। হয় ইসলাম নয় মৃত্যু।” তখন সেই ভরা রাজসভায় দাঁড়িয়ে উদাত্ত কণ্ঠে দুই ভাই বললেন-“আমরা মৃত্যুকে ভয় পাইনা,ধর্ম আমরা পরিবর্তন করবো না।তোমারা কাপুরুষ, ছলনা কর আর পেছন থেকে হামলা কর।” মাত্র সাত বছর বয়সে শিশুর কন্ঠে যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ !! পরদিন 26শে ডিসেম্বর 1704 সাল। উজির খান দুই ভাইকে জীবন্ত দেওয়ালে পুঁতে মারার নির্দেশ দিলেন ।এবং শেষবারের মতো ইসলাম কবুল করতে বললেন। সাত বছরের ফতেহ সিং উদাত্ত কণ্ঠে আবার বলল -“আমরা আমাদের বিশ্বাস ও ধর্ম ত্যাগ করবো না।মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত আমরা। এবং চিৎকার করে বললো -“ওয়াই গুরু কি খালসা……ওয়াই গুরু কি ফতেহ”। উজির খানের চোখ রক্তাক্ত হয়ে গেল।প্রাসাদের সামনে একটি স্থানে দুই ভাইকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হলো ইটের দেওয়াল দিয়ে। কিন্তু তাতেও তারা জোরে জোরে তাদের ধর্মীয় মন্ত্র পাঠ করতে লাগলো।উজির খানের কানের পর্দা যেন ফেটে যেতে লাগল,,,,,,, কিছুক্ষন পরেই দেওয়াল ভেঙে পড়ল ।এবং দেখা গেল যে, দুই ভাই তখনো বেঁচে আছে। এবার উজির খানের নির্দেশমতো তৎক্ষণাৎ জল্লাদ এসে দুই ভাইয়ের গলা কেটে উক্ত স্থানেই তাদের হত্যা করে। এই খবর শোনার পর মাতা গুজরি ও প্রাণ ত্যাগ করেন।এইভাবে দুই ছোট্ট শিশুর বলিদান এর মাধ্যমে তারা তাদের শৌর্য,বীর্য ,নির্ভীকতা,সাহসের পরিচয় দেয় ও ধর্ম রক্ষা করে । তাই 26 শে ডিসেম্বর শিশুদের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন।যা শিশুদের কাছে প্রেরণার উৎস স্বরূপ। এই দিনটি শিশু শৌর্যের দিবস। এই দিনটিই আসলে শিশু দিবস হওয়া উচিত ভারতবর্ষে ।
ড.সুমন পানিগ্রাহী (Dr. Suman Panigrahi)
তথ্যঋণঃ উইকিপিডিয়া।
চিত্রঋণঃগুগল ইমেজ।