বিগত ১৬ই এপ্রিলের ঘটনা। মহারাষ্ট্রের কান্দিভালি আশ্রমের ৭০ বছরের বৃদ্ধ সন্ন্যাসী কল্পবৃক্ষ গিরি ও ৩৫ বছরের সুশীল গিরি মহারাজ সুরাটে এক অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে নীলেশ তেলগাড়ের (৩০) কাছে গাড়ি ভাড়া নিয়ে রওনা হন। পালঘর জেলার একটি গ্রামে স্থানীয় গ্রামবাসীরা নাকি ছেলেধরা সন্দেহে তাঁদের অত্যন্ত নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। কিন্তু গেরুয়া পরিহিত এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসী ও আরেক গেরুয়া পরিহিত তরুণ সন্ন্যাসীকে গ্রামের মানুষজন কীভাবে ছেলেধরা মনে করতে পারে এবং তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে?
এলাকাটি মূলত জনজাতি অধ্যুষিত এবং অঞ্চলটিতে বিগত কয়েক দশক ধরেই খৃস্টান মিশনারীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। দরিদ্র জনজাতিদের মগজ ধোলাই ও তাঁদের নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। গণপিটুনির ভিডিওগুলি দেখেও মনে হচ্ছে এর পিছনে কাজ করেছে ভয়ংকর রকমের গেরুয়া বিদ্বেষ। আরেকটি আকর্ষণীয় তথ্য হল দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেটি মহারাষ্ট্রের একমাত্র বিধানসভা যার বিধায়ক সিপিএম পার্টির।
২০১৪-র বিধানসভা বাদ দিলে বিগত দু’দশক ধরে মহারাষ্ট্রের মতো একটি রাজ্যে বিধানসভা আসনটি সিপিএমের দখলে। আর ৩৪ বছর সিপিএমের শাসন দেখার সূত্রে পশ্চিমবঙ্গবাসী তো সিপিএমের হিন্দু ও হিন্দু সন্ন্যাসী বিদ্বেষের রূপটা জানেনই। সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত বলেছিলেন যে- আমরা ক্ষমতায় এলে বেলুড় মঠকে কফি হাউস বানাব। এই কাজে প্রমোদবাবু সফল না হলেও বামফ্রন্ট আমলে রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রমকে বিভিন্ন রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এই হিন্দু সন্ন্যাসী বিদ্বেষেরই চরম রূপটি প্রত্যক্ষ করেন আনন্দমার্গী সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীরা।
১৯৮২ সালের ৩০-এ এপ্রিল ১৭ জন আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীকে (এর মধ্যে একজন সন্ন্যাসিনীও ছিলেন) কলকাতার রাস্তায় প্রথমে পিটিয়ে খুন করে ও পরে পুড়িয়ে দেওয়া হয় হাজার হাজার মানুষের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে। তাঁরা ট্যাক্সি নিয়ে তিলজলায় তাঁদের সদর দপ্তরে একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এইসব ট্যাক্সিগুলো তিনটি স্থানে জোর করে থামিয়ে তাঁদের টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় নামিয়ে প্রথমে নৃশংসভাবে পিটিয়ে তারপর কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
কেন আনন্দমার্গীদের এইভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হল? কারা ছিলেন এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে? সেটাই এবার আমরা দেখব। প্রভাত রঞ্জন সরকার বা শ্রী শ্রী আনন্দমূর্তি ১৯৫৫ সালে আনন্দ মার্গ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের উদেশ্য হল ‘‘আত্মমোক্ষার্থম জগৎহিতায় চ’’। তাঁরা সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। এই জন্য তাঁরা বহু বিদ্যালয়, অনাথ আশ্রম, চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আনন্দমার্গ সম্প্রদায়ের প্রথম থেকেই বিরোধিতা শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টি। হেলেন ক্রোভেট্ট (Helen Crovetto) অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত একটি গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত তাঁর প্রবন্ধ ‘‘Ananda Marga, Prout, and the Use of Force’’-এ লিখেছেন, খুব সম্ভবত কমিউনিস্ট পার্টি মনে করেছিল আনন্দমার্গীদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন তাদের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে পারে।হেলেন আরও বলেছেন, আনন্দমার্গীদের বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কার্যকলাপের ফলে ছেলেধরার অভিযোগটি বহু মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
ইতিহাসবিদ নরসিংহ শীল ‘The Quarterly Review of Historical Studies’ জার্নালে প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধ ‘‘The Troubled World of the Ananda Marga: An Examination’’-এ লিখছেন যে, এই গণহত্যার আগে বহুদিন ধরে আনন্দমার্গীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরে নেতিবাচক প্রচার চালান হয়েছিল। শীল দেখাচ্ছেন যে, পাশ্চাত্ত্যের জাদুবিদ্যা (witchcraft) চর্চা করা মহিলাদের যে চোখে দেখা হত ঠিক সেইভাবে এদেরকে ছেলে-ধরা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
ঘটনাক্রমে চোখ রাখলে দেখা যাবে আনন্দমার্গীদের ওপর আক্রমণের শুরু অনেক আগেই- ১৯৬৭ সালের মার্চে। সেবার পুরুলিয়ার আনন্দনগরে আনন্দমার্গীদের দপ্তর আক্রমণ করে মেরে ফেলা হয়েছিল পাঁচজন সন্ন্যাসীকে। কয়েক বছরের মধ্যেই কোটশিলা থেকে আসার পথে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হল অনুগামী এক জনজাতিভুক্ত যুবককে। তবে এসব করে দমানো গেল না আনন্দমার্গীদের। ১৯৭৮ সালে তিলজলায় শুরু হল আশ্রম নির্মাণের কাজ। বাধা আসতে আরম্ভ করলো শুরুতেই। চুরি হতে থাকলো সিমেন্ট, রড, পাথর, পাইপ। চোরাগোপ্তা ভেঙ্গে দেওয়া হতে থাকলো নিকাশি নালা থেকে প্রাচীর। তবে এসব করেও যখন হার মানানো গেল না সন্ন্যাসীদের, তখন চুনোপুঁটিদের থেকে নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিলেন রাঘব-বোয়ালরা।
‘বিজন সেতুঃ ১৯৮২’ বইটিতে শের সিংয়ের একটি বিস্তারিত ইন্টারভিউ রয়েছে। শের সিং ছিলেন অবিভক্ত চব্বিশ পরগণা জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (এডিএম)। এই ইন্টারভিউতে তিনি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অনেক বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৮২-র ১৬ই জানুয়ারি থেকেই তিনি আনন্দমার্গীদের বিপদ হতে পারে এটা অনুমান করেছিলেন। কারণ ঐ দিন তিনি ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর কাছ থেকে একটি স্বাক্ষরহীন চিঠি পান যাতে লেখা ছিল- ‘‘আনন্দমার্গী ওখানে উৎপাত করছে, জমি কিনছে, আননেসেসারি কব্জা করছে। প্লিজ দেখুন।’’ শের সিং তখন কসবা থানার ওসি-র কাছে রিপোর্ট চাইলে তিনি জানান- ৩-৫ হাজার লোকের দুটো গ্যাং সশস্ত্র অবস্থায় জমি দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জমি দখলকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল ও প্রাণহানীর আশঙ্কা আছে। তিনি তখন দু’মাসের জন্য ওখানে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ১৯ –এ জানুয়ারি মহাকরণে মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর ঘরে বিধায়ক ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্য তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন- ‘‘আমি দশ হাজার লোক দিয়ে জমি দখল করব। আপনি কী করে সেটা ঠেকান আমি সেটা দেখব।’’
শের সিংকে বদলি করা হয়। তাঁর মতে, জানুয়ারি মাসেই অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় আনন্দমার্গীদের খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং এর পিছনে ছিল একটি জমি নিয়ে বিবাদ। কলকাতার ওপর ১৪.৩ একরের এই জমিটি (যেখানে বর্তমানে সন্তোষপুর স্টেডিয়াম) দখলকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত। এই জমির দখলের জন্য অন্যতম বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বারংবার জেলাশাসক রাণু ঘোষকে ফোন করে চাপ সৃষ্টি করেন। শের সিং বলছেন, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ই জ্যোতি বসুকে বোঝান যে আনন্দমার্গীরা জমিটাকে নেবার চেষ্টা করছে। তাঁর কথা মতই জ্যোতি বসু একটি চিঠি পাঠান ২০-এ জানুয়ারি বলে শের সিং জানাচ্ছেন। শের সিং তাঁর বিস্ফোরক ইন্টারভিউয়ে বলছেন, ‘‘সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সুপারিশেই সব ঘটনা ঘটে। ওপর থেকে ওনাকে ভদ্রলোক বলে মনে হয়।’’
যাই হোক মাত্র ৯ মাস আগে তিনি চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে কাজে যোগ দেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে বদলির চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানুয়ারি মাসেই জেলাশাসক রাণু ঘোষকে (Ranu Ghosh) তাঁর আশংকার কথা জানিয়েছিলেন যে- জমি দখলকে কেন্দ্র করে ৪-৫ জন খুন হয়ে যেতে পারে। তাঁর সেই আশঙ্কাই সত্যি হয় ৩০-এ এপ্রিল এবং আরও ভয়াবহভাবে। ১৬ই জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সব ঘটনা তিনি স্বাক্ষর করে লিপিবদ্ধ করেন।
বিশেষত বিনয় চৌধুরীর ঘরে ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্য যা হুমকি দিয়েছিলেন ‘‘আমি ১০ হাজার লোক নিয়ে যাব, কচুকাটা করব, দেখি আপনি ওদের কীভাবে রক্ষা করেন” ফাইলে লিপিবদ্ধ করা হয়। সমস্ত নথিসহ এই ফাইলই ৩০-এ এপ্রিলের পর পুড়িয়ে ফেলা হয়। শের সিংকে বদলি করার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন জহর সরকার। শের সিং বলছেন, এই জহর সরকারই তাঁর সমস্ত ফাইল ঘেঁটে কাগজপত্র এদিক ওদিক করে দেয়, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, দলিল পুড়িয়ে দেয়। ঘটনার পরও আনন্দমার্গীদের শাসানো হয় যদি কোর্টে যাও তবে এবার ১০০ আনন্দমার্গীকে শেষ করব।
শের সিং আরও বলছেন, তিনি আনন্দমার্গীদের হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত আইবি-র রিপোর্টটি পুরোটা পড়েছিলেন।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী, কান্তি গাঙ্গুলিই ছিলেন আনন্দমার্গীদের এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে মাস্টার মাইন্ড। এই ঘটনার তদন্তে যুক্ত তিলজলা থানার ওসি গঙ্গাধর ভট্টাচার্যকে (Gangadhar Bhattacharya) ১৯৮৩-র ৩১-এ অক্টোবর গুলি করে খুন করা হয়। শের সিংয়ের মতে, এই খুনের পিছনেও ছিলেন কান্তি গাঙ্গুলি। এই বিষয়ে ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ সংবাদপত্র ২০১৭ সালের ১লা মে ‘‘Link between OC murder & Anandamargi Killings?’’ শীর্ষক একটি সংবাদ করে। এই সংবাদ অনুযায়ী বিচারপতি অমিতাভ লালা-র কমিশন- যা আনন্দমার্গীদের হত্যা নিয়ে তদন্ত করছে- ওসি গঙ্গাধর ভট্টাচার্যের বিধবা স্ত্রী মমতা ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর বেহালার বাড়িতে দেখা করতে যান। মমতাদেবী সিপিএম নেতৃত্বের দিকেই তাঁর অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন যেহেতু তাঁর স্বামী একজন সৎ পুলিশ অফিসার ছিলেন এবং আনন্দমার্গীদের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেন নি- তাই তাঁকে খুন হতে হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন তিনি তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সাহায্য চান এবং অনুরোধ করেন যে তিনি তাঁর স্বামীর জন্য বরাদ্দ খিদিরপুরের পুলিশ কোয়ার্টারেই থাকতে চান। কিন্তু তাঁকে এই কোয়ার্টার ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং তাঁর স্বামীর মৃত্যুর জন্য মাত্র ৩৬ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। শের সিং বলছেন আনন্দমার্গীদের হত্যার জন্য রাজ্যের প্রধান ব্যক্তির সবুজ সংকেত ছিল। আনন্দমার্গীদের হত্যার পর জ্যোতি বসুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি ঘটনাস্থলে যাবেন কি না? তিনি বলেন- ‘‘আমি ওখানে গিয়ে কী করব?’’ আবার এই জ্যোতি বসুই সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, আনন্দমার্গীরা সিপিএমকে দোষী সাব্যস্ত করছে- এমএলএ শচীন সেন যদি দশ হাজার লোক নিয়ে যায় সেটা কী ভাল হবে?
‘বাবর’ নামক গবেষণা গ্রন্থের জন্য শের সিং ও তাঁর স্ত্রী সুরিন্দর কৌর ১৯৯৩ সালে সৌদি আরবের দেড় কোটি কিং ফয়জল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। সেখান থেকে চিঠি আসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কেন্দ্রীয় সরকার জ্যোতি বসু-কে চিঠিটা পাঠান। ‘সানডে’ পত্রিকার সাংবাদিক শংকর রায়-কে দিয়ে ঘুরিয়ে বলান হয় তিনি যদি একটা বন্ড লিখে দেন ‘‘আমি কিছু জানি না বলে’’- তাহলে তাঁকে পুরষ্কারটি আনার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু শের সিং না করে দেন, ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি না থাকায় তিনি পুরষ্কার লাভ থেকে বঞ্চিত হন। এই ঘটনায় বোঝা যায় আনন্দমার্গীদের হত্যাকাণ্ডের বহু বছর পরও জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে সিপিএম শের সিংয়ের বিরুদ্ধে কী ধরণের বিদ্বেষ পুষে রেখেছিল।
শের সিং বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর সিপিএমের অন্দরে নাকি আলোচনা হত ‘‘৫-৬ টা লোককে মারার পরিকল্পনা হয়েছিল, এতগুলো লোক কীভাবে মরল?’’ আসলে বাইরে থেকে পার্টির ক্যাডার আনার ফলে ভিড় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছিল। ৩টি খুনের জায়গা তৈরী করা হয়েছিল। বালিগঞ্জ স্টেশন, বিজন সেতু ও বন্ডেল গেট। বিজন সেতুর দায়িত্বে ছিল বাবলু চক্রবর্তী। পিটিয়ে হত্যা করার পর যেভাবে কেরোসিন দিয়ে পোড়ান হয়েছিল তাও প্রমাণ করে যে কেরোসিন আগে থেকেই মজুত করে রাখা হয়েছিল। ফলে এই হত্যাকাণ্ডটি কতটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল তা বোঝাই যায়।
সিপিএমের বিভিন্ন মিটিং, মিছিল ও দলীয় মুখপত্রে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ‘‘বিদেশী শক্তির মদতপুষ্ট সাম্প্রদায়িক’’ আনন্দমার্গীদের প্রতিরোধ করার ডাক দেওয়া হচ্ছিল। আনন্দমার্গীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করা হয়েছিল যে এরা সিআইএ-র এজেন্ট। এদের এখান থেকে তাড়াতে হবে। এমনি করে না গেলে পিটিয়ে তাড়াব। ঘটনার বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকাতে গুজব রটানো হচ্ছিল যে, আনন্দমার্গীরা হল ছেলেধরা এবং তাদের আশ্রমের মধ্যে নানারকম অসামাজিক কাজকর্ম হয়- যাতে আনন্দমার্গীদের ওপর আক্রমণ শুরু হলে সাধারণ মানুষ বাধা দিতে না আসেন- বাস্তবে হয়েছিলও তা-ই। বিজন সেতু (Bijan bridge) থেকে হালের মহারাষ্ট্রের পালঘর (Palghar) – ছেলেধরার গুজব রটিয়ে গেরুয়া পরিহিত সন্ন্যাসী হত্যার সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।